6 years ago#81
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


[৬৮]




পান্থ নিবাসের সামনে গাড়ী দাড়াতে পল্টূ আর ললিতা নেমে পড়ল। মাওলানা মুখ বাড়িয়ে বলেলেন, ডাক্তার সাহেব সবারে একদিন চলে যেতে হবে আপনে শিক্ষিত মানুষ আপনাকে আমার বলা শোভা পায় না। পল্টু উপর দিকে তাকিয়ে দেখল উপর থেকে সবাই উকিঝুকি দিচ্ছে।ললিতাকে বলল,এতরাতে আর রান্না করতে হবে না। চল তোর জন্য দোকান থেকে খাবার কিনে নিই।
--মামা আমার ক্ষুধানেই,তুমি খেলে নিয়ে নেও।
--আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই আমাকে এককাপ চা করে দিস।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে পল্টু।ললিতা জিজ্ঞেস করে,কি হল মামা?
--তোর মামী নেই ফাকা ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না।
ললিতার চোখে জল এসে গেল বলল,মামা তুমি এরকম করলে আমার ভাল লাগে না।
দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে পল্টূ বিহবল চোখ বোলায় চারদিকে।ললিতা তাড়াতাড়ি ঘরে ঢূকে বিছানার চাদর বদলে দিতে থাকে,খেয়াল হয় ফাইলটার কথা।নার্সিং হোমে রয়ে গেছে আনা হয়নি। পল্টুকে বলল,মামা বিছানার উপর একটা ফাইল ছিল মেয়ে ডাক্তারকে দিয়েছিলাম,আনা হয় নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পল্টু বলল,আর ফাইল আসল লোকই চলে গেল।
--বালিশের নীচে একটা কাগজ ছেল সেইটাও আমি নিয়ে গেছিলাম।
--কি কাগজ?
--তা জানি না।ঐ কাগজটা ডাক্তার দিদি নিয়ে বুকে গুজে রাখল।
বুকে গুজে রাখল? পল্টুর মনে পড়ল যশ তাকে দেখিয়েছিল,ইংরেজিতে অঞ্জুর লেখা। এবার বুঝতে পারে কি ভাবে কাগজটা যশের হাতে পৌছালো?
বিছানা পরিস্কার করে ললিতা স্নান করতে গেল। ফোন বাজছে পল্টু গিয়ে ফোন ধরল, হ্যালো?..বলুন মাম্মী....।ওপাশ থেকে পার্বতী ম্যাম সমবেদনার কথা বলতে থাকেন। বলা শেষ হলে পল্টু বলল,এবার রাখি? ফোন রাখতে আবার বেজে উঠল। পল্টু ললিতাকে ফোন ধরতে বলে শিখিয়ে দিল,বলবি আমি শুয়ে পড়েছি। অনবরত ফোন বাজতে থাকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ললিতা ফোন ধরে বলে, শরীর ভাল না শুয়ে পড়েছেন।
অঞ্জু অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে মনে তার কথাই ভাবতো, নার্সিং হোমে শুয়ে ছিল এমন নির্বিকার তন্ন তন্ন করে খুজে কোথাও নিজেকে দেখতে পেল না পল্টু। এত সহজে বাঁধন ছিড়ে চলে যেতে পারলো? অভিমান হয় সেও আর তার কথা ভাববে না।
--মামা তুমি স্নান করে নেও আমি চা করতেছি।ললিতা এসে বলল।
কথাটা খারাপ বলেনি,এখন ললিতার নির্দেশে চলতে হবে। তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল পল্টু।বেশ ঝরঝরে লাগছে।ঘরে ঢুকে অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। আলমারি খুলে এ্যালবামটা বের করে। হাসছে চোখে কালো চশমা। কি সুন্দর চোখ অথচ সব সময় ঢেকে রাখতো। ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন পাড়ি দেয় অতীতে। যশের নাম শুনে বিরক্ত হলেও বাইরে তার কোনো প্রকাশ ছিল না।কলেজ ছুটি নিয়ে নিজের গরজে দিল্লী সফরে সঙ্গী হয়েছিল।এতই যদি শঙ্কা তোমার তাহলে কোন ভরসায় একা ফেলে চলে গেলে?
ললিতা চা নিয়ে ঢুকল। চা দিয়ে সেও ছবি দেখতে থাকে। একসময় জিজ্ঞেস করে,মামী কি মোসলমান ছেল?
পল্টু চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে থামে। মুসলিম পরিবারে জন্মেছিল কিন্তু কি ছিল এখনো বুঝতে পারিনি।শুধু বুঝেছি অঞ্জু আমার নিঃশ্বাস আমার উদ্যম আমার প্রেরণা। ঈশ্বর আমাকে কিছুদিনের জন্য দিয়েছিল মেয়াদ শেষ হতে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এসব কথা ললিতাকে বলা যায় না। পল্টু জিজ্ঞেস করল,তুই জানতিস না?
--কি করে জানবো আমারে কেউ বললি তো জানবো।আজ গোর দিল দেখেই জানলাম।
--তুই তো তবু জেনেছিস আমি আজও জানতে পারলাম না। ললিতা হা-করে তাকিয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করল,তুই চা খাবি না?
--আমার চা আছে রান্না ঘরে।ললিতা চলে গেল।
মেয়েটাকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। যতই হোক ও তো অঞ্জুরই মেয়ে।ওর কি অপরাধ? বেচারি জানতেই পারল না ওর মা নেই। কি করছে এখন,ঘুমোচ্ছে? যশকে বাড়ীতে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। কার মেয়ে কোথায় পেল? কেনই বা সে নিয়ে এল? ললিতা ঢুকে বলল,মামা আমি শুয়ে পড়ছি? কোনো দরকার আছে?
--তুই মেয়েটাকে দেখেছিস?
--মামীর মেয়ে?ললিতার চোখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল বলল,কি সোন্দর পুতুলের মত দেখতে মাথা ভর্তি চুল পিট পিট করে চায়।ললিতার গলা ধরে এল,ও জানে না ওর মা নাই।
--ঠিক আছে তুই যা। পল্টু দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেলে। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়।
রাত গভীর হয় ঘুমিয়ে পড়ে পল্টূ। ঘুমালে মন শান্ত হয়। ড্যাফোডিলের কোয়ার্টারে যশবিন্দারের চোখে ঘুম নেই। ফিডীং বোতল শিপার ইত্যাদি কিনে এনেছে। চুক চুক করে দুধ টানছে। মুগ্ধ হয়ে দেখে যশ। একসময় জামা খুলে স্তন বৃন্ত মুখে পুরে দিল।দুