কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৫৮]উর্মিলা চ্যাটার্জি জানলার ধারে বসে আছেন। হাওয়ায় উড়ছে চুল।পুলক চ্যাটার্জি ল্যাগেজ গোছগাছ করছেন। বউয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,এখন কেমন লাগছে?
--একটু ভাল।হাত পায়ের আঙ্গুলগুলোর ফোলা কমেনি।
--বাবাঃ যা ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস ট্রেনের মধ্যে একজন ডাক্তার পেয়ে গেছিলাম।
--আচ্ছা ঐ সানগ্লাস পরা মহিলা কে?
--হবে কোনো রিলেটিভ।দারুণ দেখতে ভদ্রমহিলা। পুলক বললেন।
--অমনি নজর পড়েছে?বউ এদিকে যন্ত্রণায় ছটফট করছে উনি মহিলা দেখছেন?
পুলক হে-হে করে হাসেন,উর্মিলা জিজ্ঞেস করেন, ডাক্তার কি বললেন কেন যন্ত্রণা হচ্ছিল?
--ইউরিন টেষ্ট না করে বলা যাবে না।কলকাতায় ফিরে আগে ডাক্তার দেখাবো।
--শর্মিলাকে এসব বলতে যেও না। উর্মিলা বললেন।
ট্রেন ঢুকছে নিউ দিল্লী ষ্টেশনে। পুলক মালপত্তর তুলে বললেন,আস্তে আস্তে এসো।
পুলক যেতে গিয়ে পল্টুকে দেখে বলল,আসি ডাক্তারবাবু,আপনি যা করলেন মনে থাকবে।
পল্টু বুঝতে পারে এর স্ত্রীর পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। পল্টু হেসে বলল,আপনারা দিল্লীতে থাকেন? এখন কেমন আছেন?
--না ওর বোন নয়ডা থাকে সেখানেই যাচ্ছি।দিল্লী থেকে গাড়ীতে যেতে হবে। বউকে জিজ্ঞেস করলেন,কেমন আছো বলো?
উর্মিলা হেসে বলল,আপনার ওষুধ পড়ায় এখন অনেকটা ভাল।
--আমি কিন্তু ওষুধ দিইনি,যন্ত্রণা কমিয়ে দিয়েছি।ডাক্তার দেখিয়ে ইউরিন টেষ্ট করিয়ে নেবেন।
--আসি ডাক্তারবাবু।পুলক এগিয়ে যায় দরজার দিকে,পিছনে উর্মিলা যেতে যেতে বলল,দেখেছো ভদ্রমহিলাকে সারাক্ষণ চোখে সানগ্লাস আটা অন্ধ নাকি?
ওরা চলে যেতে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করল, দিল্লীতে নামবে না?
--আমরা ওল্ড দিল্লীতে নামবো।
--তোমার কলেজ কোথায়?
--ওল্ড দিল্লীতে হোটেল ভাড়া অনেক কম।ওখান থেকে কাল ট্যাক্সিতে কলেজ যাবো।
খাদিজা বুঝতে পারে টাকার জন্য এখানে নামল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড.সোম অর্থ নিয়ে তাকে কখনো ভাবতে হয়নি আজ তার ছেলের কি অবস্থা। খাদিজাও প্রায় নিঃশেষিত।গাড়ীটা কিছুদিন পরে কিনলেও চলতো।ভদ্রমহিলা তাকে অদ্ভুতভাবে দেখছিল।মনে হয় বোঝার চেষ্টা করছিল হয়তো দেবের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি? এব্যাপারে মেয়েদের কৌতুহল একটু বেশি।পরের ষ্টেশনে নেমে অটো করে একটা হোটেলের কাছে পৌছালো। খাদিজা বেগম দেখল অঞ্চলটিতে দরিদ্র মুসিলিমদের বাস।বোরখা পরিহিত মহিলাদের রাস্তাদিয়ে হেটে যেতে দেখল। দোতলায় একটী সাধারণ ঘর। একটী খাট পাতা দেওয়ালে আলমারি।মাথার উপর রঙ চটা পাখা,খুট খট শব্দ করে ঘুরছে।মনে হচ্ছে ফুরিয়ে এসেছে দম যে কোনো মুহুর্তে থেমে যেতে পারে।কষ্ট করার অভ্যেস আছে খাদিজার,দেবের জন্য সে সব পারে।লুঙ্গি তোয়ালে নিয়ে পল্টূ বাথরুমে ঢুকে গেল।খাদিজা বেগম দেবকে অবাক হয়ে দেখে,বউয়ের কষ্ট হচ্ছে কি না বা এই ঘর পছন্দ হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই। বাথরুম থেকে বেরিয়ে পল্টু বলল,উফ শান্তি! চান করে নেও একেবারে চাঙ্গা মনে হবে।
--আবার বাইরে যেতে হবে? এখানে ব্যবস্থা নেই?
--জানি না,হোটেলের যা চেহারা চলো কোনো ভাল হোটেলে গিয়ে খাবো। পল্টূ তাগাদা দিল।
ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে খাদিজা বেগম ঝুকে চাবি দেয়।পল্টু পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে এলো চুলে মুখ ডূবিয়ে দেয়।খাদিজা নীচু হয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর পল্টু দাঁড়িয়ে বলল,তোমার শরীরটা কি ঠাণ্ডা--আঃ।
খাদিজা বেগম আড়চোখে দেখল দেবকে কিছু বলল না। পল্টু বলল,জানো বেগম মেয়েদের গায়ে একটা সুন্দর গন্ধ থাকে।
--সাবান মেখেছি।
--না সাবান নয় একটা আলাদা গন্ধ,মমকে জড়িয়ে ধরলেও এরকম গন্ধ পেতাম।
মমের কথা বলায় খাদিজা অস্বস্তি বোধ করে। কদিন আগে বলছিল বিয়ে করবে আবার তার মধ্যে মমের স্পর্শ পায়? সিড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় চলে এল।সানগ্লাস চোখে লাগিয়ে দেবের পিছন পিছন হাটতে থাকে।একটা দোকানে সাইনবোর্ডে লেখা দেখে বুঝল রাস্তার নাম কিল্লা রোড। কাছাকাছি কোথাও হয় তো কেল্লা আছে। একটা হোটেলের কাছে আসতে বিরিয়ানির গন্ধ পায়।পল্টু জিজ্ঞেস করলো,এখানে ঢুকবে?
খাদিজা বেগম মাথায় ঘোমটা টেনে দিল।খদ্দের অধিকাংশ মুসলিম দেখে মনে হল। দুজনে কোনার দিকে একটা ফাকা টেবিলে বসল।
বিরিয়ানি মটন দোপিয়াজি ফরমাস করল।খাদিজা বেগম দেখল দেব তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকাল। এত বেলা হয়ে গেছে রাতে আর কিছু খাবো না।খাদিজা বলে দেখল দেব তাকে দেখছে। খাদিজা জিজ্ঞেস করল,কি দেখছো বলতো?
--দেখছি তুমি সুন্দরী নাকি আমিই তোমাকে সুন্দর দেখি?
--যে সুন্দর সে সবাইকে সুন্দর দেখে।মৃদু স্বরে বলল খাদিজা।
--অনেক মেয়ে আছে সব কিছু খাবলে নিতে চায়,তুমি আলাদা দেওয়াতেই তোমার আনন্দ।
--বাজে কথা না বলে চুপ করে বসো।খাদিজা বেগম কথাটা বলে ভাবে দেব এসব কথা কেন বলছে? ওর মনে কি কোনো কথা চাপা আছে যা না বলতে পারার জন্য অস্বস্তি বোধ করছে? না বলে কেন নিজেকে অকারণ কষ্ট দিচ্ছে। চুপ করতে বলেছে কেমন চুপ করে বসে আছে।
পশ্চিমাকাশে সুর্য ঢলে পড়েছে ক্লান্তিতে। রাস্তায় রিক্সা লোক চলাচল বেড়েছে, দু-পাশে দোকান খুলে গেছে। খাদিজা বেগম একটা দোকানে ঢুকে পড়ল। দাম দিয়ে একজোড়া জংলা প্রিণ্ট লুঙ্গি কিনল।কোনো এক মসজিদ থেকে ভেসে এল সন্ধ্যার আজান।আব্বুজান নিয়মিত নামাজ আদায় করতো। চোখের সামনে বারুই পুরের বাড়ীর সেই ছবিটা ভেসে উঠল। কোথায় বারুই পুর আর কোথায় পুরানো দিল্লীর কেল্লা রোড?মানুষ চলে অন্তরালে থাকে একজন যে চালায়।কোথায় শেষ হবে যাত্রা পথ কে জানে? সামান্য গৃহবধু হয়ে সন্তানের জন্ম দিতে দিতে কেটে যাবে যে জীবনকে মেনে নিয়েছিল এক ঝটকায় ওলোট পালোট হয়ে যাবে ঘুনাক্ষরে ভেবেছিল কি? দিন দুনিয়ার মালিক অদ্ভুত তার মর্জি আন্দাজ করে সাধ্য কার?দেবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতীত্ব সৌন্দর্য একাধারে সবকিছু হালাল করে দিয়েছেন দেব তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য।
হোটেলে ফিরে শাড়ী খুলে ফেলে পেটিকোট খুলে লুঙ্গি পরে খাদিজা বেগম তাকিয়ে দেখল দেব মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।জিজ্ঞেস করল,কিছু বলবে?
দেব লাজুক হাসে খাদিজা বেগম মনে মনে বলে,আহা কি লজ্জা! বুকের কথা বলতে পারে না মুখ ফুটে।খাদিজা কাছে ঘেষে ঠোট ফুলিয়ে মুখ তুলে ধরে। দেবের নিঃশ্বাস মুখে লাগে।ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে আশ্লেষে চুমু দিল কপালে চোখে ঠোটে। দেব বলল,জানো বেগম তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়।
--আমার জন্য তোমার?খিলখিল করে হেসে উঠল খাদিজা বেগম।
পল্টূ গম্ভীর হয়ে চেঞ্জ করতে লাগল।খাদিজা বেগম বুঝতে পারে হাসা ঠিক হয়নি জিজ্ঞেস করল,রাগ করেছো?
--আমি ছাড়া তোমার জন্য আর কেউ আছে মনে হয়?
--আমার অন্যায় হয়ে গেছে তুমিই তো আমার সব।খাদিজা দেবকে বুকে চেপে ধরল জানে দেবের বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখার সাধ্য নেই।
--ঠিক আছে ছাড়ো।খাদিজা বেগম দেবকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ে। নিজের তলপেটে হাত রেখে মনে হল দেবকে জিজ্ঞেস করবে কি না?
--কলেজে কমলাদি বলছিল ওর বোন নাকি প্রেগন্যান্ট হয়েছে।কি করে বুঝলে বলে মেন্স বন্ধ হয়ে গেছে। আচ্ছা প্রেগন্যান্ট হলে কি মেন্স বন্ধ হয়ে যায়?খাদিজা বানিয়ে বানিয়ে বলে।
--যায়,তাছাড়া আরও অন্যান্য কারণেও বন্ধ হতে পারে।
খাদিজা বেগম চিন্তিত হল,অন্য কারণ মানে?
--কত কি হতে পারে জরায়ুতে সিষ্ট হলে--তোমার অত দরকার কি?তোমার যখন হবে আমি তো আছি। পল্টূ মজা করে হাসে।
--না ইয়ার্কি না।কি ভাবে কনফার্ম হওয়া যায় সত্যি গর্ভ ধারণ করেছে কি না?
--ইউরিন টেষ্ট করলে বোঝা যায়,তোমার কি গর্ভ ধারণ করার ইচ্ছে হয়েছে নাকি?
--মা হতে ইচ্ছে করা কি দোষের?
--মিথ্যে আমাকে দোষারোপ করছো তুমিই তো ওষুধ খেয়ে সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছো। আমি কখনো তোমার উপর জোরাজুরি করেছি?
--ট্রেনে ঐ মহিলার পেটে হাত দিয়ে যেরকম বুঝলে সেভাবে বুঝতে পারো না?
--পারবো না কেন,তবে একটু ম্যাচিওর হলে বলা যায়।
জেলার নেতা জ্ঞান মজুমদারের সঙ্গে অপালার আলাপ করিয়ে দিয়েছে লক্ষণ। অল্পদিনেই অপালা ভট্টাচার্য অঞ্চলে অপুদি বলে পরিচিতি লাভকরেছে।বলা বাহুল্য লক্ষণের প্রাধান্য আগের মত নেই। অপুদি অনেক সোজাসাপটা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।সরল মনের মানুষ বউয়ের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত নয়। সংসারেও কিছু পয়সা আসছে কিভাবে আসছে সে ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। একদিন পুব পাড়ায় গেছিল।হরিমাধব বুড়ীকে দেখে অবাক হয়ে রেগে জিজ্ঞেস করেন,কিরে বুড়ি এতদিন কোথায় ছিলি?ছিঃ ছিঃ আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না।
--আর মুখ দেখাতে হবে না,এবার তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদায় হন।লক্ষণ বলল।
--আপনি কে মশায় আমাদের ব্যাপারে কথা বলেন?
--আমার হাজবেণ।অপালা বলল।
--তুই বিয়ে করেছিস?ওগো শুনছো বুড়ি বিয়ে করেছে,জামাই দেখবে এসো।হরি মাধব বউকে ডাকেন। সাবিত্রী ছুটে এসে লক্ষণকে দেখে সিটিয়ে যায় দৈত্যের মত চেহারা।
--শোনো মামী--মামী বলতিও ঘিন্না হয় আমার ঘর থেকে মালপত্তর এখুনি সরাবা। আর এমাসের মধ্যি তোমরা বাড়ী ছেড়ে দিবা।অপালা বলল।
--কি বলছিস বুড়ি এই বয়সে কোথায় যাবো? আমি তোর মামা--।অপালার দিকে তাকিয়ে কথা আটকে যায় হরির।
--একদম সম্পর্ক পাতাতি আসবা না।তুমার ছেলের কাছে যাও। পরের সপ্তাহে এসে যেন ওই কালামুখ দেখতি না হয়।
--অপু আমি বলছিলাম কি.....।লক্ষণ কি যেন বলতে যায়।
--তুমারে কূন কথা বলতি হবে না,একদম চুপ।হরি বাবু চাবি ভাড়াটেদের কাছে রেখে যাবা।
--বুড়ি বোস আমি চা করছি।সাবিত্রী বললেন।
আগুনে চোখে সাবিত্রীকে দেখে অপালা বলল, ওই নোংরা হাতের চা খাবো? মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের সব্বোনাশ করতি বিবেকে বাধল না বজ্জাত মেয়েছেলে?
খাদিজা বেগম লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে,পাশে শুয়ে আছে দেব। কাল সকালে কলেজ যাবার কথা।দেব কি ভাবছে?তার গায়ে হাত দিচ্ছে না, ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? অন্ধকারে টের পায় দেব উঠে বসেছে।রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে খাদিজা বেগম।পা ভাজ করতে লুঙ্গি উঠে যায় হাটুর উপর। দেব পায়ের উপর মুখ চেপে ধরেছে।খাদিজা তড়াক করে উঠে বসে বলে,কি করছো তোবা তোবা আমার গুণাহ হবে,পায়ে হাত দিয়েছো কেন?
--অঞ্জু আমাকে মাপ করে দেও,আমি অন্যায় করেছি।
খাদিজা বিব্রত বোধ করে রাত দুপুরে কি হল? খাদিজা দেবের মাথা তুলে জিজ্ঞেস করে,কিসের মাপ?কি বলছো তুমি?
--আমি জানি কেউ বিশ্বাস করবে না আমি ইচ্ছে করে করিনি।আমি তোমার কাছে যশের কাছে অপরাধী।
যশের কাছে? খাদিজা বুঝতে পারে এই জন্য মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যাচ্ছিল দেব।এরকম একটা সন্দেহ তার ছিল না তা নয় তবু জিজ্ঞেস করল,তুমি যশের সঙ্গে কি করেছো?
জেরা করে করে জানা গেল, কলকাতায় যে মহিলার সঙ্গে থাকে সে তার বিবাহিত স্ত্রী নয় যশ জেনেছে। যশবিন্দার চণ্ডিগড়ের মেয়ে দিল্লীতে কাকার বাড়ীতে থেকে পড়াশুনা করতো।পরীক্ষা যেদিন শেষ হয় পল্টুকে নিয়ে যায় সেদিন বাসায় কেউ ছিল না। সেখানে পীড়াপিড়ি করে মদ্যপান করায় তারপর জোর করে তার সঙ্গে মিলিত হতে বাধ্য করে। উদ্দেশ্য অঙ্গন যাতে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।খাদিজা বেগম সমস্ত ব্যাপারটা শুনে দেবকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল,তুমি কি ওকে ভালবাসো?
--আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না। পল্টু বলল।
--বিশ্বাসের কথা নয় তোমার সব অপরাধ আমাকে ক্ষমা করতেই হবে। আমি ভাবছি যদি কিছু হয়ে গিয়ে থাকে কি করে বাঁচাবো?
--তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না অঞ্জু।যশ ভাল মেয়ে কেন এরকম করল জানি না।
--ঠিক আছে এখন ঘুমাও কাল কলেজে গিয়ে দেখা যাবে।বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল খাদিজা সে রাতে আর মিলন হল না।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৫৯]কপাল অবধি ঘোমটা সান গ্লাস নেই চোখে অদ্ভুত দেখতে লাগছে খাদিজা বেগমকে। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারে একটা মসজিদে ঢুকে পড়ল খাদিজা বেগম। পল্টু বাইরে দাঁড়িয়ে দেখে হাটু মুড়ে নতজানু খাদিজা বেগম। চোখ বন্ধ সামনে করতল মেলে প্রার্থনার ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে বলে, আসতাগ ফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি জানবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি লা-হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লাহ বল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম।
এতকাল বেগমকে দেখছে কোনোদিন মসজিদে ঢুকতে দেখনি।অঞ্চলের পরিবেশ কি তার ই্সলামি সত্তাকে জাগিয়ে তুলল? যশ শিখ খাদিজা মুসলিম জন্মসুত্রে হিন্দু হলেও ধর্মের ব্যাপারে পল্টুর কোনো গোড়ামী ছিল না।মানব দেহ অপারেশন টেবিলে ফেলে অনেক কাটা ছেড়া করেছে হৃদযন্ত্র ফুসফুস কিডনি শিরা ধমনী ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় হলেও কোত্থাও কোনো ধর্মের অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। খাদিজা বেগম পাশে এসে দাড়াতে সম্বিত ফেরে পল্টুর।চোখে সানগ্লাস মাথায় ঘোমটা নেই অন্য রকম চেহারা খাদিজা বেগমের।পল্টু জিজ্ঞেস করল,ওখানে কি করতে গেছিলে?
--তওবা করলাম।ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়ল।
ট্যাক্সি ছুটে চলেছে ফুরফুরে বাতাস লাগছে গায়ে।এইমস থেকে ফিরে রাতের ট্রেনে ফেরার কথা আজ। পল্টূ দরদর করে ঘামছে। খাদিজা পাশ ফিরে জিজ্ঞেস করে,শরীর খারাপ লাগছে? এত ঘামছো কেন? খাদিজা কপালে হাত দেয়।
পল্টূ হেসে বলল,না ঠিক আছি বুঝতে পারছি না কেন ঘামছি?নার্ভাসনেস হতে পারে।আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিয়ে খাদিজা বেগম হেসে বলল,পরীক্ষায় কি হয় সেই চিন্তা? পরক্ষণেই মনে হল যশবিন্দারের ভয়ে নয়তো?
পরিস্কার ঝকঝকে আকাশ,বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তেজ বাড়তে থাকে। ট্যাক্সি নতুন দিল্লীতে ঢুকে পড়েছে।এখানকার রাস্তা ঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। খাদিজা লক্ষ্যকরে দেব তার হাত চেপে ধরেছে।চোখাচুখি হতে ম্লান হাসে দেব।
এইমস ক্যাম্পাসের সামনে গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়ল।ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ওরা ঢুকে গেল ক্যাম্পাসের মধ্যে।
ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা কারো কারো গায়ে এ্যাপ্রোন হাতে স্টেথো ওরা বিল্ডিংযের দিকে এগোতে থাকে। খাদিজার নজরে পড়ে দূর থেকে একটী মেয়ে দেবকে লক্ষ্য করছে। এই কি যশ? একটি ছেলেকে দেখে মেয়েটি এগিয়ে গেল।
খাদিজার সতর্ক নজর চারদিকে।খাদিজা বেগমকে দাড় করিয়ে রেখে পল্টু কলেজ ভবনে ঢুকে গেল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে খাদিজা ভাবে দেবের সঙ্গে যাওয়া উচিত ছিল যশ বিন্দার যদি ওকে ধরে? আবার ভাবে যদি ধরেও কি করতে পারে খাদিজা বেগম।
--ম্যাম আপ কিসি কো ঢুড়তা হায়?
তাকিয়ে দেখল সালোয়ার কামিজ পরা সুশ্রী একটি যুবতী মেয়ে মনে হল না বাঙ্গালী।
--আই হ্যাভ কাম উইথ মাই হাজব্যাণ্ড,হি ইজ এ্যা স্টুডেন্ত ইন দিস কলেজ। খাদিজা উত্তর দিল।
--আপ কলকাত্তা থেকে আসছেন? কে আছে আপনার হাজবেণ্ড?
--ড.সোম।
--আপনার সোঙ্গে যে ছিল আপনার হাজবেণ্ড?
মেয়েটি অনেক আগে থেকে তাদের লক্ষ্য করেছে বুঝতে পারে খাদিজা বেগম। এ তাহলে যশ বিন্দার নয়তো?
--আপনি কি চেনেন ওকে?
মেয়েটি হাসল উদাসভাবে বলে,অঙ্গ আমার বন্ধু আছে।হি দান ব্রিলিয়ান্ত।
--আপনার নামটা জানতে পারি?
--ও সিয়োর আমি যশবিন্দার কাউর।
--আপনাকে না চিনলেও আপনার কথা ওর কাছে শুনেছি অনেক। খাদিজা যশের পেটের দিকে তাকাল।কিছু বোঝা যাচ্ছে না।এত অল্প সময়ে বোঝার কথাও নয়।
--অঙ্গ কি বলেছে?
--যশ খুব ভাল মেয়ে এখানে এসে প্রথম আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।
--আর কিছু বলেনি?আই মিন এনি থিং মোর?
--ইউ আর লাভিং হেল্পফুল এইসব।
--হি ইজ অলসো কিউট। যশ জিজ্ঞেস করল,প্লিজ ডোণ্ট মাইণ্ড আর ইউ রিয়ালি হিজ ওয়াইফ?
ছেলে মানুষি প্রশ্নে খাদিজা বেগম খিলখল করে হেসে ফেলে।
যশ বিন্দারের মুখ ম্লান খাদিজা বুঝতে পারে তার হাসা উচিত হয়নি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,আমাদের বয়সের পার্থক্যের জন্য অনেকেই এরকম ভাবে, আমি কিছু মনে করিনি। পরস্পরের মনের মিলটাই আসল।
--বি হ্যাপি।বাই ম্যাম।যশবিন্দার চলে গেল খাদিজা বেগমের মন ভারাক্রান্ত হয়।
মাথা নীচু করে অন্যমনস্কভাবে যশবিন্দার হাটতে থাকে।কে যেন ডাকল,হাই যশ।
তাকিয়ে দেখল রিয়া।কাছে এসে বলল,অঙ্গন এসেছে।
--হ্যা দেখেছি।
যশবিন্দারের মনে পড়ে পরীক্ষা শেষ হল।কটা দিন নাওয়া খাওয়ার সময় ছিল না।
খুব হালকা লাগছে,অঙ্গন তার সঙ্গে চলেছে।বাড়ীতে সেদিন কেউ ছিল না। আড়চোখে অঙ্গনকে বলল,চলো আমার বাসায়।
পল্টুর কোনো কাজ নেই হাতে কাল বাদ পরশু কলকাতায় ফিরে যাবে।যশের সঙ্গে বাসায় ঢুকে গা ছম ছম করে।কেউ নেই নাকি?কিছু না বলে যশের সঙ্গে একটা ঘরে ঢুকল।তাকে বসিয়ে যশ চলে গেল।খাটে বসে ভাবছে যশ কাকার বাসায় থাকে মনে হয় কেউ বাড়ীতে নেই,যশ কি জানত না?অবাক হয়ে দেখল দরজায় দাঁড়িয়ে যশ মিট মিট করে হাসছে।কাছে এসে একটা গেলাসে পানীয় ঢালে।গন্ধে বুঝতে পারে পল্টু বলল,যশ আমি এসব খাইনা।
--থোড়া সা আমার জন্য।
এমনভাবে বলল পল্টু আপত্তি করতে পারে না।গেলাস তুলে চুমুক দিল।যশ খিল খিল করে হেসে ফেলে বলল,ইয়ে সরবৎ নেহি সরাব আছে।
পল্টুর মাথা ঝিমঝিম করে।আচমকা যশ তার বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে চেপে ধরে বলল,অঙ্গ আই লাভ ইউ।
পল্টু টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় চিত হয়ে পড়ে যায়।যশ বুকের উপর চেপে বসে।পল্টু বাধা দেবার চেষ্টা করে।ততক্ষণে যশ জড়িয়ে ধরে তার ঠোট মুখে পুরে নিয়েছে যশ।ডানহাত দিয়ে প্যাণ্টের জিপার খুলে ল্যাওড়া বের করে নিয়েছে।
বাধা দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে পল্টু।যশ বলল,প্লিজ অঙ্গ প্লিজ দোন্ত দিজ হার্তেন মি--প্লিজ।
নিজেই চেরার মুখে লাগিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে নিল।
--প্লিজ অঙ্গন মুভ--মুভ মাই ডারলিং
মুহুর্তের মধ্যে কি যে হয়ে গেল পল্টু বুঝতেই পারে না।বীর্যপাতের পর যশ উঠে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ।একসময় বলল,অঙ্গন তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
পল্টু ম্লান হেসে বলল,ইটস ওকে।
যশের অঙ্গনের উপর কোনো রাগ নেই।সেই বরং যা করার জোর করে করেছে।কি যে হয়েছিল সেদিন।ওইতো অঙ্গন বেরিয়েছে।সম্ভবত ওকে দেখেনি।বউটার উমর জদা আছে।
--কি ভাবছিস ইয়ার?রিয়া জিজ্ঞেস করে।
যশের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখল অঙ্গন এদিকে আসছে।
কিছুক্ষণ পর দেব বেরিয়ে এল,সঙ্গে এক ভদ্রলোক।বাইরে দাঁড়িয়ে দুজনে কি কথা বলছে তারপর ভদ্রলোক দেবের মাথায় হাত দিয়ে কি বলে গাড়ীতে উঠে গেলেন। দেব এগিয়ে এসে বলল,আমাদের স্যার ড.খান্না আমাকে খুব স্নেহ করেন।
খাদিজা বেগম লক্ষ্য করে দূরে একটা মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যশবিন্দার গল্প করছে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে খাদিজা বলল,দেব দেখো ঐ কি যশবিন্দার?
মুখ শুকিয়ে গেল দেবের জিজ্ঞেস করল,তুমি কি করে চিনলে?
--যাও কথা বলে এসো।
--যাবো?মনে হয় আমাকে দেখেনি।
--না দেখুক তুমি তো দেখেছো।দেখা করা ভদ্রতা।যাও আমি দাড়াচ্ছি।
পল্টু ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল।পল্টুকে দেখে যশবিন্দার হাত নেড়ে বলল,হাই অঙ্গন।
--তুমি কেমন আছো যশ?
যশ সঙ্গের মেয়েটিকে বলল,রিয়া ইফ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড--।
রিয়া হেসে বলল,ওকে কাল দেখা হবে।বাই অঙ্গন।
রিয়া চলে যেতে যশ বলল,ড.খান্না তোমার খুব তারিফ করছিলেন।
--আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে।দিল্লীতে একটা হসপিটালে ব্যবস্থা করে দেবেন যদি আমি রাজি থাকি।
--তুমি কি বললে?
--বললাম স্যার একটু ভেবে দেখি।
--তুমি কি একা এসেছো?
--সঙ্গে বউ আছে।যশ আই এ্যাম ভেরি স্যরি।
যশবিন্দার চোখ তুলে কয়েক পলক পল্টূকে দেখে বলল,ইউ আর ভেরি চাইল্ডিস। আই হ্যাভ সিডিউসড ইউ নো প্রবলেম।বাই গুরু তোমার ভাল করবে।চলো তোমার ল্যাগেজ নিয়ে আসবে।
--আচ্ছা যশ মানে সেদিনের জন্য কিছু হয় নি তো?পল্টূ জিজ্ঞেস করে।
যশবিন্দার ভ্রু কুচকে পল্টূর কথা বুঝতে পেরে হেসে বলল,ডোণ্ট ফারগেট আই এ্যাম অলসো আ ডক্টর।
পল্টু হাত নেড়ে বেগমকে ডাকে।তিনজনে ট্যাক্সিতে উঠে বসল।মিনিট দশেক পর একটা বাড়ীর নীচে গাড়ী দাড় করায় যশবিন্দার।গাড়ী থেকে নেমে গলি দিয়ে বাড়ীর ভিতরে ঢুকে গেল। কয়েক মুহুর্ত পর একটা ট্রলি টানতে টানতে যশকে দেখা গেল আসতে। খাদিজার পছন্দ হয় না ট্যাক্সি থেকে নেমে ট্রলিটা যশের হাত থেকে নিয়ে টানতে টানতে ট্যাক্সির দিকে আসে।পিছনে গীয়ে ড্রাইভারকে ডিকি খুলতে বলে। খাদিজা বেগম কাচের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্য করে যশ নীচু হয়ে ট্যাক্সিতে বসে থাকা দেবের সঙ্গে কথা বলছে।
--অঙ্গন উই ক্যান বি গূদ ফ্রেণ্ড?
--যশ আমি তোমাকে কোনো দিন ভুলবো না।
যশবিন্দার ট্যাক্সির জানলা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে দেবের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোটে হোট চেপে ধরল। খাদিজা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ডিকিতে মাল তুলে খাদিজা ট্যাক্সিতে উঠে বলল,যশ কলকাতায় এলে আসবেন।
ট্যক্সি ছেড়ে দিল খাদিজা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ওড়না দিকে মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে যশ অপলক,লক্ষ্য করল দেবের মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,দেবকে খুব স্বার্থপর মনে হল।জিজ্ঞেস করল,কি দেখছো?
দেব কোনো উত্তর দিল না।খাদিজার মনে হল দেব লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছে না। কি হল কথা বলছো না যে বলে দেবের চিবুক ধরে নিজের দিকে ঘোরাতে দেখল দেবের ঠোট ফোলা চোখ জলে ভরে গেছে। খাদিজা আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল,একী ছেলে মানুষী হচ্ছে?শান্ত হয়ে বোসো।
--যশ খুব ভাল মেয়ে বেগম।আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। পল্টু অনুশোচনা প্রকাশ করে।
দেবের হাত নিজের কোলে নিয়ে খাদিজা বেগম ভাবে,যশের প্রতি সে কোনো অন্যায় করলো না তো? কিন্তু আল্লাহপাক তাকে যা দিয়েছে সে কেন ফিরিয়ে দেবে?আল্লাহপাক মেহেরবান, কলকাতায় গিয়ে কোন মাজারে চাদর চড়িয়ে আসতে হবে।
পৌরসভার ২০ নং আসন পরের বার মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে।শোনা যাচ্ছে এই কেন্দ্রে পার্টির প্রার্থী হবে অপলা ভট্টাচার্য।দীনেশবাবু এতদিন এখানে কাউন্সিলার ছিলেন তিনি নিজের বউকে দাড় করাবার চেষ্টা করলেও পাড়ার ইয়ং ব্যাচ প্রতিবাদ করে স্বজন পোষণ চলবে না। দীনেশবাবুর ধারণা এর পেছনে অপু ভট্টাচার্যের হাত আছে।আড়ালে গাল দেয় তেলির মেয়ে বামুন হয়েছে। যুবকদের মধ্যে অপুদি অত্যন্ত জনপ্রিয়। লক্ষণদাকে কোনো কাজ করতে হলে অপুদির অনুমতি নিতে হয়।
দিলীপ এলআইসিতে চাকরি পেয়েছে।সন্ধ্যে বেলা রমিতাদের বাড়ীতে নিয়মিত চা খেতে যায় এখন। সন্ধ্যেবেলা জগমোহন কোর্ট থেকে ফিরে খোজ নিলেন দিলীপ এসেছে কি না? রমিতা বলল,তখনো আসেনি। শমিতা দিদিকে জিজ্ঞেস করে বাবা আজকাল দিলীপদাকে খুব পছন্দ করে তাই নারে দিদি?
--বেশি পাকা হয়েছিস? রমিতা বোনকে ধমক দিল।
দেববাবুকে দেখে ওরা বিরক্ত হয়ে ঘরে ঢুকে গেল। জগমোহন বৈঠক খানায় বসে চা খাচ্ছিলেন দেববাবুকে দেখে বললেন, আসুন।
দেববাবু ঘরে ঢুকে সোফায় বসে পকেট থেকে পাঁচশো টাকা বের করে টেবিলে রেখে বললেন,দাদা এইটা রাখুন।
--কিছু মনে করবেন না দেববাবু।এই ব্যাপারে যা পরামর্শ দেবার দিয়েছি এবার আপনি অন্য উকিল দেখুন।
দেববাবু ঘাবড়ে গেলেন পাঁচশো টাকা দেখে কি অসন্তুষ্ট?
--এখন এই আছে কদিন পরেই বাকী টাকা দিয়ে দেবো।আজ আবার একটা চিঠি এসেছে। একটা চিঠি এগিয়ে দিলেন।জগমোহন চিঠি পড়ে বললেন,উকিলের নোটিশ বাড়ী ছেড়ে দিতে হবে।
--বাড়ী ছেড়ে দেব মানে?
--আপনার বোন বাড়ীটা আপনাকে দিয়ে গেছে বলছেন। বাড়ীটা কি আপনার বোনের?
--হ্যা অনলের বাড়ী মানে অনলের বউয়ের বাড়ী।
--সেতো আমি আপনি বুঝলাম কিন্তু কোর্ট দেখবে কে ডা.সোমের বউ এবং ডা.সোম তাকে বাড়ী দিয়ে গেছে কি না?
--বাপ মরলে ছেলে মেয়েরাই বাড়ী পায়--তার বউ....।
--তা পায় ডেথ সারটিফিকেট দেখিয়ে নাম খারিজ করে মালিকানা পেতে হয়। আপনার বোন কি নাম খারিজ করিয়েছিলেন?
--তা তো জানি না।
--সেটা ভাল করে জানুন।কার নামে পৌর সভায় ট্যাক্স জমা হয় রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল কার নামে ভাল করে খোজ করুণ।এই ফ্লাট আমার টাকায় বউয়ের নামে কেনা ইচ্ছে করলে আমি বেচতে পারবো না।
--এসব তো আমি কিছুই জানি না।
--একজন ভাল উকিল ধরুন তিনিই সব খোজ খবর করে দেবেন।
--দাদা আপনি আমার উপর রেগে গেছেন?
--আপনি টাকাটা তুলে রাখুন আমাকে আর টাকা দিতে হবে না। আমি রাগ করে বলছি না,এই ব্যাপারের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না অসুবিধে আছে।
টাকা তুলে নিয়ে বিরস মুখে দেবব্রত বাড়ী চলে আসেন মনে মনে বলেন হারামী উকিল গাছে তুলে দিয়ে এখন সাধুপুরুষ সাজা হচ্ছে। ওর মত উকিল কোর্টে ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয়। ঘরে ঢুকতে বাসন্তী বলল,শোনো তুমি ওদের এ্যাডভান্স ফেরত দিয়ে দাও ঐ মেয়েছেলেটাকে আমি এ বাড়ীতে ঢুকতে দেবো না বলে দিলাম।
--তুই কে রে? তুই কি বাড়ীর মালিক? দেববাবু খিচিয়ে ওঠেন।
তুই-তোকারি শুনে বাসন্তী ঘাবড়ে গেল।ঐ মেয়েকে বাবুর মনে ধরেছে। বুকের কাপড় খুলে দিয়ে বলল,হ্যা গো আমি কি তোমাকে সুখ দিতে পারি না? ওর মধ্যে কি দেখলে যা আমার নেই?
দেববাবু বউয়ের দিকে দেখে মাইগুলো একেবারে ঝুলে পড়েনি।দরজার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,খুশি কোথায়?
--ওরা উপরে পড়ছে।
দরজা বন্ধ করে বললেন,এসো একবার ভাল করে চুদি।
বাসন্তী খুশি হয়ে বিছানায় গুদ কেলিয়ে শুয়ে পড়ে বলল,তোমার যত ইচ্ছে হয় চোদো,দোহাই ঐ মগীকে এ বাড়ীতে এনো না।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬০]
কলেজ যাতায়াতের পথে ছোট একটা সাইন বোর্ড চোখে পড়তো স্বপ্না আঢ্য ম্যরেজ রেজিষ্টার।কখনো মনে হয় নি স্বপ্না আঢ্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।ফ্লাটের নীচে দেবকে নামিয়ে দিয়ে খাদিজা বেগম বলল,তুমি উপরে যাও,আমি আসছি। গাড়ীতে উঠে ইকবালকে নিয়ে স্বপ্না আঢ্যের বাড়ীতে একতলায় অফিস। খাদিজাকে বেগমকে দেখে স্বপ্না বললেন,আমি আপনাকে চিনি আপনি তো কলেজে পড়ান?
অল্প হাসি টেনে খাদিজা বলল তার আসার কারণ। স্বপ্না অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা বিবাহিত নন?
--রেজিষ্ট্রি করিনি,কাল সন্ধ্যেবেলা কি আপনার সময় হবে?
--ঠিক আছে আমার তো এই কাজ। আমি সাতটা নাগাদ পৌছে যাবো রেজিষ্ট্রি করে রাখা ভাল,বাইরে যেতে গেলে রেজিষ্ট্রি মাষ্ট।
গাড়ীতে উঠে খাদিজা বেগম হেলান দিয়ে বসে নিশ্চিন্ত বোধ করে।এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? খাদিজা বেগম কি কোনো কারণে ভয় পেয়েছে? কাকে ভয় কি এমন ঘটল যে ফ্লাটে না ঢুকেই তাকে স্বপ্না আঢ্যের অফিসে ছুটতে হল?সে কি খাতায় কলমে বেঁধে রাখতে চাইছে? মাথার মধ্যে টুকরো টুকরো কথা ভাসতে থাকে। খানাপিনার সামনে গাড়ী দাড় করিয়ে দুটো লাঞ্চ পার্শেল নিয়ে নিল। তিনতলায় উঠে দরজার কাছে যেতে ভিতরে নারী কণ্ঠ শুনে খাদিজা চমকে ওঠে।
তার অনুপস্থিতিতে আবার কে এল?বসুন্ধরা জয়শোয়াল নয় তো? কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে থাকে কি জানি কি আবার দেখতে হবে।দেব দরজা খুলে বলল, জানো আমি যখন উঠছি ওরা তখন নামছে। কি কোইন্সিডিয়েন্স।
খাদিজা বেগম চিনতে পারে দিলীপ আর সঙ্গে একটি মেয়ে সোফায় বসে আছে। মাত্র দুজনের খাবার এনেছে ইকবালকে বলেছে সন্ধ্যে বেলা আসতে।দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,তোমরা খাবে তো?
--না না আমরা খেয়ে বেরিয়েছি।
--আমরা এখানে ছিলাম না একটু আগে ফিরেছি।
--হ্যা পল্টুর সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল।আমরা ফিরেই যাচ্ছিলাম সিড়িতে আমাদের দেখা হল।
--এ্যাই জানোতো দিলীপ রমিলাকে বিয়ে করছে।
--ওঃ পল্টুদা রমিতা,তুমি সব ভুলে গেছো।রমিতা শুধরে দিল।
--মনে আছে একদিন কুল পাড়ার জন্য তোমাকে কাধে তুলেছিলাম?
--স্যরি হ্যাঁ শমিতা।ওকে চেনো?,এ্যাডভোকেট জগমোহন বাবুর মেয়ে তুমি তো আগে দেখেছো।পল্টূ বলল।
খাদিজা বেগম দেবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দিলীপকে বলল,তোমরা তো খেয়ে এসেছো।একটু বোসো আমরা খেয়ে নিই তারপর জমিয়ে পাড়ার গল্প করা যাবেে।
দেবকে বলল,তুমি স্নান করে নেও অনেক বেলা হয়ে গেছে।
খাদিজা বেগম রান্না ঘরে হাতের প্যাকেট নামিয়ে রেখে চা করে দিলীপ রমিতাকে দিয়ে বলল,চায়ে নিশ্চয়ই আপত্তি নেই।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,শোনো তুমি আমাকে 'ম্যাডাম ম্যাডাম; করবে না বলবে বৌদি। ঠিক আছে?
দিলীপ চোখ নামিয়ে হাসল।খাদিজা চলে যেতে রমিতা বলল,মহিলা বেশ জলজেত
--পল্টূদাকে সবাই ভালবাসে। রমিতা বলল।
--পল্টুর সঙ্গে মিশলে খারাপও ভাল হয়ে যায়।দিলীপ বলল।
--আবার ঐসব কথা? তোমাকে বলেছি না পুরানো কথা আর তুলবে না।কিছুক্ষণ পর রমিতা বলল, কে যেন বলেছিল যে কোনোদিন নেশা করেনি তার চেয়ে যে নেশা করে ছেড়ে দিতে পারে তার ক্রেডিট বেশি।
--সত্যি করে বলতো তুমি সেই আগের দিলীপকে ভালবাসতে পারতে?
রমিতা ফিক করে হেসে বলল,আমার বাবা মাতাল দেখলে খুব ভয় লাগে। বাথরুম থেকে পল্টু বেরিয়ে এসে হেসে বলল,প্রেমিক প্রেমিকারা সারাক্ষণ বকবক করতে পারে তাদের কোনো বিষয় লাগে না।
--তোমরাও সারাক্ষণ বকবক করো? রমিতা লাজুক গলায় জিজ্ঞেস করে।
পল্টু রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে নিল একবার তারপর বলল,অঞ্জু আমার প্রেমিকা নয় অভিভাবিকা।সব সময় এটা করো ওটা কোরনা।
খিলখিল করে হেসে উঠল রমিতা। পল্টুদা বেশ মজা করে কথা বলতে পারে। দিলীপের মনে পড়ল রমিও তাকে কম শাসন করে না? আসলে মেয়েরা স্বামীকে তার নিজের মত করে গড়ে নিতে চায়।বাবার বিরুদ্ধে কিভাবে দাড়িয়েছিল দিলীপ তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়।
খাদিজা বেগম বাথরুম থেকে বেরিয়ে টেবিলে খাবার সাজায়। দুজনে খেতে বসে ,খেতে খেতে পল্টু বলল,অঞ্জুই রান্না করে আজ হোটেল থেকে আনা হল।
--খেতে খেতে কথা বলে না,চুপ করে খাও।
পল্টু চোখ টিপে দিলীপকে ইশারা করে বোঝায় বলেছিলাম না সব সময় শাসন করে।দিলীপ আর রমিতা মুখ টিপে হাসে।
খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডা চলল সন্ধ্যে পর্যন্ত। কিরণকে কেন হাজতবাস করতে হচ্ছে লক্ষণদার বিয়ের প্রসঙ্গ কিভাবে অপুদির সঙ্গে যোগাযোগ পল্টূদের বাড়ী ভাড়া দেওয়া হচ্ছে পতাদার মেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে মাধ্যমিকে, তপনদা এখন পাড়ায় থাকে নীরার বিয়ে ভাল হয় নি এরকম নানা প্রসঙ্গ এল।পল্টু জিজ্ঞেস করে,হাসি খুশি কেমন আছে?
ঝিল পাড় এলাকার একটা ছেলে হাসির পিছনে লেগেছিল অপুদি ওকে কান ধরে ওঠ বোস করিয়েছে।দীনেশবাবু নিজের বউকে নির্বাচনে দাড় করাতে চাইছিল কিন্তু পার্টি অপুদিকে দাড় করাতে চায়। পল্টু জিজ্ঞেস করে,কেমন দেখতে ভদ্রমহিলা?
খাদিজা সকলের চোখ এড়িয়ে দেবের কোমরে চিমটি কেটে বলল,নির্বাচনে দাড়াতে সুন্দরী হতে হবে নাকি? নীচে গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল খাদিজা উঠে ব্যালকণিতে গিয়ে দেখল ইকবাল এসে গেছে।ইশারায় উপরে ডেকে চা করতে গেল।
পল্টূ ইকবালকে সোফায় বসতে বললেও বসে না, সে কোন থেকে একটা টুল নিয়ে বসল। একটা ট্রেতে চা আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে খাদিজা টেবিলে নামিয়ে রাখে।একটা কাপ তুলে ইকবালকে দিল আর হাতে করে কয়েকটা বিস্কিট। সন্ধ্যে হয়ে গেছে দিলীপ বাড়ী ফেরার জন্য দ্রুত চা নিঃশেষ করে উঠে দাড়াল।খাদিজা বেগম বলল,তোমরা নীচে গাড়ীতে বোসো। দিলীপ রমিতার সঙ্গে চোখাচুখি করে তার মানে ওদের গাড়ীতে করে পৌছে দেবে? ওরা বেরিয়ে যেতে খাদিজা বেগম দেবের গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,কি বলছিলে?
--কি বললাম আবার?
--আমি তোমার অভিভাবিকা?তোমাকে কেবল শাসন করি? তুমি আমার সব কথা শোনো?
--শুনি না?কোন কথা শুনিনি বলো?
--ঠিক আছে কাল সন্ধ্যেবেলা রেজিষ্টার আসবে আমাদের বিয়ে হবে মনে থাকে যেন।
--আমাদের বিয়ে?
--কেন তুমিই তো বলেছিলে বিয়ে করবে?
--হ্যা হ্যা বলেছিলাম মনে পড়েছে,আচ্ছা দিলীপকে আসতে বোলবো?
--এখন না পরে একদিন বললেই হবে।খাদিজা দেবের ঠোট মুখে নিয়ে চুষে বলল,এবার তৈরী হয়ে নেও।
--আমি একটূ করি? পল্টূ বেগমের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে,খাদিজা জিভটা দেবের মুখে ঠেলে দিল।
পিছনে দিলীপ রমিতা আর খাদিজা বেগম সামনে ড্রাইভারের পাশে পল্টু।চলতে চলতে দিলীপ বলল, বিয়েতে তোকে খবর দেবে তুই কিন্তু আসবি ।তারপর খাদিজার দিকে তাকিয়ে বলল,আপনিও আসবেন।
খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কে আমি? শুভ অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া কি ঠিক হবে?
দিলীপের মুখে কথা যোগায় না রমিকে একবার দেখে নিয়ে বলল,আপনি আমার বৌদি আপনি আসবেন কে কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। পল্টু বৌদিকে নিয়ে আসবি কিন্তু।
--আসলে আসবে আমি তো কোলে করে নিয়ে আসতে পারবো না।
রমিতা হেসে ফেলে, খাদিজা বেগম মনে মনে বলে বাড়ী চলো কোলে করে আনতে পারো কি না দেখাচ্ছি। পাড়ায় ঢোকার মুখে দিলীপরা নেমে গেল। রমিতা নেমে খাদিজাকে বলল,আসি বৌদি।
দেব পিছনে এসে বেগমের পাশে বসল। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই এই লোক একটু আগে কোলে নেবার কথা বলছিল। নিরীহ গোবেচারি চেহারা পাশে বসে আছে একজন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। পান্থনিবাসের নীচে গাড়ী দাড়াতে দেব নেমে গেল।খাদিজা বেগম নামতে যাবে ইকবাল বলল,মেমসাব একটা কথা বলবো?
--কি কাল আসবে না?
--জ্বি না। মানে আমার বিবির তবিয়ত আচ্ছা নাই।
--ঠিক আছে পরশু সময় মত এসো।
--কাল আপনাকে কলেজে নিয়ে যাবো।ডাক্তারসাব যদি মেহেরবানি করে একবার--।
খাদিজা বেগম অবাক হয়ে তাকাল দেব চলে গেল জিজ্ঞেস করল,ডাক্তার ছিল তুমি বলো নি কেন?
--ডাক্তার সাহেবকে বলতে ভয় লাগল আপনি যদি...।
খাদিজা বেগম অবাক হয় দেবকে ভয় আর তাকে নির্ভয়ে বলা যায়? তার ধারণা ছিল উল্টো খুব মজা লাগে ব্যাপারটা সে যেমন ছেলে মানুষ ভাবে অন্যের চোখে দেব তেমন নয়?দেবের সঙ্গে কথা বলতে কেউ ভয় পেতে পারে আজ নতুন করে জানলো। দেব শান্ত কম কথা বলে,বললেও মৃদু স্বরে চড়া গলায় কথা বলতে শোনেনি। খাদিজা জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে তোমার বউয়ের?
--জ্বি পেটে দরদ হায়েজ ঠিকমত হয় না।
--আচ্ছা তুমি দাড়াও।খাদিজা উপরে ঊঠে দেখল দেব দরজা খুলছে চাবি ঘুরিয়ে।
--দেব দরজা খুলতে হবে না, একবার নীচে চলো।
--কেন? আবার কি হল?
--লক্ষীটি একটু চলো।ইকবালের বউকে একবার দেখবে।
--উপরে আসতে বলো না।
--উঃ তুমি বেশি কথা বলো,যা বলছি শোনো নীচে চলো।
দেব হাসে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,হাসছো কেন?
--না কিছু না,চলো।অভিভাবিকার নির্দেশ মানতেই হবে।
এই হচ্ছে দেব মজা করে কথা বলে কাউকে আঘাত করতে পারে না তবু তার সঙ্গে ইকবালের কথা বলতে ভয়।
একটা খাটে ইকবালের বিবিকে শুতে বলা হল।লম্বা ঘোমটা টানা মুখ দেখার উপায় নেই,দরজার পাশে ইকবালের মা দাঁড়িয়ে আছে। দেব জিজ্ঞেস করল, কোথায় ব্যথা? কি নাম তোমার?
ইকবাল বলল,নাজমা বেগম।
খাদিজা বেগম ঠোটে আঙ্গুল ছুইয়ে কথা বলতে নিষধ করে।দেব গম্ভীর অন্য লোকে বিচরণ করছে। কোথায় ব্যথা?
নাজমা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল। কোমরের বাধনের ভেতোর হাত ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করে,এখানে? বাথরুম করতে কষ্ট হয়?
নাজমা বলল,জ্বি দরদ হয়।
--আল্ট্রা সোনো করতে হবে লোয়ার এ্যাবডোমেন একটা পরিস্কার কাগজ দেখি।
ইকবাল কাগজ এনে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, সেটা কি ডাক্তার সাব?
--লিখে দিচ্ছি তুমি দেখালেই বুঝতে পারবে।
--ডাক্তার সাব কোনো ভয় নেই তো?
--এই টেষ্টটা করে আমাকে দেখাতে হবে।যা ভাবছি তা না হলেই ভাল।
খাদিজা বলল,ইকবাল পানি আর সাবান আছে,দাও।
হাত ধুয়ে দেব গাড়ীতে এসে বসল।খাদিজা অভয় দিল কোনো ভয় নেই ডাক্তারবাবু আছে সব ঠিক হয়ে যাবে। ইকবালের সামনে খাদিজা আর কথা বলে না।তলপেটে হাত বুলিয়ে কি করে বুঝতে পারে?তার তলপেটে হাত বুলিয়ে কি বলতে পারবে না তার পেটের মধ্যে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না? খাদিজা জজ্ঞেস করে ,কি ভাবছো বলতো?
পল্টু বেগমের দিকে তাকিয়ে হাসল। খাদিজা জিজ্ঞেস করে,কি হল?
--ভাবছি লক্ষণদার কথা।একটি অসহায় মেয়েকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচালো শুধু না তাকে নতুন জীবন দিল।লক্ষণদা কোনোদিন বিয়ে করবে ভাবিনি।
--মেয়েটা অসহায় তোমাকে কে বলল?
--অসহায় না হোক জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছিল তা তো মানবে?
খাদিজা বেগমের কাধে হাত তুলে দিল। খাদিজা বেগম একবার ইকবালকে দেখল।কাধের উপর থেকে হাত নামিয়ে কোলের উপর রাখে। দেব বলল,জানো অঞ্জু সব মানুষের মধ্যে ভাল মন্দ থাকে।লখণদার মত মানুষ পাড়ার একটা এ্যাসেট বলতে পারো।কে কোথায় মরলো কার বাড়ীতে ঝগড়া হল পাড়ার পুজো পিকনিক সব ব্যাপারেই এরা আছে। বিনিময়ে কোনো দাবী নেই।বিয়ে করে হয়তো বদলাবে।
--তুমি বদলেছো?
--কি জানি যে বদলায় সে বুঝতে পারে না আচ্ছা অঞ্জু আমি কি আর আগের মত নেই--বদলে গেছি?
খাদিজা বেগম দেবের হাতে চাপ দিল কি বলবে বুঝতে পারে না।মনে করার চেষ্টা করে সেই প্রথম দিনের কথা চেহারায় বদল হয়েছে কিন্তু সেই ছেলে মানুষীভাব এখনো গেল না।বিয়ের কথা মনে হয়নি কিন্তু একটা অনুভব করেছিল অন্তরের গভীরে।বয়সের ফ্যারাক ধর্মের ফ্যারাক তাদের এখনো আনুষ্ঠানিক বিয়েও হয়নি তবু মুহুর্তের জন্য মনে হয় না অন্য বিবাহিত দম্পতীর থেকে আলাদা।
ফ্লাটের নীচে পৌছে খাদিজা বেগম বলল,ইকবাল ডাক্তারবাবু যা বলল টেষ্ট করে রিপোর্ট নিয়ে ডক্তারবাবুকে দেখিয়ে নিয়ে যাবে।
--জ্বি মেম সাব।
ফ্লাটে ঢূকে দুজনে চেঞ্জ করল।কিছুই রান্না হয় নি। ষ্টোভে রান্না চাপিয়ে দিয়ে খাদিজা জিজ্ঞেস করল,তুমি পেটে হাত দিয়ে কি দেখছিলে?পেটে হাত দিতে গেলে কেন?
--বলল পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। বাথরুম ভাল হয় না মেন্সটুরেশন অনিয়মিত।
--কি বুঝলে?
--অনেক কিছু হতে পারে সেই জন্যই তো বললাম টেষ্ট করতে।
--অনেক কিছু কি?
--যদি জরায়ুতে সিষ্ট হয় তাহলে অপারেশন করাতে হবে।
--বেচারি খুব ঘাবড়ে গেছে। খাদিজা বেগম দেবকে বুকে চেপে ধরে বলল,আমার দেব একদম বদলায় নি সেই আগের মত ছোট্ট সোনাটি আছে।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
অফিস বেরোবার পথে বারান্দায় সাক্ষাৎ প্রার্থীদের ভীড় শংকর প্রসাদের ভাল লাগে না। এক-আধদিন হয় আলাদা কিন্তু তাই বলে রোজই? লখার কাছেও লোক আসতো সামান্য কয়েকজন টেরও পাওয়া যেত না।পুর্ণিমার খারাপ লাগে না তার জা-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে পাড়ায় তারও গুরুত্ব বেড়েছে।পুর্ণিমা স্বামীকে অফিস পাঠিয়ে এক কাপ চা নিয়ে ঢুকে বললেন,এই অপু চা এনেছি।কি ঘুমরে বাবা।
অপালার ঘুম ভেঙ্গেছে অনেক আগে চায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল।উঠে বসে হেসে বলল,ঘুমাচ্ছি না,দিদি গুড মন্নিং।দাদা বেরোয়ে গেছে?
--দাদার তোমার মত ঘুমালে চলবে? নেও চা খেয়ে ওদের বিদায় করো।পুর্ণিমা অপেক্ষমান লোকেদের ইঙ্গিত করেন।
--এই এক ঝামেলা রোজ রোজ ভাল লাগে না।আপনের দেওররে দেখতেছি না তিনি কই গেলেন?
পুর্ণীমা হেসে চলে যেতে লক্ষণ ঢুকলো,কিছু বলছো?
--আপনে পুব পাড়ায় গেছিলেন?
--এখন যাবো,সামান্য কটা টাকা ভাড়ার জন্য অতদুর যাওয়া--।
--এই আপনের বুদ্ধি?ভাড়াটা বড় না তারা আমাদের টেনেন এইটা মাইণ্ড করানো। ভাবছি বাড়ীটার একটা ব্যবস্থা করতি হবে।
--ঐ বাড়ী বিক্রি করে দিলেই হয়।লক্ষণ বলল।
চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে কাপ সরিয়ে স্বামীর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,ব্যাচার কথা মুখেও আনবেন না। ব্যাচবো না খালি কেনবো খালি কেনবো।আপনেরে দিয়ে পলিটিস হবে না।যান ঐ লোকগুলোরে একজন একজন করে আসতে বলেন,আর পুব পাড়ায় গিয়ে ভাড়াটা নিয়ে আসেন।সন্ধ্যে বেলা আমার মিটিন আছে জ্ঞানদা খবর পাঠায়ছে।
লক্ষণ বেরিয়ে গেল। সারাদিন খাটাবে ,রাত্রিতেও রেহাই নেই জল না খসালে ওনার ঘুম হয় না।লক্ষণের কি সে বয়স আছে,শরীরে কি তার ফ্যাদার ট্যাঙ্কি? অবশ্য অপুর উপর লক্ষণের কোনো রাগ নেই।বয়স কম এই সময় শরীরে জ্বালা একটূ বেশি।অপুর জন্য এখন লক্ষণকে কেউ তেমন পাত্তা দেয় না তার জন্য কোনো দুঃখ নেই,অপু তাকে খুব ভালবাসে।
ভাড়াটের বেরোবার মুখে উপর থেকে বাড়ীওলা ময়লা ফেলে।লক্ষণ গিয়ে বাড়ীওলাকে ধমক দিয়ে এসেছে তাও যে কে সেই।ভাড়াটে নালিশ জানাতে এসেছে।বলাই বলল, অপুদি বাড়ীওলা শালা বহুত হারামী লক্ষনদার মত ম্যান্দামারা লোক দিয়ে হবে না।
অপালার চোখে আগুণ জ্বলে ওঠে, কানের গোড়ায় এক চড় দেবো।তুই জানিস না উনি আমার হাজবেণ্ড? এ দেশ সতী সাবিত্রির দেশ পতির অপমানে সতী দেহত্যাগ করেছেল আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু কেউ হাজবেণ্ডকে ইনছাল্ট করবে আমি শাট আপ থাকবো না।
বলাই ঘাবড়ে গিয়ে বলল,অপুদি অন্যায় হয়ে গেছে আর করবো না।
ভাড়াটে ভদ্রলোক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,দিদি বাড়ীওয়ালা আমাকে উঠিয়ে দিয়ে নতুন ভাড়াটে বসাতে চায়।
দরজার আড়াল থেকে শুনে লক্ষণের চোখে জল এসে যায়।ঘরে বসে থাকা ছেলেদের উদ্দেশ্যে অপালা বলে,ওনার ছ্যাকরিফাইচ তোরা জানিস না। তোদের বাপ দাদারা জানে।শোন বলা তুই বাড়ীওলাকে আমার নাম করে বলবি ফের যদি ভাড়াটের দরজার সামনে ময়লা পড়ে তা হলে সেই ময়লা তুলে বাড়ীওলার ঠাকুর ঘরে ফেলে আসবো।
এরপর কে আছে ডাক।সারাদিন এই ঝামেলা নিয়ে থাকলে হবে?পার্টির কি আর কাজকম্মো নেই?
দেব কাছে যেতে গলা জড়িয়ে চুমু খেয়ে কলেজে বেরিয়ে গেল।ইকাবাল বউকে নিয়ে টেষ্ট করাতে গেছিল,দেরী হবে বলে মাকে রেখে এসেছে,সন্ধ্যেবেলা রিপোর্ট দেবার কথা।সবাই চেপে ধরে ড.সোম মাষ্টার ডিগ্রি করেছেন খাওয়াতে হবে।
কেমন হল দিল্লী ভ্রমণ?উনি কি প্রাকটিশ শুরু করেছেন?আঙ্গুরদি এসে খবর দিল, প্রিন্সিপাল ডাকছেন।
প্রিন্সিপালের ঘরে ঢুকতে ড.হাজারিকা জিজ্ঞেস করেন,এখন কি আপনার ক্লাস আছে?
--না ম্যাডাম আমার সেকেণ্ড পিরিয়ডে ক্লাস।
--কনগ্রাচুলেশন।বসুন।
খাদিজা বেগম বসতে ড.হাজারিকা বললেন,আচ্ছা উনি কি কল এ্যাটেণ্ড করেন?
--সাধারণভাবে করেন না।আমার ড্রাইভার বলল বলে ওর বউকে দেখতে গেছিল।
--কি হয়েছে ওর বউয়ের?
--ইউএসজি করতে বলেছে অনুমান করছে জরায়ুতে সিষ্ট।
--সিষ্ট?ড.হাজারিকা ঠোট কামড়ে কি ভাবলেন তারপর বললেন,উনি কোথায় অপারেশন করেন?
--লেকভিউতে নিয়মিত,তাছাড়া কলকাতায় আপনি কোনো নারসিং হোমে ব্যবস্থা করলে ও যেতে পারে।
--হুম।লেকভিউতে অসুবিধে নেই।আমার বউমা তিন বছর বিয়ে হয়েছে কোনো ইস্যু নেই,ওর সিষ্ট ধরা পড়েছে।
--লেক ভিউতে ওর নাম করে ভর্তি করাবেন।শুনেছি ওর হাত খুব ভাল।আসি ম্যাম?
বেরোতে যাবে ড.হাজারিকা ডাকলেন,ড.অঞ্জনা।
--বলনু ম্যাম।ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে খাদিজাবেগম।
--ব্যাপারটা আমি কাউকে জানাতে চাই না।
--আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
কলেজ ছুটির পর খাদিজা বেগম গাড়ীতে উঠে বলল,বাজারের দিকে চলো।ফুলের বাজারে গিয়ে ফুলের বিভিন্ন গয়না ইত্যাদি কিনল। গাঙ্গুরামের দোকান থেকে বাছাই করা মিষ্টি ইত্যাদি কিনে খাদিজা বেগম বাড়ীর দিকে রওনা হল।গাড়ী পান্থ নিবাসে নীচে দাড়াতে ইকবাল বলল,সন্ধ্যে হয়ে গেছে আমি আসি মেমসাব?
কলিং বেলে চাপ দিতে দরজা খুলে দিল দেব।খাদিজা বেগম দেখে বুঝতে পারে দেব সারা দুপুর ঘুমোয় নি জিজ্ঞেস করে,তুমি ঘুমাও নি?
--আমি দুপুরে ঘুমোতে পারি না।
--ঠিক আছে আজ রাতে কিন্তু ঘুমোতে পারবে না যদি ঘুমাও দেখো কি করি।
দেব গুনগুন করে গান গায়,ওগো দুখো জাগানিয়া তোমায় গান শোনাবো তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো....।
খাদিজা বেগম হেসে বলল,থাক আমার জাগিয়ে রাখতে বয়ে গেছে।
--আচ্ছা এত কি বাজার করেছো? পল্টু জিজ্ঞেস করে।শোনো আমি আজ বাজারের খাবার খাবো না আগেই বলে রাখছি।
--আজ নিজের হাতে প্রতিটী পদ রান্না করবো আমার সোনা মণির জন্য।শুধু মিষ্টীটা বাইরে থেকে এনেছি। ফ্রিজ খুলে সব ঢুকিয়ে রাখে খাদিজা বেগম।দেবের দিকে ফিরে বলল,তুমি স্নান করে নেও তারপর আমি ঢুকবো।
--সকালে আমি স্নান করেছি।
--এত তর্ক আমার ভাল লাগে না তোমাকে বলেছি যেতে তুমি যাবে। পল্টূ বার্থরুমে ঢুকতে বাইরে থেকে খাদিজা বলল,ভাল করে গায়ে সাবান দেবে।
খাদিজা বেগম চেঞ্জ করে ফ্রিজ থেকে মাছ মাংস তরিতরকারি বের করে রান্না ঘরে ঢূকলেন।নিজের বিয়ের সব কিছু নিজেকেই করতে হচ্ছে। কাউকে দরকার নেই দেব একাই যথেষ্ট।কড়াইতে জল দিয়ে মাংস সেদ্ধ করতে বসিয়ে দিল। তারপর ভেটকি মাছের আঁশ ছাড়িয়ে কেটে জল দিয়ে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে পাশে সরিয়ে রাখল।পল্টু বাথরুম থেকে বেরিয়ে বেগমকে দেখে বলল,ভাবছি একটা রান্নার লোক রাখবো।
--সে কি করবে?
--রান্নার লোক যা করে?
--রান্না করতে আমার ভাল লাগে।বিশেষ করে আমার প্রিয়জনকে রান্না করে খাওয়াতে আমার আনন্দ।
পল্টু বেগমের দুগাল ধরে ঠোটে মুখ রাখে।খাদিজা বেগম বলল,কি হচ্ছে কি ঘেমো মুখ তুমি কি বলতো?
--তোমার গায়ের গন্ধ ঘামের গন্ধ সব আমার খুব ভাল লাগে।
--তোমার হয়ে গেছে?ছাড়ো আমি স্নান করে আসি।
শাড়ী জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল খাদিজা বেগম। নিজেকে নিরাবরণ করে লাজুক হাসে।যশের কথা মনে পড়ল। খুব দুশ্চিন্তায় ছিল মেয়েটা খারাপ নয় অনধিকার হস্তক্ষেপ বুঝে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। সুন্দর নাম দিয়েছে দেবের অঙ্গন।বাইরে কলিং বেলে শব্দ হল,খাদিজা বেগম বলল,দেখো তো ইকবাল এলো কি না?
পল্টূ দরজা খুলে দেখল স্মিত হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, আপনি ড.সোম?
--হ্যা আপনি?
--আমি স্বপ্না আঢ্য ম্যাডাম আমাকে আসতে বলেছিলেন।
বাথরুম থেকে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কে গো?
একমিনিট বলে পল্টু বাথরুমের কাছে গিয়ে বলল,এই শুনেছো?
খাদিজা বেগম দরজা অল্প ফাক করে জিজ্ঞেস করে, কে ইকবাল না?
পল্টু দরজার ফাক দিয়ে বেগমকে দেখার চেষ্টা করে বলে, নাম বললেন স্বপ্না আঢ্য তুমি ওকে আসতে বলেছো?
--হ্যা বলেছি তোমাকে ফাক দিয়ে দেখতে বলিনি,খালি দুষ্টুমি।উনি রেজিষ্টার বসতে বলো।
--ওঃ হ্যা তুমি বলেছিলে।পল্টু দরজা খুলে ভদ্রমহিলাকে ভিতরে বসালো। স্বপ্না আঢ্য সোফায় বসে ফাইল খুলে কাগজ পত্র বের করেন।ড.সোমকে আগে এত কাছে থেকে দেখেন নি মনে হল বয়স খুব কম।একজন হিন্দু আরেক জন মুসলমান।অনেক প্রশ্ন জমা হয় কিন্তু ড.সোমকে জিজ্ঞেস করতে ভরসা হয় না।মৃদুভাষী গম্ভীর সামনে বসে আছেন অথচ মনে হয় কতদুরে।একটু পরেই খাদিজা বেগম বাথরুম থেকে বের হল।প্রসাধনহীন কোমর পর্যন্ত ছড়ানো এলো চুল রূপের আলোয় যেন ঘর আলোকিত।
--ম্যাডাম আপনাকে বসতে হবে।স্বপ্না আঢ্য বললেন।
খাদিজা বেগম সোফায় বসে বলল,একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি।সাক্ষী লাগবে তো?
স্বপ্না আঢ্য মুখ তুলে হেসে বললেন,নো প্রবলেম।আপনার নাম বাবার নাম বলুন।
খাদিজা আক্তার আহমেদ। বাবা লেট তাজুদ্দীন আহমেদ।
পল্টু এই প্রথম শুনলো আহমেদ।অঞ্জনা বলল না কেন?খাদিজা বুঝতে পারে দেব কি ভাবছে ইশারায় চুপ করে থাকতে বলে।ওর নাম অনঙ্গদেব সোম বাবা লেট অনলদেব সোম।
স্বপ্না আঢ্য লিখতে লিখতে বললেন,ড.সোমের নাম আমি আগেই শুনেছি।বয়সটা?
খাদিজা দেবের দিকে তাকিয়ে আরক্ত হল।পল্টূ বলল,লিখুন ৭ই মে ১৯৪৬ তোমারটা বলো।
খাদিজা বলল,২১শে জুলাই ১৯২৯ সাল।
স্বপ্না আঢ্য মনে মনে হিসেব করে সতেরো বছর। মনে হয় প্রেমের বিয়ে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল, এবার এখানে সই করে দিন।
সই করে খাদিজা বেগম বলল,একটু বসুন।
একটা প্লেটে মিষ্টি এনে সামনে রেখে বলল,প্লিজ।তারপর রান্নাঘরে চা করতে ঢুকল। কলিং বেল বাজতে দরজা খুলে দিতে ইকবাল ঢুকে কাদো কাদো গলায় বলল,মেমসাব বউটা বাঁচবে না।
খাদিজা বেগম রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেবকে বলল,কি হল দেখো না।তুমি ডাক্তার সাহেবকে দেখাও।
পল্টু লাইটের সামনে নিয়ে রিপোর্ট দেখে প্লেট দেখে বলল,ভয়ের কিছু নেই, অপারেশন করতে হব।
খাদিজা বেগম চার কাপ চা নিয়ে সবাইকে দিয়ে বলল,শোনো ইকবাল স্থির হয়ে বসে চা খাও।চা খেয়ে বাড়ী গিয়ে বউকে চিন্তা করতে মানা করো।আমি ফোন করে দেখছি কি রকম খরচ পড়ে।
সবাই চলে গেল খাদিজাবেগমের মনে হল এখন সে মিসেস সোম।রান্না ঘরে ঢুকে বাকী রান্না সেরে টেবিলে সাজায়। পেয়াজ বাদ দিয়ে স্যালাড কাটলো। খাওয়া দাওয়ার পর পল্টু জড়িয়ে ধরে বেগমকে।খাদিজা বেগম ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,একদম হড়বড় করবে না।যাও বিছানায় গিয়ে বোসো।পল্টূ ব্যাজার মুখে বিছানায় বসে থাকে।হয়তো একটূ ঝিমুনি এসে থাকবে।একটা সুন্দর গন্ধে চোখ মেলে তাকাতে বিস্ময়ে মুখে কথা সরে না। নিরাবরণ খাদিজা বেগম হাতে গলায় মাথায় ফুলের অলঙ্কার।কাছে এসে দেবের লুঙ্গি খুলে দিল।
পল্টূ বলল,দাড়িয়ে থাকবে?খাটে এসো।
--তুমি আমাকে তুলে নিয়ে শুইয়ে দাও।
--তোমার যা ভারী শরীর আমি পারবো?
--তুমি আমার স্বামী সারা জীবন আমাকে বইতে হবে পারবো না বললে হবে।
পল্টু নীচু হয়ে কাধের নীচে আর পাছার নীচে হাত রেখে খাদিজাকে তুলে ধরে বুকে মুখ চেপে ধরে বলল,নিজে পরেছো আমাকে মালা দেবে না?
--আমাকে নামাও।
পল্টূ বেগমকে খাটে শুইয়ে দিতে বেগম নিজের গলা থেকে একটা মালা খুলে দেবকে পরিয়ে দিল। পল্টু বলল,এইবার দারুণ হয়েছে।
--দারুণ হয় নি তুমি আমাকে আবার পরিয়ে দাও।
অনিচ্ছা সত্বেও নিজের মালা খলে খাদিজাকে পরিয়ে দিল,খাদিজা নিজের মালা দেবের গলায় পরিয়ে দিল। খাদিজা বেগ পরম পরিতৃপ্তিতে বলল,আমাদের মালা বদল হয়ে গেল। টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে।পল্টু স্তনে আঙ্গুল বোলায় আস্তে আস্তে নীচে নামে তলপেটে হাত বোলাতে বোলাতে হাত থেমে যায়।খাদিজা বেগম ঘাড় কাত করে চোখ বুজে শুয়ে আছে।হাত থামতে চোখ মেলে দেবকে লক্ষ্য করে।মৃদু চাপ দিচ্ছে পেটে। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কি হল?
--তোমার মেন্সটুরেশন নিয়মিত হচ্ছে?
--আগের মাসে তো ঠিক সময়ে হয়েছে।খাদিজা বেগম মনে মনে হাসে,তাহলে কি?
--না ভাবছি ইউরিন টেষ্ট করাবো কি না? কাল সকালে একটা কন্টেনারে কিছুটা ইউরিন ধরে রেখো।
--সকালেরটা সকালে ভাবা যাবে,এখন এসো।
পল্টূ ল্যাওড়া খদিজার চেরার কাছে লাগিয়ে চাপ দিল।
খাদিজা বলল,পেটে চাপ দিও না।
--আচ্ছা বেগম তুমি নিয়মিত ওষূধ খেতে না?
--আমরা স্বামী-স্ত্রী ওষুধ খাবো কেন?
ল্যাওড়া ভিতরে ইঞ্চি তিনেক রেখে বের করে আবার ভিতরে ঠেলে দিয়ে জিজ্ঞেস কর,আজ না আগে কোনোদিন?
--অত আমার মনে নেই,খালি বকবক?
খাদিজার দুপাশে হাতের ভর দিয়ে ল্যাওড়া ভিতরে ঠেলে দেয় আবার কিছুটা ভিতরে রেখে বের করে আবার ঠেলে দেয়।খাদিজা 'আআআ-উউউউহুম আআ আ-উউ উউহুম' শব্দকরে সারা শরীরে রক্তকণিকায় ছড়িয়ে পড়ছে এক অনাস্বাদিত সুখ।দেবের কোমর জড়িয়ে ধরে।দেব ঠাপিয়ে চলেছে মাঝে মাঝে নীচু হয়ে বেগমের নরম বুকে নাক ঘষে।একসময় ব্লগ ব্লগ করে ফ্যাদা বেরোতে লাগল। খাদিজা বেগম দু-হাতে দেবকে বুকে চেপে ধরে।পল্টূ দম নিয়ে বলল, বেগম আমার মনে হচ্ছে তুমি কনসিভ করেছো।
খাদিজা চুপ করে থাকে দেবকে কিছু বলে না।মনে মনে ভাবে দেবের কি আপত্তি আছে? মা হতে ইচ্ছে করা কি অপরাধ?
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬২]ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল চোখ মেলে দেখল খাদিজা বুকে মাথা রেখে ঘমিয়ে আছে দেব আস্তে আস্তে মাথাটা নামিয়ে নীচ একটা বালিশ দিয়ে দিল।উলঙ্গ অবস্থাতে ফোন ধরে বলে,হ্যালো?আমি মিসেস সোম..উনি ঘুমোচ্ছেন,আপনি কে বলছেন? পুলক চ্যাটার্জি?না মানে...ও বুঝেছি ট্রেনে আপনার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন? হ্য বলুন.... .কিডিনিতে স্টোন? এখন কলকাতায়? আপনি লেকভিউ চেনেন?..ওখানে ড.সোমের নাম করে ভর্তি করে দিলেই হবে। আচ্ছা- আচ্ছা এখন রাখি?
--মিসেস সোম একটু চা হবে?
খাদিজা বেগম দেবকে দেখে তার মানে ঘুমের ভান করে সব কথা শুনেছে?কাছে গিয়ে বলল,বাথরুম থেকে এসে চা করছি। তারপর ধোন ধরে নেড়ে দিয়ে বলল, এবার এটাকে আটকে রাখো,অনেক জ্বালিয়েছে কাল রাতে।
দেব তাকালো হেসে বলল,বাথরুম যাচ্ছো?শোনো একটা কন্টেনারে কিছুটা ইউরিন ধরে রাখো।
একটা শিশিতে কিছুটা মুত ধরে চোখে মুখে জল দিয়ে চা করতে গেল খাদিজা বেগম। পল্টূ লুঙ্গি পরে একটা সাদা কাগজে বেগমের নাম বয়স কি পরীক্ষা ইত্যাদি লিখে রাখে। বেগম চা নিয়ে দেবের দিকে এগিয়ে দিল,পল্টূ কাগজটা বেগমের হাতে দিতে দুমড়ে বাস্কেটে ফেলে দিল।
পল্টু অবাক হয়ে বলল,কি করলে ওটা প্রেসক্রিপশন?
কথার উত্তর না দিয়ে আলমারি খুলে একটা প্যাড দেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, খাদিজা নয় অঞ্জনা লিখবে অঞ্জনা সোম।
পল্টু অবাক তার নামে ছাপানো প্যাড।চোখ তুলে বলল,কখন করলে এসব?তুমি না থাকলে যে আমার কি হবে?
--একদম বাজে কথা না,আমি কলেজ বেরোবার পর তুমি একবার লেকভিউ থেকে ঘুরে আসবে।ইকবালকে বলে দেবো। আর ওর ব্যাপারটা তুমি দেখবে,বেচারি গরীব মানুষ।
--আর আমার ব্যাপারটা?পল্টূ জিজ্ঞেস করে।
খাদিজা বেগম দেবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,দুষ্টুমি হচ্ছে? কাল সারারাত জ্বালিয়েছো।খাদিজা বেগম নীচু হয়ে ঠোট এগিয়ে দিল। পল্টূ চায়ের কাপ পাশে সরিয়ে রেখে বেগমের গলা জড়িয়ে ধরে গভীর চুম্বন করলো। কলিং বেল বাজতে খাদিজা বেগম দরজা খুলে দিল। একটি ছেলে বলল,স্যার ফোন করেছিলেন স্যাম্পেল নেবার জন্য।
পল্টূ বলল,ভিতরে এসো।
ছেলেটি ঢুকতে পল্টু বলল,অঞ্জু ওটা দিয়ে দাও।খাদিজা বেগম বাথরুম থেকে শিশিটা এনে ছেলেটির হাতে দিল।
--সন্ধ্যে বেলা আমি লেকভিউতে থাকবো।
--ওকে স্যার।ছেলেটি চলে গেল।
খাদিজা বেগম বলল,এবার তুমি স্নানে যাও। আমি রান্নাঘরে ঢুকছি ডিস্টার্ব করবে না।
পল্টূ বাথরুমে ঢুকে গেল।রান্না চাপিয়ে খাদিজা বেগম ছুরি নিয়ে স্যালাড কাটতে লাগল। দেবের জন্য তারও স্যালাড খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গেছে। ফোন বাজছে।পল্টু বাথরুম থেকে বলল,অঞ্জু ফোন বাজছে।
--শুনতে পেয়েছি। খাদিজা বেগম ফোন ধরল।
--হ্যালো?হ্যা আমি..কেমন আছেন?অরিন্দম কবে যাচ্ছে?...তিনজন?আপনি ব্যবস্থা করুণ আচ্ছা আপনি তো অভিভাবিকা টাকা পয়সা আমি কি বলবো… আপনার এক্সপিরিয়েন্স নতুন ডাক্তার যা ভাল মনে করবেন দেব আপনার ছেলের মত কিছু একটা ঠিক করুণ।ও দুপুরে যাবে,রোজ যেমন যায়। না না খেয়েদেয়েই যাবে।হ্যা যাবো অরিন্দমকে সিঅফ করতে অবশ্যই যাবো। রাখছি।
--পার্বতী ম্যাম।তুমি গেলে ওখানে বসার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।আর বললেন পরশুদিন তিন-চারটে কেস তোমাকে অপারেশন করতে হবে।টাকা পয়সার কথা আমি বললাম উনিই যেন ঠিক করেন।
--আমি যা বলতাম তুমি তাই বলেছো।
--আমি তোমার বউ তুমি কি বলবে তা আমি না জানলে কে জানবে?
--তুমি না থাকলে আমার কি হবে অঞ্জু?
--আবার সেই বাজে কথা? আমি কোথায় যাবো শুনি? এসব শুনলে আমার কত কষ্ট হয় তুমি জানো না?
খাদিজা বেগমের পিছন থেকে কাধের উপর দিয়ে গালে গাল রেখে বলল পল্টু।স্যরি আর বলবো না।আচমকা জামা তুলে খাদিজার লুঙ্গি সরিয়ে পেটে হাত রেখে চোখ বুজে কি যেন অনুভব করার চেষ্টা করে।খাদিজা বেগম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে,জানে এ সময় কথা বলা ঠিক নয়। দেব এখন অন্য জগতে। একসময় জামা নামিয়ে দিয়ে বলল,অঞ্জু এ্যাম সিয়োর পজিটিভ।
--মনে হচ্ছে তুমি খুশি হওনি?
--খুশির কথা নয় আমি ভাবছি তোমার বয়সের কথা। এই বয়সে তুমি কি ধকল নিতে পারবে?
--তোমার সন্তানের জন্য আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারবো।
--কিন্তু আমার বউ?বউ ছাড়া আমার একদণ্ড চলবে না।
--আবার সেই কথা? এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি।
দেবকে ছেড়ে যাবার প্রশ্নই উঠছে না।আজ সে পরিতৃপ্ত প্রথম দিকে বয়স নিয়ে খুতথুতানি থাকলেও এখন সব স্বাভাবিক।পরিচিত মহলে মৃদু গুঞ্জন উঠলেও সবার চোখ সওয়া হয়ে গেছে।ওর বন্ধু দিলীপ ওকে বৌদি বলে।খাদিজা বেগম স্থির করে ব্যাপারটা মিটলে আগের বাড়ীতে চলে যাবে।বিশাল বাড়ী সেখানে জড়িয়ে আছে দেবের শৈশবের স্মৃতি।ফ্লাটে নানা ঝামেলা নিজেদের বাড়ী হলে সেই সমস্যা এড়ানো যাবে।মনে পড়ল শ্রীময়ীর কথা,এবার বুঝবে তার আশঙ্কা ভুল।
পল্টূ বই নিয়ে বসে। রান্না প্রায় শেষ ভাত চাপিয়ে দিয়ে স্নানে ঢুকে গেল খাদিজা বেগম। বাথরুমে ঢুকে লুঙ্গি খুলে পেটের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,হাত বোলায়।
দেব বুঝতে পেরেছে,খাদিজা কিছু বলবে না।ও যা ভাল বোঝে করবে। আজ সন্ধ্যেবেলা রিপোর্ট পাওয়া যাবে। দেব বলছে পজিটিভ গভীর আস্থা দেবের প্রতি,এখন মনে হচ্ছে আরো আগে হলে ভাল হত।দেবকে খাইয়ে কলেজ বেরিয়ে গেল খাদিজা বেগম।
যশবিন্দার এখন নার্সিহোমে বেরোবে।কাল রাতে পরমিত ফোন করে জানালো চৌতালা না কে সে নাকি তার জন্য চণ্ডিগড়ে নার্সিং হোম করে দেবে।পরমিত নিজের জ্যাঠতুতো ভাই হলেও ওকে বিশ্বাস নেই,স্বার্থের জন্য সব কাজ করতে পারে।কালকের কাগজে দেখেছিল ড্যাফোডিল নার্সিং হোমে গাইনি চেয়েছে। অঙ্গনের সঙ্গে একটু কথা বলতে পারলে ভাল হত।আবার মনে হয় তার ঝামেলার জন্য অঙ্গনকে জড়ানো ঠিক হবে না।
দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল।পুজোর পর পৌর নির্বাচন।দীনেশবাবু জানেন এই কেন্দ্র মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাবে তিনি আর সুযোগ পাবেন না তাই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।অপালাই এখন সব দেখাশোনা করে,মানুষজনও দরকারে অদরকারে তার কাছেই আসে। সারাদিনের ব্যস্ততায় লক্ষণের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় না,এখন দুপুর বেলা দুজনে পাশাপাশি শুয়ে বিশ্রাম করছে।লক্ষণ পিছন থেকে কাপড় তুলে অপুসোনার পাছা টিপে দিচ্ছে।বাইরে বলাই এসে ডাকাডাকি করে,অপুদি--অপুদি। অপালা উঠে জানলা দিয়ে মুখ বাড়াতে বলাই বলল,তাড়াতাড়ি এসো হেভি কিচাইন লেগে গেছে।
--কিসের কিচাইন?
--দেববাবুকে দুটো লোক আর একটা মেয়েছেলে ধরে যা-না তাই করছে।
অপালা শাড়ী জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল।তাকে দেখে জুটে গেল আরো কিছু ছেলে। দেববাবুকে দশ হাজার টাকা দিয়েছিল ঘর ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে এখন বলছে ঘর ভাড়া দেবে না। অপালা মহিলার কাছে গিয়ে ভাল করে দেখে বলল,খুব চেনা চেনা লাগছে, আপনার নাম হেলেন না?
--না চায়না।মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
--ঐ হল,আপনি পুব পাড়ায় ছিলেন না?
লোকদুটির হম্বিতম্বি থেমে গেছে।একজন বলল,দিদি ঠিক আছে ঘর ভাড়া দেবেন না এ্যাডভান্সটা তো ফেরত দেবেন।
--শুনুন চায়না এটা ভদ্রলোকের পাড়া এখানে ওসব ব্যবসা চবে না।
--আমরা এ পাড়ায় থাকবো না কিন্তু টাকাটা মার হয়ে যাবে?
--কত টাকা?
--দশ হাজার কি স্যার মিথ্যে বলছি?
--শুনুন অতগুলো টাকা কেউ পকেটে নিয়ে ঘোরে না। বললেই হুট করে বের করে দেবে।কি দেববাবু কবে টাকা দেবেন?
--এখন পাঁচ হাজার আছে বাকীটা পরে দেবো। দেবব্রত বললেন।
--যান টাকাটা নিয়ে আসুন।শুনুন ভাই অভাবী মানুষ ঘর ভাড়া দেবে ভেবেছিলেন কোনো মজবুরি আছে হয়তো তাই দিতে পারছে ন না।
--দিদি উনি মনে হয় অন্য কাউকে দিবার মতলব করেছেন।
--আমি কথা দিচ্ছি ভাড়া দিলে আপনাদের দেবে কিন্তু এই চায়না টায়না চলবে না।
--কিন্তু বাকীটাকা?
দেবব্রত বাবু ঘর থেকে টাকা এনে অপলার হাতে দিলেন।অপালা জিজ্ঞেস করে,দেববাবু বাকী টাকা?
দূর থেকে পুলিশের গাড়ী আসতে দেখা যায়।লোকটি অপলার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে বলল,ঠিক আছে আমরা আর একদিন এসে বাকী টাকা নেয়ে যাবো। ওরা দ্রুত চলে গেল। পুলিশের গাড়ী রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করে। তারপর একেবারে ভীড়ের কাছে এসে থামে। একজন কালো পোষাকপরা উকিল গাড়ী থেকে নামলেন, তারপর একজন অফিসার নেমে জিজ্ঞেস করেন, ড.সোমের বাড়ী এটা?
অপলা এগিয়ে গিয়ে বলল,আমি পার্টির নেতা আমাকে বলুন।
--পার্টির ব্যাপার নয় ঝামেলা করবেন না কাজ করতে দিন। কোর্টের অর্ডার বাড়ীতে কেউ থাকলে খালি করে দিন।
অপলা বুঝতে পারে এখানে থাকলে তার মর্যাদা থাকবে না।আশপাশে বেশ ভীড় জমে গেছে। লোকগুলো পুলিশের গাড়ি দেখে পালিয়েছে। তারও কেটে পড়া ভাল। দেবব্রতবাবু এগিয়ে গিয়ে বলেন, স্যার বউ মেয়ে নিয়ে এখন কোথায় যাবো?
--বাড়ীটা কি আপনার?
--আমার বোনের বাড়ী।
অফিসার ভদ্রলোক কি ভাবলেন তারপর জিজ্ঞেস করেন,মিসেস পার্বতী সোম আপনার বোন?
--আমার বোন মনোরমা সোম।
--আপনি বাড়ী খালি করুণ।সঙ্গে কিছু লোকজন ছিল তাদের বললেন,এই খালি করো।
দেবব্রত বলল,এ্যাই কেউ জগাদাকে খবর দেতো।
কেউ নড়ল না অসহায়ভাবে ভীড়ের দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত কি ভাবে তারপর ঘরে গিয়ে বউকে বের করে আনলেন,মেয়েরা কলেজে।বউকে বললেন, অপেক্ষা করো আমি এখুনি আসছি।
দেবব্রত কোথায় চলে গেল।ধীরে ধীরে ভীড় পাতলা হয়ে গেল।ডাইকরা আসবাব পত্রের মধ্যে মেয়ে নিয়ে বসে থাকে বাসন্তী।
বিকেলের দিকে খাদিজা বেগম কলেজ থেকে রিক্সায় ফিরলেন।দেব গাড়ি নিয়ে গেছে। সিড়ি দিয়ে উঠে তিনতলায় তার ফ্লাটের সামনে দেখল একজন লোক বসে আছে। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,আপনি এখানে?
--আমি পল্টুর মামা।পল্টু নেই?
খাদিজা বেগম চিনতে পারে এই ভদ্রলোক দেবের মামা,হ্যা একবার নার্সিং হোমে দেখেছিল। খাদিজা বেগম বলল,ওর ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।আমি মুসলিম আপত্তি না থাকলে ভিতরে অপেক্ষা করত পারেন।
দেববাবু ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলেন। খাদিজা বেগম হরে গিয়ে চেঞ্জ করে বাইরে এসে জিজ্ঞেস করে,চা খেতে আপত্তি আছে?
--আপনি খেটে খুটে এলেন আবার চা?
--আমি আমার জন্য করবো।
--ঠিক আছে করুণ।
দেবব্রতবাবুকে চা দিয়ে নিজে এক কাপ নিয়ে সামনে সোফায় বসে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,এমনি সব খবর ভাল তো?
দেবব্রত চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,আর খবর,ঐ দক্ষিণী মেয়েছেলেটা আগে না্সিং হোমটা হাতিয়েছে এখন বাড়ীটার উপর নজর পড়েছে--।
--প্লিজ দেববাবু,আমি এভাবে কথা বলতে অভ্যস্থ নই। আমি শুনতে চাই না।আপনি চা খান।খাদিজা বেগম উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।
দেবব্রত অপ্রস্তুত মনে মনে ভাবেন, ফ্লাট ছেড়ে আসার যন্ত্রণাটা ভুলতে পারেনি। পল্টু আসুক তাকেই সব বলবে।তার বোঝা উচিত ছিল এই নেড়ে মেয়েছেলেটা সুযোগ পেয়ে বদলা নেবেই। নেহাত দায়ে পড়ে এসেছেন না হলে এর মুখ দেখতে বয়ে গেছে। এখানে বসে কল্পনা করতে পারছেন মাল পত্তর পড়ে রয়েছে বাড়ীর বাইরে,মেয়েরা এতক্ষণে ফিরে এসেছে।বাসন্তী তাদের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।পাড়ার লোকেরা ভীড় করে মজা দেখছে।
নীচে গাড়ীর হর্ণের শব্দ পাওয়া গেল।খাদিজা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকণিতে গেলেন। দেব ফিরেছে,ইকবাল দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ী থেকে নেমে উপর দিকে তাকাল বেগমকে দেখে হাসি বিনিময় করে।পল্টূ ঘরে ঢুকে সোফায় মামাকে দেখে অবাক হয়ে বলে, কি ব্যাপার তুমি?
--একটা দরকারে এসেছি তোর কাছে।
--এক মিনিট।বলে ঘরে ঢুকে গেল।
খাদিজা বেগম তোয়ালে দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিল। তারপর জামা প্যাণ্ট খুলে লুঙ্গি পরিয়ে দিয়ে বলল,তুমি বোসো আমি চা দিচ্ছি।
--শোনো একটা কথা।মাম্মী এই চাবিটা দিলেন,আমাদের বাড়ী এখন ফাকা।এটা রেখে দাও।
--বসার ব্যাপারে কি কথা হল?
--তোমার সঙ্গে কথা বলে নিতে বলেছি।আর পরশু চারটে অপারেশন।তোমার মনে আছে ট্রেনে দেখা হয়েছিল উর্মিলা চ্যাটার্জি?
--আচ্ছা পরে শুনবো।তুমি যাও কথা বলো,উনি অনেকক্ষণ থেকে বসে আছেন।
কবে কখন বসবে তাও ঠিক করে দেবে বউ? খাদিজা বেগম মনে মনে হাসে। হায় খোদা একি দায়িত্ব তুমি দিয়েছো।
পল্টূ সবিস্তারে দেবব্রত বাবুর কাছে শুনল তারপর বলল,তুমি ওকে বলেছো? এতক্ষণ বসে না থেকে ওকে বলতে পারতে?এ্যাই অঞ্জু শোনো তো মামা কি বলছে?
হায় ভগবান শেষে কপালে এই ছিল? একটা বেজাত মেয়েছেলের কাছে দয়া ভিক্ষে করতে হবে? খাদিজা বেগম চা নিয়ে ঢুকতে পল্টু বলল,আমি কি একটু বিশ্রাম করতে পারি?
খাদিজা বেগম ব্যস্ত হয়ে বলল,হ্যা হ্যা তুমি চল।শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল,চা খেয়ে শুয়ে বিশ্রাম করো।কতক্ষণ পর এলো কোথায় একটু সেবা যত্ন করবে তা না অবাঞ্ছিত অতিথি।
দেবব্রত বাবুর কাছে এসে বলল,কি হয়েছে বলুন,একটু প্রোলাইটলি বলবেন, বিশেষ করে মেয়েদের সম্পর্কে।
অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন এখন বুঝতে পারছেন ঘরের ছেলেই যদি বংশ মর্যাদা রাখতে না পারে ঈশ্বরের সাধ্য কি?নিরুপায় হয়ে সারাদিনের ঘটনা একের পর এক বলে গেলেন। মেয়েছেলেটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে না শুনছে।ইকবাল ঢুকে বলল, মেমসাব এই ফাইলটা গাড়ীতে ছিল।
--হ্যা তুমি বোসো,চা খাবে তো?আর একটা কথা তুমি কাছাকাছি কোনো নার্সিং হোমে তোমার বিবিকে ভর্তি করে দাও।
--কিন্তু অত টাকা--।
--এত কথা বল কেন,বলছি ভর্তি করে দাও।
--জ্বি মেমসাব।
--দেববাবু একটু বসুন।
ঘরে ঢুকে দেবকে বলল,আমি একটু আসছি।তারপর সারা গায়ে হাত বুলিয়ে বুকে গাল রেখে বলল,ভাবছি একতলায় দূটো ঘর দেববাবুর জন্য খুলে দেবো।তোমার আপত্তি নেই তো?
--এসো কানে কানে বলি।
খাদিজা বেগম বুঝতে পেরেও কান মুখের কাছে নিয়ে গেল।পল্টূ জড়িয়ে ধরে ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।উম-উম করতে করতে ঠোট ছাড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, এখন কেমন লাগছে?
--বেশ ভাল।
--খালি দুষ্টুমি।খাদিজা বেগম ইকবালকে চা দিয়ে চেঞ্জ করতে গেল।
দেবব্রত ভাবে এ এক আজব জায়গা শালা একটা ড্রাইভার তার সঙ্গে বসে চা খাচ্ছে। নাম শুনে মনে হচ্ছে এ ব্যাটাও নেড়ে।মহিলাকে পাড়ায় যেমন দেখেছিলেন ঠিক তেমনিই আছেন। বয়স তো কম হয়নি ছুকরির মত ছুটে বেড়াচ্ছে কেমন।রূপ আরো খোলতাই হয়ছে। এমন করছে যেন পল্টু ওর বিয়ে করা স্বামী। চাবি নিয়ে তৈরী হয়ে খাদিজা বেগম এসে বলল,চলুন।ওকে একা রেখে যাচ্ছি ক্লান্ত হয়ে সবে ফিরল,ইকবাল চলো।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬৩]ড.সোমের বাড়ীর নীচে যখন গাড়ী এসে থামলো সন্ধ্যা নামে নামে অবস্থা।খাদিজা বেগমের চোখে রোদ চশমা। ভীড়ের মধ্যে ছিল গজেন,চমকে ঊঠল ভদমহিলাকে কোথায় দেখেছে মনে করার চেষ্টা করে।পাড়ার চেহারা অনেক বদলে গেছে।ব্যাগ খুলে চাবি দেববাবুকে দিতে তালা খুললেন। ভিতরে ঢুকে খাদিজা বেগম বলে,মালপত্র নিয়ে এই দুটো ঘরে রাখুন।তারপর ইকবালকে নিয়ে উপরে উঠে সব ঘরে তালা দিয়ে দিল। তারপর নীচে এসে দেববাবুকে বলল,আর কোনো ঘর ব্যবহার করবেন না।আর একদিন এসে ঘরদোর পরিস্কার করার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবো।বাইরে বেরোতে ভীড় থেকে এক মহিলা বের হয়ে জিজ্ঞেস করে, ছোড়দা আসে নাই?
খাদিজা বেগম বুঝতে চেষ্টা করে কি বলছেন মহিলা,ভীড় থেকে একজন বলল, মিতামাসী পল্টূদের বাড়ী কাজ করতো।
এবার চিনতে পারে খাদিজা জিজ্ঞস করে,মাসী কেমন আছেন?
--আর কেমন?ভাবলাম বুঝি ছোড়দা আসছে তাই ছুটতি ছুটতি আসলাম।কতদিন দেখিনা।
--আমি একদিন এসে নিয়ে যাবো ছোড়দাকে দেখে আসবেন।ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে মিতার হাতে দিয়ে বলল,মাসী এটা ছোড়দা আপনাকে দিতে বলেছে, রাখুন।
মিতা উল্লসিত হয়ে বলল,ছোড়দা বলেছে?আমারে ভোলে নাই?যেমন মা তার তেমন বেটা।
গাড়ীতে উঠতে যাবে কোথা থেকে লক্ষণ এসে উপস্থিত।ম্যাম আমার উপর আপনি রাগ করেছেন?
খাদিজা বেগম হেসে বলল,ওমা রাগ করবো কেন?কলেজের কাছে ভাল ফ্লাট পেলাম ,চলে গেলাম।
--ম্যাডাম আমি বিয়ে করেছি,অপুকে ঠেলে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই আমার ওয়াইফ।
রোদ চশমা খুলে খাদিজা বেগম বলল,একদিন দুটিতে আসুন আমার ওখানে আলাপ করা যাবে।
গাড়ী বেরিয়ে যাবারপর দিলীপ এল ভেবেছিল পল্টু এসেছে,এসে শুনল অধ্যাপিকা বোউদি।যাবো যাবো করে যাওয়া হয় না।বিয়ের দিন ঠিক হলে একবার যেতেই হবে।
বাসায় ফিরে অপলা জিজ্ঞেস করে,মেয়েছেলেটা কে,আপনে কি করিছিলেন?
লক্ষণ বিরক্ত হয় বলে,তুমি মেয়েছেলে মেয়েছেলে করবে নাতো।কদিন পর নির্বাচনে দাঁড়াবে ভদ্রভাবে কথা বলা শেখো।
--তালি কি বেটাছেলে বলবো?আপনে আমারে কথা বলা শিখাবেন না তো। অপলা রেগে যায়।
--জানো উনি কে?কলেজে পড়ান,বলবে মহিলা।
--আপনে উনার সাথে কি করিছিলেন বললেন না তো?
--উনি এখানে থাকতেন,মুসলিম বলে ওর বদনাম করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেববাবু ছিল এর পিছনে।
--মুসলমান?ভারী সোন্দর দেখতে মুসলমানরা খুব সোন্দর দেখতি হয়।কিন্তু দেববাবুরেই তো ঘরে ঢুকয়ে দিয়ে গেলেন।
--শুধু দেখতে নয় মনটাও সুন্দর। একেই বলে শিক্ষার গুণ। লক্ষণ বলল।
কথাটা অপলার ভাল না লাগলেও কিছু বলল না। বাংলা দেশে সেও মেট্রিক পাস করেছিল।কবেকার কথা এখন সেসব ভাল মনে নেই।পুব পাড়া থেকে ছার্টিফিকেটটা একদিন নিয়ে আসতে হবে।
গজেন হাপাতে হাপাতে বাড়ীতে ঢুকে বলল,বৌদি সেই মহিলাকে দেখলাম। মঞ্জুলা দেওরকে অবাক হয়ে দেখে জিজ্ঞেস করে,কোন মহিলা?
--যার ফ্লাট আমরা কিনেছি।
মঞ্জুলার মনে পড়ল জিজ্ঞেস করল,সেই মুসলিম মহিলা? এখানে কোথায় এসেছিলেন?
--ড.সোমের বাড়ী থেকে দেববাবুকে বের করে দিয়েছিল উনি আবার ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন।
--কোর্টের অর্ডার ছিল ওকে কেউ বাধা দিল না?
--অতশত জানি না গাড়ী থেকে নামলেন,তালা খুলে দিয়ে আবার গাড়ীতে উঠে চলে গেলেন। দেখলাম ভদ্রমহিলাকে খুব সমীহ করছিল।
ইকবালকে বিদায় করে খাদিজা বেগম তরতর করে উঠে এল নিজের ফ্লাটে। পল্টূ দরজা খুলে দিল। খাদিজা বেগম বলল, এতক্ষণ একা একা ছিলে খুব খারাপ লাগছে।
খাদিজা ঘরে ঢুকে কাপড় ছাড়তে থাকে।
--যা হয়ে গেছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।এখন তো আর একা নই। পল্টূ বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বেগমের পেটের দিকে তাকিয়ে হাত পেটের উপর রাখে।
--কি হচ্ছে দাড়াও কাপড়টা ছেড়ে নিই।
কাপড় বদলে ফিরে আসে খাদিজা বেগম,নজরে পড়ে টেবিলে একটা খাম উপরে লেখা ড.অঞ্জনা সোম।
রিপোর্ট এসে গেছে? দ্রুত খাম তুলে বলল, তুমি বলোনি তো রিপোর্ট এসে গেছে?
পল্টূ গভীরভাবে বলে,আসতে না আসতে কি করে এমন খবর দেবো বলো?
মুহুর্তে ম্লান হয়ে গেল খাদিজা বেগমের মুখ বলল, তুমি যে বলেছিলে আই এ্যাম সিয়োর পজিটিভ?
--ভুল মানুষ মাত্রই হতে পারে।পল্টু বলল।
--আমি জানতাম এরকম কিছু একটা হবেই।খাদিজা বেগম খাম খুলে দেখল পজিটিভ, সোফায় বসে থাকা দেবের বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলল,এ্যাই অসভ্য ছেলে,ইয়ার্কি হচ্ছে?দেবের ঠোট সবলে মুখে নিয়ে জিভ ঠেলে দিল মুখের ভিতর।
পল্টু বেগমকে জড়িয়ে ধরে টাল সামাবার চেষ্টা করে। খাদিজা বেগম বলল, আমি একেবারে ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমি জানতাম খোদা মেহেরবান এত নিষ্ঠুর হবে না।
--কি পাগলামী হচ্ছে এই অবস্থায় এভাবে কেউ ঝাপিয়ে পড়ে?
খাদিজা বেগম নিজেকে সামলে নিল নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে বলল,স্যরি।
পল্টু অবাক হয়ে দেখল যেন একটি বাচ্চার মত উচ্ছলিত অঞ্জনা জিজ্ঞেস করল, তোমার মা হওয়ার এত ইচ্ছে কখনো বলোনি তো?
খাদিজা বেগম চোখ নামিয়ে লাজুক গলায় বলল,যদি মেয়ে হতে বুঝতে পারতে। এ এক আদিম প্রবৃত্তি।
--ভুলে যেও না সন্তান পালন বিরাট এক ঝক্কি।
খাদিজা বেগম দেবকে বুকে চেপে বলল,সে আমি প্রতিদিন প্রতি পদে কি বুঝতে পারছি না?তারপর ছেড়েদিয়ে বলল,তুমি তো কিছু খাওনি,একটু বোসো আমি টিফিন করে আনছি।
খাদিজা বেগম ময়দা মাখতে মাখতে রান্না ঘর থেকে বলল,জানো লক্ষণবাবুর বউ দেখলাম আজ।দেখে মনে হল বেশ চালাক চতুর।
--তুমি দেখে বুঝতে পারো?
--সন্দেহ আছে? তোমাকে দেখে বুঝতে পারিনি?
আলু চচ্চড়ি আর লুচি একটু পরেই তো ভাত খাবে। প্লেটে খাবার দিয়ে বলল,আমি চা নিয়ে আসছি বলে খাদিজা বেগম রান্না ঘরে চলে গেল। পল্টু ভাবছে অতদুর থেকে এল আবার এই পরিশ্রম,একটা কাজের লোক রাখতেই হবে।পাড়ার খবর কিছুই শোনা হল না। দিলীপের সঙ্গে দেখা হয় নি? খাদিজা বেগম চা আর নিজের খাবার নিয়ে এসে দেবের সামনে বসে জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছো বলতো?
--ভাবছি এ সময় রান্না বান্নার চাপ একটু কমাতে হবে।একজন সবসময়ের লোক রাখার কথা ভাবছি।
--তোমাকে বলা হয়নি মিতামাসীর সঙ্গে দেখা হল।তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল,আমি তোমার নাম করে ওকে পঞ্চাশটা টাকা দিতে খুব খুশি।
--অঞ্জু তুমি কিভাবে আমার ইচ্ছে টের পাও? মিতামাসী খুব ভালবাসতো আমাকে। তুমি মিতা মাসীকে বলতে পারতে একজন বিশ্বাসী লোক যদি দিতে পারে।তুমি কলেজ চলে যাবে আমিও থাকবো না।আজেবাজে লোক হলে মুস্কিল।
--তুমি কি ভাবছো আমি সব বুঝতে পারি,তোমাকে চিন্তা করতে হবে না কালকের কথা ভাবো,অপারেশন আছে। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি।
খাদিজাবেগম রান্না ঘরে গেল,বস্তুত খাদিজা বেগম অত্যন্ত খুশি।সারা শরীরের পেটটাই তার কাছে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ এখন। ভাবখানা প্রাণ গেলেও যেন পেটের কোনো ক্ষতি না হয়।
নীচের ঘরে মালপত্তর গুছিয়ে দেববাবু বললেন,বাসু এককাপ চা দেবে?
সকাল থেকে কম ধকল গেল না।এরকম অবস্থায় পড়তে হবে কোনো দিন ভাবেন নি। জগা উকিলের উপর সব রাগ পড়ে। বাসিন্তী চা নিয়ে এসে স্বামীর পাশে বসলেন। ভাড়াটিয়াটা বিদায় হয়েছে তার স্বস্তি।স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন,কালো চশমা পরা ওই মেয়েলোকটা কে গো?
--ওর নাম খাদিজা বেগম,কলেজে পড়ায়।ছি-ছি-ছি বংশের নাম ডোবালো।
--উনি না এলে আজ সারারাত আমাদের রাস্তায় কাটাতে হত।বাসন্তীর চোখে কৃতজ্ঞতা।
--ও কে জানো?ও নাকি পল্টূর বউ।লোকের কাছে মুখ দেখাবার জো রইল না?
--খাদিজা বেগম মানে তো মুসলমান?
--তা হলে আর বলছি কি? তুই আর মেয়ে পেলি না?আমাকে বলতিস ওর চেয়ে হাজারগুণ সুব্দরী আমি ব্যবস্থা করে দিতাম।
বাসন্তী অবাক হয় এক ঝলক দেখেছিল মেয়ে মানুষটা সত্যিই সুন্দরী।স্বামীর রাগত মুখের দিকে তাকিয়ে সেকথা বলার ভরসা হল না।
রাতে পাশাপাশি শুয়ে খাদিজা বেগম বুঝতে পারে দেবের চোখে ঘুম নেই।পাশ ফিরে দেবের গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করে,ঘুম আসছে না করবে?
--না থাক।
--ইচ্ছে করছে না?
--তা নয় পেটে চাপ লাগলে ক্ষতি হতে পারে।সংযত হওয়া ভাল।
খাদিজা বেগম মনে মনে হাসে,মুখে যাই বলুক সন্তানের প্রতি ধীরে ধীরে মায়া জন্মাচ্ছে। উপুড় হয়ে পাছা উচু করে বলল,নেও করো পেটে চাপ লাগবে না।
পল্টূ উঠে খাদিজা বেগমের প্রশস্ত পিঠে গাল রাখে। শীতল স্পর্শ ভাল লাগে। খাদিজা জিজ্ঞেস করল,ওখানেই ঘুমোবে নাকি?তাড়াতাড়ি করো আবার সকালে উঠতে হবে তো,কলেজ আছে না?
পল্টু পাছায় হাত রাখে খাজের ফাকের নীচে স্ফীত যোণীতে হাত দিয়ে বুঝতে পারে ভিজেভিজে।চেরার মুখে ল্যাওড়া ঠেকিয়ে ঠেলতে থাকে।
খাদিজা বেগম অনুভব করে ধীরে ধীরে ঢুকছে তীব্র সুখানুভুতি ছড়িয়ে পড়ছে কোষে কোষে প্রতিটী রক্ত কণিকায়।উম-ম-উ-হু-হু-হু ঠোটে ঠোট চেপে সম্পুর্ণ ল্যাওড়া ভিতরে নিয়ে নিল।দেবের ল্যাওড়া একটু বড় প্রবেশ মুখে একটু ব্যথা লাগলেও ভিতরে ঢুকলে আর কষ্ট হয় না। তাগাদাদিল,নেও করো। অসুবিধে হলে চুল সামনের দিকে সরিয়ে দাও। ঘাড়ের থেকে চুলের গোছা সামনে সরিয়ে দিয়ে পল্টূ পাছা পিছন দিকে সরিয়ে ল্যাওড়া ভিতরে ইঞ্চি তিনেক রেখে আবার সম্পুর্ণ ভিতরে পুরে দিল।এত দ্রুত করছে কিন্তু খাদিজা কিছু বলে না এ সময় বলা ঠিক না।মুখ বুজে সহ্য করে। এইভাবে চুদতে চুদতে খাদিজার জল খসে গেল। উউউউ-হুউউহু করতে করতে খাদিজাবেগম জিজ্ঞেস করে, তোমার হয় নি?
চোদার গতি বাড়তে থাকে খাদিজা বেগম বুঝতে পারে দেবের বেরোবার সময় হয়ে গেছে।গুদের ঠোট দিয়ে ল্যাওড়া কামড়ে ধরে।দুহাতে চেপে ধরেছে দুহাত। ভিতরে উষ্ণ তরলের স্পর্শ পায়।তার মানে বেরোচ্ছে?--বেরোক, খাদিজা বেগম অপেক্ষা করে কখন দেব বের করে।আচল দিয়ে মুখ মুছে দিল,ঘেমে গেছে বেচারি।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬৪]
দিলীপের চাকরি বছর খানেক পর স্থায়ী হয়। রমিতার সঙ্গে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে। রমেনবাবুর বাড়ী ভেঙ্গে যে ফ্লাট হচ্ছে দিলীপ সেখানে ফ্লাট নিয়েছে বিয়ের পর বউ নিয়ে সেখানে উঠবে। নিজেদের টালির বাড়ী কি করবে ঠিক করেনি। পল্টুকে নেমন্তন করতে গেছিল দেখা হয় নি। খাদিজা বেগম খুব যত্নআত্তি করেছে। কলেজ যায় না বাড়ীতেই থকে। ড.অনঙ্গদেব সোমের খ্যাতি উপার্জনের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।বাঁধ উপচে হুড়হুড় করে অর্থ আসছে।বউকে দেখে বুঝতে পারে ওনার যাওয়া সম্ভব নয়। নাজমা নামে একজন মহিলা স্বল্প সময়ের জন্য থাকে।ঠিক কাজের লোক নয় চেনাশোনা। দিলীপকে বলল,যদি কোনো লোক পাওয়া যায়।
শীলাদেবী অসুস্থ হার্ট দুর্বল।ছেলেটাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।ওর বাবারও বয়স হয়েছে কিছু করতে গেলেই দিলীপ বাধা দেয়,তোমাকে কিছু করতে হবে না। করতে হবে না বললেই হবে ছেলের বিয়ে বাবা কি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে?বিয়ে করে বউ নিয়ে ফ্লাটে তুলেছে কাল সারারাত দুই বোন ফ্লাটেই ছিল।সাত সকালে কোথায় গেল ছেলেটা?
কাল সারারাত রমিতার মুখ দেখেনি ফ্লাটে গিয়ে দেখল গিজগিজ করছে পাড়ার মেয়েরা ঘিরে বসে আছে রমিতাকে। দিলিপকে দেখে কে একজন বলল,ওই তো এসে গেছে যার চিন্তা করছিলে।
রমিতা মেয়েটিকে চিমটি কাটল।দিলীপ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,আমি পরে আসছি।দেখি ওদিকে কতদুর কি হল? সিড়ি দিয়ে নামতে ক্যাটারারের ছেলেটার সঙ্গে দেখা হতে জিজ্ঞেস করল,সব ঠিক আছে তো?
--এবেলা কজন খাবে?
লক্ষণদাকে দেখে দিলীপ বলল,লক্ষণদাকে জিজ্ঞেস কর।
দিলীপের মনে পড়ল বৌদির কথা।মিতামাসীকে বলে যদি কিছু ব্যবস্থা করা যায়। বস্তির দিকে রওনা হল। মিতামাসীর জামাই মারা যাবার পর মেয়ে ললিতা দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকে।ছেলে কলেজে পড়ে মেয়ে স্কুলে। ললিতা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলে মেয়েদের দেখাশুনা করে দিদিমা। দিলীপ সব কথা খুলে বলল।মিতামাসী অবাক হুয়ে জিজ্ঞেস করে,ছোড়দার বউ পোয়াতি? তাহলি সামলাচ্ছে কি করে?
আলোচনা করে ঠিক হয় ললিতা যাবে কিন্তু মাঝে মাঝে এসে ছেলেমেয়েকে দেখে যাবে। দিলীপ স্বস্তিবোধ করে। রাতে পল্টু আসলে কথা বলা যাবে। পাড়ায় ফিরে আসতে শমিতা বলল,দিলীপদা তোমাকে বাবা খুজছে।
--একি তুমি?রমির কাছে কে আছে?
শমিতা ফিক করে হেসে বলল,তোমার বউ কচি খুকী নয় যে সব সময় আগলে আগলে রাখতে হবে?
--একটি চাটি দেবো,খুব পাকা হয়েছো?
--হি-হি-হি।তুমি দেখো বাবা কেন খুজছে? শমিতা পালিয়ে গেল।
দিলীপ উপরে ঊঠে দেখল জগমোহন উকিল তার অপেক্ষায় বসে আছেন। দিলীপকে দেখে বললেন,তুমি এসেছো?শোনো ফার্নিচারের দোকান থেকে ফোন করেছিল,মাল পত্তর কি ফ্লাটেই তুলে দেবে?
দিলীপ চিন্তা করে বলল,কদিন পরে ডেলিভারী দিতে পারবে না?
--না বাবা দেরী করা ঠিক হবে না।আজ পেমেণ্ট করতে হবে পেমেণ্ট করার পর ওরা আর পাত্তা দেবে না।অসুবিধে কি আছে প্যারিস হয়ে গেছে কেবল রঙ করা বাকী সরিয়ে সরিয়ে করে নিতে পারবে।
সুমিত্রা চা নিয়ে এলেন। দিলীপ বলল,এখন আবার চা নিয়ে এলেন মা? এবার বিশ্রাম করুণ।
--ছেলে মেয়ের জন্য করতে মায়েদের পরিশ্রম হয় না।সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছো এবার বসে একটু চা খাও।
সুমিত্রা চলে গেলেন না স্বামীর পাশে বসে বললেন,কি জানো বাবা আমার তো ছেলে নেই--।
--এসব কথা আজকে কি দরকার?জগমোহন আপত্তি করেন।
--তুমি সব কথায় কথা বলো কেন?শোন বাবা তুমি আমার শুধু জামাই না আমার ছেলের মত।
পরিবেশ বদলে যায়।সন্তানের জন্য মায়ের আকুলতা সুমিত্রার গলায়।একসময় খুব সদয় ছিলেন না কিন্তু সহজে মানুষ বদলে যায়।মনে পড়ল নিজের কথা যে জীবন যাপন করতো তাতে এ বাড়ীর ধারে কাছে আসার কথা ভাবতে পারতো না।পল্টুর সাহচর্যে জীবন তার একেবারে বদলে গেছে। অনায়াসে আজ সুমিত্রা দেবীর সন্তানের জায়গা নিয়ে নিয়ছে। দিলীপ চা শেষ করে সুমিত্রার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।
বাড়ীর সামনে গাড়ী এসে দাড়াতে শীলাদেবী সন্ত্রস্ত বোধ করে। কে এল আবার কোনো গোলমাল নয়তো?দিলীপকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ ছিল না।এখন একেবারে অন্য মানুষ কিন্তু পুরানো কোনো কিছু আবার ভেবে স্বামীকে ডাকলেন,এই শুনছো দেখো তো কি ব্যাপার?গাড়ী থেকে নেমে পল্টূ একেবারে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে বলল,আণ্টি কেমন আছেন?
আণ্টি?শীলাদেবী ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে দেখেন।পল্টু বলল,চিনতে পারছেন না? --আমি পল্টু দিলীপ কোথায়?
--চিনবো না কেন বাবা?তুমি একেবারে বদলে গেছো।তোমার মা যা করেছেন আমি কি করে তা ভুলবো বাবা?
--বিয়ে বাড়ীর একি ছিরি?
--বিয়ে হচ্ছে ফ্লাটে।এখানে বউ এনে কোথায় তুলবো?আজও বেঁচে আছি সে তোমার বাবার জন্যে। তোমাকে কোথায় বসাই?
পল্টু ইতিমধ্যে একটা পিড়ী নিয়ে মাটিতে বসে পড়েছে।শীলা তটস্থ হয়ে বললেন,এ কোথায় বসলে একেবারে পাগল। শীলাদেবী অতীতে হারিয়ে যান বলেন,তোমার মাকে সবাই ভাবতো অহংকারী পাড়ায় বেশি মিশতেন না।কিন্তু আমি তো জানি মানুষের
প্রতি তার কতখানি দরদ ছিল।
বাড়ীর সামনে ধীরে ধীরে লোক জমতে থাকে।পল্টু বলল,আণ্টি একটু চা হবে?
--দেখো তো ছেলে কি বলে?তুমি বসো এক্ষুনি আমি চা নিয়ে আসছি।
পল্টু বসে বসে শৈশবে হারিয়ে যায়। অনেক বদলে গেছে বিশাল বিশাল ফ্লাট হয়েছে এসেছে নতুন নতুন লোক। সবাইকে চেনেও না।লক্ষণদা বিয়ে করবে কোনোদিন মনে হয় নি। পাড়া পাড়ার লোকজন নিয়ে তিনি সব কিছু ভুলে থাকতেন।সব পাড়াতেই এরকম এক-আধজন থাকে কারো বিপদে আপদে সব সময় অনাহুতভাবে হাজির, কোনো লাভ লোকসান যশ খ্যাতির হিসেব নিকেশ এরা করে না,মানুষের জন্য করায় যে আনন্দ সে টুকুতেই তারা তৃপ্ত,আলাদাভাবে ইতিহাস এদের মনে না রাখলেও সমাজে এদের পরোক্ষ অবদান কতটুকু বোঝা যাবে যেদিন এরা থাকবে না। এরাই সবাইকে বেধে রাখে এক গ্রন্থিতে।শৈশবের হাতছানি অনুভব করা যায় কিন্তু সেখানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।শীলা আণ্টি চা দিয়ে বললেন,দেখো তো বা কেমন হল?
পল্টু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,আণ্টি আর এককাপ চা হবে?
--কেন হবে না বাবা? শীলা আণ্টি চা আনতে গেলেন।পল্টূ উঠে বাইরে বেরিয়ে ইকবালকে ডেকে চায়ের কাপ ওর হাতে দিয়ে বলল,চা খেয়ে কাপটা ভিতরে দিয়ে যাবে।
জগমোহনের বাড়ী থেকে বেরিয়ে দিলীপের নজরে পড়ে তার বাড়ীর দিকে মনে হচ্ছে ভীড়। ওদিকে কি হল আবার? একটু এগিয়ে যেতে দেখল একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। পল্টু নাকি কিন্তু এ সময়?কিছু হল নাতো?দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল। ঐ তো বারান্দায় বসে মার সঙ্গে গল্প করছে পল্টূ। দিলীপকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,দিলীপ ওবেলা কিছু জরুরী অপারশন আছে। কিছু মনে করিস না,সংসার গুছিয়ে বোস একদিন আমরা দুজনে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যাবো।
--বৌদি কেমন আছে?
--ভাল আছে,বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সি যা হয়। তোর বউ কোথায় ?
--চল,তোকে নিয়ে যাচ্ছি।বুঝতে পারছি যাক তুই এসেছিস এতেই আমার ভাল লাগছে।
--আণ্টি আমি আসি?
--হ্যা বাবা আবার এসো।শুনেছি তুমি অনেক বড় ডাক্তার হয়েছো?
পল্টূ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল,আপনারা আশির্বাদ করলে আরো বড় ডাক্তার হবো।আসি।
বাইরে বেরিয়ে দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,বেশিদুর হলে গাড়ীতে ওঠ।
--কাছেই রমেনকাকুর বাড়ী ভেঙ্গে ফ্লাট হয়েছে।
পল্টূ বলল,ইকবাল তুমি এসো।দিলীপের সঙ্গে হাটতে হাটতে ফ্লাটের নীচে আসতে একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করল,পল্টূদা ভাল আছো?
পল্টূ দিলীপের দিকে তাকাতে দিলীপ বলল,রমিতার বোন শমিতা।
--মনে নেই কাধে তুলে কুল পাড়তে সাহায্য করেছিলে? শমিতা বলল।
বাচ্চা ছেলের মত উচ্ছসিত হয়ে বলল পল্টু,উঃ কতবড় হয়ে গেছো,চিনতেই পারিনি।
পল্টূ ঢুকতেই ভীড় সরে গেল।পল্টু কাছে গিয়ে বলল,জানো ওবেলা জরূরী কাজ পড়ে গেছে অঞ্জু বলল সকালেই দেখা করে এসো।পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে তার থেকে একটা হার বের করে রমিতার গলায় পরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,পছন্দ হয়েছে? অঞ্জু পছন্দ করে কিনেছে।
--কিছু খাবেন না? রমিতা জিজ্ঞেস করে।
--আণ্টির ওখানে চা খেয়েছি,আর একদিন আসবো।
--কথা দিলেন কিন্তু?
কথার মধ্যে লক্ষণদা এসে হাজির বলল,শুনলাম তুই এসেছিস? চল আমার ফ্লাটে একটূ চা খেয়ে যাবি।
দিলীপ বলল,আগে একটা জরুরী কাজ সেরে আসি,তারপর আসছি।
পল্টূ অবাক হয়ে তাকায় আবার কি জরূরী কাজ?দিলীপ বলল,একজন সবসময়ের লোক ব্যবস্থা করেছি তুই চল।
--করেছিস?তুই যা উপকার করলি,ইকবালের বউ মাঝে মাঝে আসে নার্সিং হোমে গিয়ে শান্তিতে কাজ করতে পারিনা।কোথায় যেতে হবে?
--গাড়ীতে ওঠ বলছি।লক্ষণদা যাবে?
তিনজনে গাড়ী নিয়ে মিতামাসীর বাড়ীর কাছে নামল। গাড়ীর শব্দে বেরিয়ে এল মিতামাসী। পল্টুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল। ললিতা ইতস্তত করছিল না বলে কাজ ছেড়ে চলে যাবে? লক্ষণদা বলল,তোমায় কিছু ভাবতে হবে না আমি বলে দেবো। ললিতাকে নিয়ে গাড়ী ফ্লাটের নীচে দাড়াতে পল্টূ বলল,বেশিক্ষণ বসবো না কিন্তু খালি এককাপ চা।
দিলীপ বলল,পল্টু আমি আসি অনেক কাজ পড়ে আছে।
--হ্যা হ্যা,বিয়ে ভালয় ভালয় মিটুক আমি ওকে নিয়ে আসবো।
দিলীপের উপরে লক্ষণদার ফ্লাট। ভিতরে ঢুকেই লক্ষণদা হাক পাড়ে,অপু একটু চা করো।
অপলা এসে কিছু বলতে গিয়ে পল্টুকে দেখে লক্ষণকে বলল,কোথায় ছিলেন আপনি? দিলীপের বাসায় সেই ডাক্তার আসছিল।
--তুমি দুই কাপ চা নিয়ে এসো।তারপর শুনছি তোমার কথা। লক্ষণদা মজা পায়।
অপলা চা নিয়ে এল।এই মানুষটা কেডা উনি কিছু বলে না।বলা নাই কওয়া নাই এইভাবে কেউ অপরিচিত মানুষ ঘরে ঢুকায়? পল্টু দ্রুত চা শেষ করে। লক্ষণদা বলল,পল্টু তোর বউদিকে একটু দেখতো।তুমি শুয়ে পড়ো।
অপলা হতবাক কি কয় লোকটা,কাপড় চোপড় চাপাদিয়ে শুয়ে পড়ল অপলা। পল্টু পেটের কাপড় সরায়,অপলার শরীর শির শির করে।গভীর মনোযোগ দিয়ে কাপড় কোমরের নীচে নামিয়ে হাত বোলায় পেটে। একসময় চোখ খুলে বলল পল্টু,ঠিক আছে।এত চিন্তা করছো কেন?
পল্টুকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসতে অপলা জিজ্ঞেস করে,উনি সাধু না ফকির?চক্ষু বুজে মনে হল মন্ত্র পড়তেছিল।
--হ্যা-হ্যা-হ্যা।
--হাসেন ক্যান?
--পল্টু বড় ডাক্তার। আমারে খুব সম্মান করে।
--এই সেই ডাক্তার? আমারে বলেন নাই তো? রামো কি ভাবলো বলেন তো?
ললিতা পিছনের সিটে জড়োসড়ো বসে আছে।পল্টূ ড্রাইভারের পাশে বসেছে। পান্থনিবাসে যখন পৌছালো পল্টু খুব ক্লান্ত। ইকবালকে বিকেলে আসতে বলে ললিতাকে নিয়ে উপরে উঠে গেল।খাদিজা বেগম দরজা খুলতে পল্টু জিজ্ঞেস করে, নাজমা চলে গেছে?
--যাবে না?কটা বাজে খেয়াল আছে?আমি দেখতে পারি না বলে--।আরো কিছু বলতো কিন্তু সঙ্গে ললিতাকে দেখে থেমে যায়।
পল্টু ভিতরে ঢুকে বলল,এসো ললিতা।মিতামাসীর মেয়ে ললিতা তুমি দেখোনি।
খাদিজা অবাক হয়ে দেখে ললিতার বিধবা বেশ তারপর বলল,শোনো এই শাড়ী এখানে চলবে না।
ললিতার ধন্দ্ব লাগে মামীর বয়স মনে হয় মামার থেকে বেশি।খাদিজা বেগমের গলায় মমতার স্পর্শ পেয়ে মামীকে তার ভাল লেগে গেল। খাদিজা বেগম বলল,তুমি খেয়ে এসেছো?
--হ্যা আমি বাড়ী থিকে খেয়ে এসেছি।
--তাহলে বিশ্রাম করো।দেব খেতে এসো।
ললিতা অবাক হয়ে চারদিকে চোখ বুলায়।লোকে বলতেছিল মামী নাকি মুসলমান, দেখে তো কিছু বোঝা গেল না।কি সোন্দর ব্যাভার।দেখতে লক্ষী প্রতিমার মত।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬৫]
ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নামে।যশবিন্দারের কাজ শেষ।নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে নজরে পড়ল পরমিত দাঁড়িয়ে আছে।মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল।নিজের ভাই ভাবতে খারাপ লাগে।বোনের বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।আসল মতলব কি জানতে বাকী নেই। কয়েক পা এগোতেই সামনে এসে দাড়ালো, ডিউটি শেষ?
--হ্যা আজকের মত শেষ।
--কিছু শোচা কি নেহি?
যশবিন্দার বুঝতে পারে কি ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে।না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করল,কোন ব্যাপারে?
--চৌতালাকে বারে মে?
--সাদিকে বারে কুছ শোচা নেহ।একটু সময় দিতে হবে।
যশবিন্দার বুঝতে পারে দিল্লীতে বেশিদিন থাকা যাবে না।এদের হাত থেকে বাঁচতে তাকে পালাতে হবে।কলকাত্তায় ভবানী পুরে যাবার কথা মনে হল।অঙ্গ্নের সাথে মোলাকাত হতে পারে।কেমন আছে অঙ্গন? একবার ফোন করে দেখলে কেমন হয়?
--নেক্সট উইক তাহলে ফাইন্যাল?পরমিত জিজ্ঞেস করল।
মুখ তুলে হাসল,মুখে কিছু বলে না যশবিন্দার।চৌতালা কেন তার সাদিতে কোনো ইচ্ছে নেই।উমর হচ্ছে বাড়ী থেকে তাগাদা দিচ্ছে,পছন্দের কোই লেড়কা হ্যায় কি?মনে মনে হাসে যশ।
কোন ঘরে থাকবে ললিতা সব বুঝিয়ে দিল খাদিজা বেগম।ললিত গ্যাস জ্বালতে জানে আগে গ্যাসে রান্না করেছে। পল্টু একটা কাগজে লিখল লেকভিউ নীল কালিতে তার নীচে লাল কালিতে লিখল ড্যাফোডিল। ললিতাকে বুঝিয়ে বলল,যদি আমাকে কিছু
বলার দরকার হয় তাহলে নীল কালিতে লেখা নম্বরে--তুমি পড়তে পারো?
ললিতা হেসে বলল,কেন পারবো না আমি ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি।
--ভেরি গুড।নীল কালিতে লেখা নম্বর ঘুরিয়ে--।
--তোমারে ফোন করবো?
পল্টু দেখল ললিতাকে দেখে যেমন মনে হয়েছিল তা নয় বেশ স্মার্ট। পল্টু বলল,যদি দেখো মামীর কষ্ট হচ্ছে--।
--ব্যথা উঠলি?
--হ্যা ব্যথা শুরু হলে লাল কালিতে লেখা নম্বর ঘুরিয়ে বলবে ,ডাক্তার সোমের বাড়ী থেকে বলছি এ্যাম্বুলেন্স পাঠান।
--তাহলি কি হবে?
--এ্যাম্বুলেন্স এসে মামীকে নিয়ে যাবে।
--আমি সাথে যাবো না?
--তুমি তো যাবেই তার আগে দরজা বন্ধ করে দেবে।লাল কালির নম্বরে ফোন করে তারপর আমাকে ফোন করে বলবে কি হল না-হোলো?
--মামা কাগজটা ফোনের নীচে রেখে দাও নাহলি তাড়াতাড়ির সময় কোথায় খোজবো?
পল্টু কাগজটা ফোনের নীচে রেখে ঘরে ঢূকে দরজা বন্ধ করে দিল। খাদিজা বেগম বলল,তোমার কি মনে হয় আমি তখন বেহুশ হয়ে যাবো ঐসব আমি পারবো না?
--শিখিয়ে রাখতে দোষ কি? পল্টু বলল।
--আজ কোথায় অপারেশন লেকভিউ?
--হ্যা,এখন অন্য কোথাও যাচ্ছিনা।
পল্টু চেঞ্জ করে বেরোবার জন্য প্রস্তুত হয়। ইকবাল আসার সময় হয়ে এল। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করল,তোমার মামার সঙ্গে দেখা হয় নি?
--অত সময় কোথায়?দিলীপ একটা উপকার করেছে।লক্ষণদা এসে তার বউকে দেখতে বলল।
--বউয়ের কি হয়েছে?
--লক্ষণদার বউ কনসিভ করেছে।
খাদিজা বেগম নিজের পেটে হাত বোলায়। কি করছে এখন ঘুমোচ্ছে? হায় আল্লা ওকে আলোর মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত কোরনা।
নীচে গাড়ীর হর্ণ বাজল।খাদিজা বেগম ডাকল,ললিতা?
ললিতা চা নিয়ে ঢূকল।খাদিজা বেগম খুশি হয়ে বলল,এইতো একদিনেই কাজ শিখে গেছে।
--মামী সবাই বলে আমার নাকি খুব ব্রেন।ললিতা লাজুক গলায় বলল।
পল্টু হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,বাঃ সুন্দর হয়েছে,তুমি করেছো?
--না মামী চা করে ফ্লাসে ভরে রেখেছিল।
--ফ্লাস না বল ফ্লাক্স।খাদিজা বেগম বলল।
ললিতা বলল,ফেলাকস।
পল্টু হেসে ফেলল,দেখে ললিতাও হাসতে থাকে।খাদিজা বেগমও না হেসে পারে না।
পুরানো বাড়ী থেকে খাট ছাড়া সব মালপত্তর ফ্লাটে আনা হয়েছে।দিলীপের মা আজকের রাত পুরানো বাড়ীতেই থাকতে চান। বউভাতে অনেককে বলা হয়েছে। অনেকেই পল্টুর খোজ করছিল।দিলীপকে একান্তে পেয়ে দেবব্রত জিজ্ঞেস করেন,পল্টু তার কথা কিছু বলছিল কিনা? খুব ব্যস্ত ছিল পল্টু সময় করে এসেছিল একটা প্রেজেণ্ট দিয়েই চলে গেছে। দিলীপের কথায় দেবব্রত স্বস্তি পায় না।একদিন ওর সঙ্গে দেখা করা দরকার। অপলা এসেছে দেখে বোঝা যায় সন্তান সম্ভবা। একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিল সারাক্ষণ।জগমোহন তত্তাবধান করছিলেন দেখে বোঝার উপায় নেই উনি বরপক্ষ না কন্যাপক্ষ।সুমিত্রা মেয়ের পাশেই বসেছিলেন।
কয়েক দিন পরের কথা। ইকবাল এসে দেবকে নিয়ে গেছে।যতক্ষণ বাড়ীতে ছিল বেগমের সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। দেবের দিকে তাকিয়ে ভাবে,তার থেকে কত কম বয়স অথচ সেজন্য মনে কোনো আক্ষেপ নেই। যেই দেখে অবাক হয় বিশ্বাস করতে হোচট খায় দেব তার স্বামী।এখন যেন আরও বুড়িয়ে গেছে।যে আসবে তার মনেও কি প্রশ্ন জাগবে না বাবাকে দেখে?এক সময় মনে হয় এই বয়সে সন্তান ধারণ না করলেই পারতো।দেবকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছিল।
আল্লাহ পাক মেহেরবান একটা সন্তান কামনা কি অন্যায়? পেটটা অসম্ভব ফুলেছে। সন্তপর্ণে পেটের উপর হাত বোলায়। হাত ক্রমশ তলপেটের নীচে যোণীতে পৌছায়। শুকনো খটখট করছে। দেব বলছিল বয়স হলে যোণীর ইলাষ্টিটি ভাব কমে যায়।বাচ্চা বেরোতে খুব কষ্ট হয়। ললিতার সাড়াশব্দ নেই মনে হয় ঘুমোচ্ছে। তাকে সান্তনা দেয় মামী কোনো ভয় নাই প্রথম মেয়েটা হবার সময় খুব ভয় পেয়েছিল কিন্তু ছেলের সময় ফুচ করে বের করে দিয়েছে।জ্ঞান ছিল চোখের সামনেই বেরিয়েছে। অকালে মারা না গেলে আরো বের করতো। খাদিজা শুনেছে ওর স্বামী বরাবরই অসুস্থ ছিল ড.সোম ওকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। নিষেধ করেছিলেন কিন্তু ছেলের আকাঙ্খ্যায় বারণ মানে নি।
টেবিলের উপর সাজানো ফল নিজে কেটে খেতে ইচ্ছে করে না। অ্যানিমিয়া শোনার পর থেকে কাড়ি কাড়ি ফল আনা শুরু করেছে। ললিতা বলে,মামী পুয়াতি হলি সবার এনিমি হয়। শরীরের সব রক্ত শত্রুটা শুষে নেয়। অজ্ঞ মেয়েটার কথা শুনতে বেশ লাগে। সব ব্যাপারে কথা বলে ওর সরলতা ওকে এত সাহসী করেছে। মনে হচ্ছে ফোন বাজছে। খাদিজা বেগম ধীরে খাট থেকে নেমে ফোন ধরতে এগিয়ে যায়। শরীর খুব দুর্বল বোধ হয়। ললিতা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে বলল,একী মামী তুমি উঠলে ক্যান আমি তো ধরতিছিলাম।
খাদিজা ফোন কানে নিয়ে বলল,হ্যালো?..হ্যা বলুন...না বাড়ীতে নেই।..আপনি কে বলছেন?...হ্যালো--হ্যালো?
--কে মামী?
--কি জানি?ফোন কেটে দিল।
খাদিজা বেগম মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল,দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিল। ললিতা বলল, এই জন্যি বললাম তুমার উঠতি হবে না। বললি শুনবা না,এখন খুব সাবধানে থাকতি হয়।
--তুই এত কথা বলিস কেন?সন্ধ্যে হয়ে এল,চা কর।
ললিতা এগিয়ে এসে খাদিজা বেগমকে ধরে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, সব সময় নিজির বুদ্ধি খাটাবা না তো?
খাদিজা বেগম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে হেসে বলল,তোর বুদ্ধিতে চলতে হবে?
ললিতার মুখ কালো হয়ে যায়। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। খাদিজা বেগমের খারাপ লাগে জিজ্ঞেস করে,রাগ হয়ে গেল? আচ্ছা ঠিক আছে এবার থেকে তোর কথা শুনে চলবো। এবার চা কর।
ললিতা হেসে বলল,আগে ফল কেটে দিই?
--আগে চা কর,ভীষণ মাথা ধরেছে।
ফোনটা পাওয়ার পর থেকে মাথার মধ্যে একটা চিন্তা ঘুর ঘুর করতে শুরু করে। উপেক্ষা করার চেষ্টা করে তবু আবার ঘুরে ফিরে আসে। ললিতা চা নিয়ে এল।খাদিজা বেগমকে চা দিয়ে নিজে মেঝেতে বসে চা খেতে থাকে। পাশে ফলের ঝুড়ি আর ছুরি।
--তুই এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন?
--ফল সন্ধ্যের আগে খাতি হয়।
খাদিজা বেগম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে দেব এখন কি করছে? ইদানীং বেশি দেরী করে না তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। খাদিজা বেগম ললিতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা ললিতা তোর স্বামী তোকে খুব ভালবাসতো?
ললিতা লজ্জায় লাল হয়। ফল কাটতে কাটতে বলে, কে জানে ভালবাসতো কিনা তবে কোনোদিন আমার গায়ে হাত দেয় নি। কি ভেবে ফিক করে হেসে ফেলে।
--হাসছিস কেন?
--কিছু না এমনি।জানো মামী ও ছেলো একদম পাগল।
--পাগল? কাজকর্ম করতো না?
--সেই পাগল না,আমার মেয়ে হবার পর লুকোয় লুকোয় আমার দুধ খাতো।ললিতা হেসে গড়িয়ে পড়ে আর কি।
খাদিজা বেগম লজ্জা পেল। কথা আর না বাড়তে দেওয়া ভাল।কি কথায় কি এসে পড়বে শেষে।ফল কেটে একটা প্লেটে করে এগিয়ে দিয়ে ললিতা রান্না করতে চলে গেল।
খেয়ে শুয়ে পড়লাম,রান্না ঘরে বাসনের শব্দ পাচ্ছি। প্রথম দিকে আমি লল্লিতাকে সাহায্য করতাম এখন দাঁড়িয়ে থাকলে মাথা ঘোরে।ও অবশ্য রান্না খারাপ করে না। কথায় বলে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। যত আজে বাজে চিন্তা আসছে।ঘুমিয়ে পড়েছিল ললিতার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ললিতা বলল,মামা আসতিছে।
খাদিজা বেগমকে ধরে বসিয়ে দিল। বেল বাজতে দরজা খুলে দিল ললিতা। দেব জিজ্ঞেস করল,কেমন আছে তোর মামী?
--শরীর ভাল না।
খাদিজা বেগম বিরক্ত হয় বড় বেশি কথা বলে ললিতা। দেব ডাক্তার দেখে বুঝতে পারবে না,তোর অত ওস্তাদী করার কি দরকার। দেবকে দেখে মনে হল বেশ ক্লান্ত। কিছু করতে পারছে না ভেবে খুব খারাপ লাগে।
--অঞ্জু তোমার শরীর খারাপ লাগছে?পল্টু ঢুকে জিজ্ঞেস করল।
--ওর কথা বাদ দাওতো।তুমি বিশ্রাম করো।
--তুমি শুয়ে পড়ো দেখি। পল্টু ব্যাগের ভিতর থেকে প্রেশার মাপার যন্ত্র বের করল। খাদিজা বেগমের হাতে জড়িয়ে পাম্প করতে করতে পল্টুর কপালে ভাজ পড়ে। ললিতা পাশে দাঁড়িয়ে দেখে।
খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে, প্রেশার খুব লো?
--তুমি ফল খাচ্ছো না?
--খাবো না কেন,এই তো সন্ধ্যে বেলা খেলাম।
--সকালে খেয়ে আপেল ধুয়ে মাথার কাছে রেখে দিলাম।যেমনকার তেমন পড়ে আছে। ললিতা অনুযোগের সুরে বলল।
--এ্যাই তোকে কি লাগানি ভাঙ্গানি করার জন্য রাখা হয়েছে? তুই এখান থেকে যা।
ললিতা চলে গেল। পল্টু গুম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছো বলতো?
--অঞ্জু রোজ কত কঠিন কঠিণ সিদ্ধান্ত নিই কিন্তু নিজের বউয়ের বেলা কেমন দিশাহারা বোধকরি।
--তুমি চেঞ্জ করে আমার কাছে এসে বোসো দেখবে আমি একেবারে সুস্থ।
ললিতা রান্না ঘরে রান্না করছে। রান্না প্রায় শেষ শুধু ভাত হয়ে গেলে আজকের মত শেষ। মামা মামী গল্প করতেছে সে ভাবে মামী কত বড়,ঐটুক মামার বাচ্চা মামীর পেটে?
পেটে হাত বোলাতে বোলাতে পল্টু জিজ্ঞেস করল, অঞ্জু তোমার যদি মেয়ে হয় খারাপ লাগবে?
খাদিজা বেগম ছেলে না মেয়ে এভাবে ভাবে নি জিজ্ঞেস করে,কেন মেয়ে তোমার পছন্দ নয়?--তুমি মেয়ে আমার মা মেয়ে অপছন্দ হবে কেন?
--আমি অতশত ভাবি না,একটা সন্তান হলেই আমি খুশি।যার মধ্যে আমরা দুজনেই থাকবো। কিভেবে খাদিজা বেগম বলে,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
পল্টু হেসে বলল, মেয়ের কথা কেন ভাবছি?
--তা নয়। আচ্ছা যশ বিন্দার কি কলকাতায় এসেছে?
--যশ? হঠাৎ যশের কথা কেন মনে এল?
--কলকাতায় কিনা তুমি বলো?
--শুনেছিলাম দিল্লীতে একটা নার্সিং হোমে আছে।ভবানীপুরে ওর অনেক রিলেটিভ থাকে আসতেও পারে। কেন বলতো?
পল্টুর মনে পড়ল দিল্লীর কথা।অনেক করেছিল একটা বাঙালী ছেলের জন্য।বলেছিল,বাঙালী ওর খুব ফেভারিট। যশের মনটা উদার ইচ্ছে করলে তাকে বিপদে ফেলতে পারতো।মেয়েদের আসন পল্টুর মনে অনেক উপরে। সমস্ত ক্লেদ তারা নিজেরা গ্রহণ সমাজ সংসারকে তারা পরিপাটি
করে রেখেছে। এখন কেমন আছে বিয়ে-থা করে নিশ্চয়ই সংসারী হয়েছে।খাদিজা জিজ্ঞেস করে,মেয়েটাকে তোমার কেমন মনে হয়েছে?
পল্টু হাসল তারপর কিভেবে বলে,আমাকে খুব সাহায্য করেছে।নতুন জায়গা দিল্লী কিছুই চিনি না জানি না--তবে খুব চঞ্চল।
--বিয়ে করেনি?
খাদিজা বেগম দেবের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে।পল্টু বলল,কি করে বলব? সেদিনের ব্যাপারটা একটা এ্যাক্সিডেণ্ট বলতে পারো।যশও সেজন্য অনুতপ্ত বলেই মনে হয়।পল্টু হাসলো।
--হাসছো কেন?
--মনে হয় বিয়ে হয়ে গেছে,বয়স কম হলনা,তাছাড়া--।
--তাছাড়া কি?
--ওর পিছনে কলেজে অনেককে ঘুর ঘুর করতে দেখেছি।ও অবশ্য পাত্তা দিতনা।
--কেন ওর তোমাকে পছন্দ?
পল্টু ভ্রূ কুচকে বলল,তোমার কি হয়েছে বলতো?এতদিন পর হঠাৎ যশকে নিয়ে পড়লে?কি ব্যাপার বলতো?
--মনে হল ফোন করেছিল।
পল্টূ অবাক হয়ে বলল,ফোন করেছিল?কলকাতায় এসেছে কিনা কিছু বলেছে?
--আমি হ্যালো বলতে ফোন কেটে দিল।
--যশ ফোন কেটে দিল?
--যশ কিনা জানিনা,আমার ওরকম মনে হল।
--ওহ গড! সত্যি অঞ্জূ--।
ললিতা এসে জিজ্ঞেস করে,মামা খেতে দিই?
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬৬]খাদিজা বেগমকে দেখে পল্টু উদবিগ্ন স্বরে বলে,ও হো তুমি আবার কেন উঠে এলে?
--শুয়ে শুয়ে দেখছি না এসে কি করবো? আল্লাহপাকের উপর ভরসা রাখো।
--ভাবছি কদিন ছুটি নিয়ে বাড়ীতে থাকবো।তুমি বোসো আমি মুখ ধুয়ে আসি।
পল্টু বেসিনে হাতমুখ ধুয়ে এসে বলল,চলো ঘরে চলো।
খাদিজা বেগমকে ধরে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে বলল,আমাকে একটু আদর করো।খাদিজা বেগম মুখ তুলে ধরে পল্টু দরজার দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে আনে ঠোটে ঠোট রেখে জিভটা মুখে নিয়ে চুষতে লাগল। তারপর বলল,তুমি বিছানায় বসে খাবে।ললিতা
যা বলে তাই শুনবে।লক্ষ্মী হয়ে থাকবে।কাল থেকে আমি বাড়ীতে থাকবো।
নীচে গাড়ীর হর্ণ বাজে। ব্যালকণিতে গিয়ে দেখা দিয়ে ঘরে এসে পল্টু তৈরী হয়।
পার্বতী ম্যাডাম নীচে নেমেছেন সবাই তটস্থ। অফিসে গিয়ে জব ডিশট্রিবিউশন দেখে বললেন,এটা কি করেছেন?একজনের উপর এত লোড?
--পেশেণ্ট পার্টি সবাই ডাক্তার সোমকে চায় কি করবো বলুন?
--চাইলেই দিতে হবে? ট্যাক্টফুলি ম্যানেজ করতে হবে।ছেলেটা একেবারে বাবার মত মুখ বুজে কাজ করে যায়। পার্বতী ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,পেশেণ্ট পার্টির কথায় নার্সিং হোম চলবে না।ডা.সোমের উপর লোড কমান। আর বলবেন বাড়ী যাবার আগে যেন মাম্মীর সঙ্গে দেখা করে যায়।
পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে সুর্য। পল্টু হেলান দিয়ে বসে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। অঞ্জুর কথা ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। কি করছে অঞ্জু?
ললিতা খাইয়ে ফল কেটে দিয়েছে মামীকে। খাদিজাবেগমের মুখ অরুচি কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। নানা কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।ললিতা ঘরে ঢুকে দেখল পাশেকাটা ফল,ঘুমিয়ে পড়েছে মামী। থালাটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। না খেলে সে কি করতে পারে। বাচ্চা মেয়ে হলে না হয় কথা ছিল।অবশিষ্ট ফল খেয়ে নিল কি করবে ফেলে দেবে?যার জন্য আনা তার চেয়ে বেশি খেতে হয় তাকে।নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। বাড়ী ছেড়ে এসেছে কতদিন,মনে পড়ে ছেলেমেয়ের কথা। মামাকে বললে পৌছে দেবে গাড়ী করে কিন্তু এই অবস্থায় ফেলে যায় কি করে? বাচ্চা হবার পর না হয় ঘুরে আসা যাবে ক-দিন। গাভীন হলে মেয়েদের শরীর একটু খারাপ হয় কিন্তু মামীর শরীর খুব ভেঙ্গেছে। মামার বয়স কম এই বয়সের রসের তেজ খুব বেশি হয়তো সেই তেজ মামীর শরীর নিতে পারছে না। মামা ডাক্তার মামাই ভাল জানে।
ড.সোম ঢুকতেই অপেক্ষমান রোগীর বাড়ীর লোকের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ফিসফাস। পল্টু সোজা উপরে উঠে নিজের চেম্বারে ঢুকে পোষাক বদলায়। টেবিলের উপর পড়ে পাঁচটা ফাইল।টেনে নিয়ে চোখ বোলাতে থাকে। পাঁচজনের চার জনই মহিলা। অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। পল্টু চোখ বন্ধ করে বারবার অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছে আজ।
ললিতার ঘুম ভাঙ্গতে মামীর ঘরে উকি দিল। খাদিজা বেগম ঘুমিয়ে আছে মাথার কাছে বালিশের পাশে একটা ফাইলে গুছিয়ে রাখা যাবতীয় প্যাথোলজিক্যাল টেষ্ট রিপোর্ট প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি।ঘমোচ্ছে ঘুমোক চা করে ডাকলেই হবে।
রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপাল।মামীর বাচ্চাটা হলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। বাড়ীতে চা পাতা চিনি দুধ একসঙ্গে দিয়ে ফোটাতো।মামী বলেছে এতে নাকি চায়ের বাস চলে যায়। জল গরম করে নামিয়ে তাতে চা পাতা দিতে হয়,মামী শিখিয়ে দিয়েছে। "ললিতারে"
চিৎকারে বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে।গ্যাস বন্ধ করে ছুটে গেল ললিতা।মামী মেঝেতে পড়ে আছে বিছানা ভিজে গেছে।মেঝেতেও জল মামী বলল,ফোন কর।
কি করবে ললিতা দিশাহারা বোধ করে। কাপতে কাপতে ডায়াল করে,হ্যালো মামী...। খাদিজা বলল,বল ড.সোম।
--হ্যা হ্যা ড.সোম.. পেচ্ছাপের মত জল বেরোচ্ছে।আচ্ছা আচ্ছা।ফোন রেখে দিল।
ললিতা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,মামী তুমার কষ্ট হচ্ছে?
--তুই মামাকে বল।
ললিতা আবার ফোন করে। লাইন পায় না,খাদিজা বেগম বলল,আবার চেষ্টা কর। বারবার কর।
--হাসপাতাল থেকে গাড়ী পাঠাচ্ছে তুমার শাড়ী ভিজে গেছে। আলমারি থেকে শাড়ী বের করে বলল,এইটা পরো।
ললিতা একটা ভিজে কাপড় এনে মেঝে মুছতে শুরু করে।
--আমি পারছি না তুই শাড়ীটা পরিয়ে দে।
ললিতা উঠে মামীকে শাড়ী পরাতে লাগল।শাড়ী পরানো হলে খাদিজা বেগম বলল,তুই ফোন কর।
নীচে গাড়ীর শব্দ হতে ললিতা ব্যালকনিতে গিয়ে উকি দিয়ে হাত নেড়ে ইশারা করে ভিতরে এসে ফোন করে,হ্যালো মামাকে দেন তো?জিভ কেটে বলে,ডাক্তার সোম.. আমি ললিতা..কিছু বলতি হবে না..ললিতা বললি হবে।
স্ট্রেচার নিয়ে দুটী লোক উপরে উঠে এসেছে। খাদিজা বেগমকে শুইয়ে নীচে নিয়ে গেল।ললিতা দরজায় তালা দিয়ে সঙ্গে গেল।
এ্যাম্বুলেন্স থেকে ললিতার চোখ ধাধিয়ে যায় কোথায় এল ,মামীকে নিয়ে উপরে চলে গেল। তারপর একটা ঘরে নিয়ে গেল ললিতা যেতে গেলে একজন বাধা দিল। কি করবে বুঝতে পারে না। একজন মেয়ে ডাক্তার এসে জিজ্ঞেস করল, মিসেস সোমের সঙ্গে কে এসেছেন?
ললিতা এগিয়ে যেতে বলল,কাগজপত্র কোথায়?
কি বলবে কিসের কাগজ পত্র?ডাক্তার মহিলা বলল,ড.সোমকে খবর দেওয়া হয়েছে? আপনি কে?
--আমি ললিতা।
--উনি আপনার কে?
--আমি কাজ করি।
--ও গড! তুমি কাগজগুলো নিয়ে আসতে পারবে?
ডাক্তার মহিলা একটা লোককে ডেকে বলল,ওর সঙ্গে যাও তো।একশো টাকা দিল। ট্যাক্সিতে পৌছে ললিতা চিন্তায় পড়ে যায় কি কাগজ নিতে হবে? খাটের উপর ফাইল দেখে মনে হল এটা হতে পারে। বালিশের নীচ থেকে একটা কাগজ বেরিয়ে আছে সেটাও ফাইলে ঢুকিয়ে নিল।
খাদিজা বেগমকে দেখছিলেন ড.চৌধুরি,আজ তিনি আসেন নি।সেজন্য ড.শেঠির অধীনে ভর্তি করা হয়।তিনি অসহায় বোধ করেন কেস হিষ্ট্রি কিছুই জানা নেই,ব্লাড গ্রুপ কি?তাকে সাহায্য করছেন ড.কাউর।ড.কাউর সবে যোগ দিয়েছেন,খাদিজা বেগমকে দেখে তিনি অতি আগ্রহী। ভেবেছিলেন ড.সোমের সঙ্গে দেখা হবে কিন্তু তিনি আসেননি,সঙ্গে এসেছে বাড়ীর কাজের লোক।গরজ করে টাকা দিয়ে বাড়ী থেকে কাগজ পত্র আনার ব্যবস্থা করেছেন।পেষেণ্ট ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে।পেশেণ্টকে রক্ত দিতে হবে।রক্ত দেবার জন্য চ্যানেল করে অপেক্ষা করছেন কাগজপত্র দেখে ব্লাড গ্রুপ জেনে নিয়ে ব্যবস্থা করবেন। এখন রক্ত নিয়ে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় করা সময়ের ব্যাপার। পেশেণ্ট হেচকি তুলছেন,ড.কাউর সিনিয়ারকে ডাকলেন। ড.শেটী দেখলেন বেবি বেরোতে চাইছে। ড.শেঠী বললেন,পুশ ম্যাডাম পুশ।
খাদিজা বেগম দাতে দাত চেপে সন্তানকে বের করার চেষ্টা করে। ড.শেঠী বললেন, প্লিজ ট্রাই--ট্রাই।লিটল মোর।
ড.কাউর ললিতাকে দেখতে পেয়ে বেরিয়ে এসে ললিতার কাছে থেকে ফাইল নিয়ে খুলতে একটা কাগজ মাটিতে পড়ে যায়।ললিতা কাগজটা তুলে ড.কাউরের হাতে দিল।কাগজটা একপলক দেখে ভাজ করে বুকে গুজে রাখলেন। কাগজ ঘাটতে ঘাটতে দেখলেন সব সুন্দর করে সাজানো। ড.চৌধুরির প্রেসক্রিপশন পর্যন্ত সযত্নে রাখা।ভিতর থেকে ড.শেঠীর উত্তেজিত গলা পাওয়া গেল,ড.কাউর--নার্স।
ড.কাউরকে দেখে ড.শেঠী বললেন,পেশেণ্ট সেন্স হারিয়েছে বেবি সিরিয়াস কণ্ডিশন, নার্স ফোরসেপ প্লিজ।
নার্স ফোরসেপ এগিয়ে দিতে বেবিকে টেনে বের করার চেষ্টা করেন। ড.কাউর পেশেণ্টের পেটে চাপ দিতে লাগলেন।এইভাবে টানাটানি করতে করতে বাচ্চাটা বেরিয়ে এল। বেশ বড় ফিমেল বেবি। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর বাচ্চা কেদে উঠল। দ্রুত
নার্সের হাতে দিয়ে পেশেন্টের জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ড.শেঠী। হাতের কজি হাতে ধরে নাড়ি পরীক্ষা করেন, ও মাই গড শি ইজ এক্সপায়ারড।
পল্টুর অপারেশন শেষ চেঞ্জ করে বেরোবার জন্য প্রস্তুত। একজন অফিস করমী এসে বলল,স্যার ম্যাডাম ললিতা আপনার খোজ করছেন।
--ম্যাডাম ললিতা? পল্টুর নামটা মনে মনে চিন্তা করছিল। কর্মচারিটি বলল,ললিতা বললে মামা বললেই বুঝতে পারবে।পল্টুর মনে আগুণ জ্বলে ওঠে লোকটির কলার চেপে ধরে বলল,স্কাউণ্ড্রেল এতক্ষণ বলেন নি কেন? তারপর লজ্জা পেয়ে 'স্যরি' বোলে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল। গাড়ীতে উঠে বলল,ইকবাল ড্যাফোডিল নার্সিং হোম চলো।
কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব
[৬৭]
গাড়ীতে বসে অভুতপুর্ব অনুভুতিতে আচ্ছন্ন হয় পল্টুর মন। হাত মাথার পিছনে দিয়ে নিজেকে এলিয়ে দিল।চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সেই প্রথম দিন যেসিন অঞ্জুর সঙ্গে দেখা স্পষ্ট ভেসে উঠল চোখের সামনে সেই মুখ তাকিয়ে আছে তার দিকে।সেদিন ঘুণাক্ষরে টের পায় নি এভাবে জীবনে জীবন জড়িয়ে যাবে।বয়স ধর্ম কোনোকিছু বাধা হয়ে দাড়াতে পারে নি।কেমন করে সম্ভব হল? আজ বেরোবার আগে অঞ্জু বলেছিল,আমাকে একটু আদর করো। যদি বলতো আজ দরকার নেই নার্সিং হোম যাবার তাহলে হয়তো পল্টু যেতো না কিন্তু অঞ্জু বলেনি।ললিতার কথা রিসিভিং সেকশনে বলে রাখলে ওরা তাকে যথা সময়ে খবর দিত,কিন্তু বলে রাখেনি।এসবই হয়তো তার মর্জিতে। লোকে বোলে ড.সোমের হাতে জাদু আছে কিন্তু পল্টু জানে সব কিছুর অন্তরালে আছে এক অদৃশ্য জাদুকর যার নির্দেশে ঘটে চলেছে একের পর এক আমরা নিছক রঙ্গমঞ্চের কুশীলব। ভাসতে ভাসতে চলেছি কোন কূলে কোন ঘাটে গিয়ে হবে যাত্রাবসান কে বলতে পারে? ইকবালের ডাকে তন্দ্রা ভাঙ্গে,দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।
নার্সিং হোমের সিড়িতে বসেছিল ললিতা।মামাকে গাড়ী থেকে নামতে দেখে উঠে দাড়াল। কি যেন বলতে চায় অথচ কিছুই বলতে পারে না। ললিতার মুখ চোখ দেখে সন্দেহ হয় তাহলে কি? বোবা দৃষ্টি মেলে তাকে সবাই দেখছে।মনের মধ্যে ভু-কম্পন অনুভুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল। ললিতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না গলায় আটকে থাকা একটা শব্দ ছিটকে বেরিয়ে আসে, মাম-ই-ই-ই।
পল্টু হাত তুলে তাকে বিরত করে জিজ্ঞেস করল,মামী কোথায়?
ললিতা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে পিছনে পল্টু। সিড়ির উপর থেকে স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে ড.যশবিন্দার। অনেক বদলে গেছে অঙ্গন। চোখ কান খোলা কিন্তু মন যেন কোন অন্য জগতে। এই অঙ্গন তার চেনা। উপরে উঠে যশবিন্দারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,তুমি? ড.চৌধুরি কোথায়?
--উনি আজ আসেন নি। ড.শেঠী এ্যাটেণ্ড করেছেন। যশবিন্দার বলল।
পল্টু মনে মনে ভাবে ড.চৌধুরি আজই এলেন না? এও তার কারসাজি সব পরিপাটি ভাবে সাজানো। ধীরে ধীরে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ভিতরে একটা টেবিলে শায়িত খাদিজা বেগম,আপাদ মস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা। ড.যশের ইশারায় নার্সরা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কাছে গিয়ে পল্টু মুখের কাপড় সরিয়ে অভিমাণী দৃষ্টিতে খাদিজা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।যশবিন্দার অবাক হয়ে অঙ্গনকে দেখছে। পল্টু বলল,বাঃ বা বা বাআআআ..। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খাদিজা বেগমের শরীরের উপর ড.অনঙ্গদেব সোম। যশবিন্দার জড়িয়ে ধরে তুলে দাড় করিয়ে বলল,অঙ্গন কণ্ট্রোল ইয়োরসেলফ।
যশবিন্দারের বুকে মুখ রেখে বলল,যশ আমাকে একা ফেলে চলে গেল। হাউ শি ক্যান সো?
যশবিন্দার একটা চেয়ারে পল্টুকে বসিয়ে দিয়ে বলল, আই ফিল ইউ ডিয়ার বাট ইউ নো উই আর হেল্পলেস।
কিছুক্ষণ চুপ করে কি ভাবে তারপর বলল,আই এ্যাম সরি যশ।যশবিন্দারকে অবাক হয়ে দেখে,জানো অঞ্জু বলছিল তুমি কলকাতায় এসেছো। কবে এলে?
--অনেক কথা পরে বলবো।
--আমি জিজ্ঞেস করলাম,অঞ্জু তোমার যশকে কেমন লাগে?
--কি বলেছিলেন?
--কিছু বলেনি এড়িয়ে গেছিল।
যশবিন্দার বুক থেকে কাগজ বের করে অঙ্গনের হাতে দিল।পল্টু দেখল সাদা কাগজে লেখা,yas is very pretty and beautiful--onjona.
--এটা তুমি কোথায় পেলে?
--পরে বলবো, তোমার বেবি দেখবে না?
--বেবি? দেখেছো কেমন বিপদে ফেলে গেল? কি করে সামলাবো ওকে?
--আমি সামলাবো।তুমি এবার শেষ কাজটা করার ব্যবস্থা করো।
--তোমার সংসার--ওরা কি রাজি হবে?
--পরে সব বলবো।
ইকবালের বুঝতে বাকী থাকে না মেমসাব আর এই দুনিয়ায় নাই। সাহেবকে নিয়ে চিন্তা হল। মানুষটা বড় ডাক্তার হইতে পারে কিন্ত বড় সাদাসিধা। পল্টু নীচে নেমে গাড়ীর কাছে এসে দাঁড়ায়। ইকবাল এসে বলল,ডাক্তার সাব কি ভাবতেছেন?
--ইকবাল মেমসাব মারা গেছে শুনেছো?
--অনুমতি করলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। মেমসাবরে দাহ করবেন না গোর দিবেন?
এই কথাটা পল্টুর মনে আসেনি। জিজ্ঞেস করে, কি করবো তাই ভাবছি।
--মেমসাব মাজারে যাইতেন। আমারে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলবো গোর দিলে ভাল হয়।
--কিন্তু আমি তো নিয়ম কানুন কিছু জানি না ইকবাল।
--আপনেরে কিছু জানতে লাগবে না।আপনে একটু অপেক্ষা করেন,আমি সব ব্যবস্থা করে আসতেছি। ইকবাল গাড়ী নিয়ে চলে গেল।ললিতা এসে পল্টূকে উপরে ডেকে নিয়ে গেল। যশবিন্দারের চেম্বারে গিয়ে দেখল তার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে যশ।ললিতাকেও দিয়েছে।
খাদিজা বেগমের নাম এবং ইকবালের চেষ্টায় বেশ কিছু যুবক এগিয়ে এল।তারাই সমগ্র ব্যাপারটা দেখভালের দায়িত্ব নিল। কাশিপুর গোরস্থানে পৌছে পল্টু দেখল তার আগেই খাদিজা বেগমকে সেখানে আনা হয়েছে। উত্তর দক্ষিণ মুখী কবর খনন চলছে। ইমাম সাহেব তত্বাবধান করছেন। গোরস্থানের গেটের কাছে পল্টু বসে আছে বিধ্বস্থ ক্লান্ত।
অশোক আগরাআল এসেছে সঙ্গে শেখ সুকুর আলি সান্ত্বনা দিচ্ছে ডাক্তারবাবুকে। খাদিজা বেগমের স্বামী হিন্দু শুনে শেষ মুহুর্তে বেকে বসে ইমামসাহেব,এই ব্যাপারে থেকে তিনি জাহান্নামে যেতে চান না।ইকবাল হাতে পায়ে ধরলেও ইমাম সাহেব সিদ্ধান্তে অটল।বড় মুখ করে বোলেছিল সব ব্যবস্থা করবে ইকবাল এখন কি বলবে ডাক্তার সাবকে? সুকুর আলিকে দেখে ইকবাল এগিয়ে যেতে সুকুর আলি জিজ্ঞেস করে,কিরে সব কাজ হয়েছে?
ইকবাল তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ইমামের কথা বিস্তারিত বলে।সুকুর আলি কবরের দিকে এগিয়ে গেল।ইমাম সাহেবকে দেখে বলল,সেলাম আলেকুম ইমাম সাহেব।
--আলেকুমাসলাম।আপনে?
ইকবাল বলল,এনারে চেনেন না? ইনি শেখ সুকুর আলি।
ইমাম নাম শুনে ঢোক গিলে বলেন,বিলক্ষণ আপনেরে কে না চিনে।
তোবা তোবা এই নাকি সুকুর আলি?ইমাম মাওলানা মাজহার উদ্দীন ইতিপুর্বে সুকুর আলিরে চোখে না দেখলেও তার খ্যাতি সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। না জেনে কি ভুল করতে চলেছিলেন,খোদা মেহের বান এ যাত্রা বেঁচে গেলেন।
ড্যাবডেবিয়ে সুকুর আলিকে লক্ষ্য করেন,খাদিজা বেগমের দিকে তাকিয়ে সুকুর আলির চোখ ভিজে গেল।প্রফেসার ম্যাম খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তার পরিচয় জেনেও তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন নি।উনার কাছে কলেজে তার বিবি পড়েছে। সুকুর আলি ইমাম সাহেবকে বলল,ইমাম সাহেব এইবার কাম শুরু করেন।
--হ্যা হ্যা মিঞা করতেছি, ইমাম ইকবালকে বললেন,এই ব্যাটা উনার স্বামীরে ডাক।
পল্টু আসতে ইমাম সাহেব বললেন,আসেন ডাক্তার সাহেব।এই তোরা লাশ কবরে রাখ,মাথা উত্তর দিক করে রাখবি। সবাই ধরাধরি করে খাদিজা বেগমকে কবরে নামাতে গেলে পল্টু জড়িয়ে ধরে গালে গাল রেখে কেদে ফেলে।ইমাম সাহেব অবাক ডাক্তারের আচরণে,মানুষ মানুষরে এত ভালবাসে?ইমামের মনের উষ্মাভাব চলে যায়। লাশ কবরে রাখার পর ইমাম সাহেব বললেন,ডাক্তার সাহেব বলেন,বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লতি রাসূলিল্লাহি।
পল্টু কি বুঝল কে জানে ইমাম সাহেব বললেন,আপনে আল্লাহ তায়ালার নামে দেহ সোপর্দ করলেন। এইবার মুঠীতে মাটি নেন,বলেন,মিনহা খালাকনাকুম। এই মাটি দিয়া সৃষ্টি করছিলেন।কবরে ফেলেন মাটি আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া ফীহা নুয়ীদ কুম। আবার মাটিতেই দিয়া দিলাম। মাটি কবরে দিয়া আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। আবার মাটি হতেই ফিরে পাবো। মাটি কবরে ফেলেন।এইবার ভাই সব তুমরা কবরে মাটি চাপা দেও।
গাড়ীতে ইকবালের পাশে মাওলানা সাহেব বসলেন,পিছনে পল্টু আর ললিতা। ইকবাল নীরবে গাড়ী চালাচ্ছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাওলানা একসময় বললেন, ডাক্তার সাহেব এই দুনিয়ায় কোনো কিছু চিরকাল থাকে না। মনে কোনো দুঃখ রাখবেন না। আমার প্রথম বিবির ইন্তেকালের পর আমারও মনে খুব দুঃখ হয়েছিল। এখন আমার দুইটা বিবি,একটা গেলেও একটা থাকবো।
পল্টুর এইসব জ্ঞান উপদেশ ভাল লাগছিল না। কতক্ষণে এই মানুষটা থেকে মুক্তি হবে সেই চিন্তা করে। পল্টু জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাবেন আপনি?
--দিন দুনিয়ার মালিক যেইখানে নিয়া যায়।মাওলানা বললেন।
--সাহেব আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি উনাকে পৌছে দেবো।ইকবাল বলল।
ললিতার দিকে নজর পড়ে,সকাল থেকে খুব ধকল গেল ওর উপর দিয়ে। যশ খাইয়ে না দিলে এতক্ষণ অভুক্ত থাকতো। অঞ্জু থাকলে তাকে এত ভাবতে হত না। নার্সিং হোমে বোলে এসেছিল কাল থেকে ক-দিন আসবে না,আর তার প্রয়োজন নেই। মেয়েটার কথা মনে পড়ল তার কি অপরাধ?জন্মে মায়ের দুধ পেল না। যশবিন্দার কিভাবে সামলাবে তাকে? শিখ পাঞ্জাবী হলেও সব নারীর মধ্যে একজন মায়ের বাস। যশ না থাকলে আজ কি যে হতো?কিন্তু ওর হাজব্যাণ্ড রাজি হবে কেন? তাড়াতাড়িতে ভাল করে দেখা হয়নি মেয়েটাকে। গতকাল আর আজেকের সঙ্গে কত পার্থক্য, কালকের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী যেন একেবারে আলাদা।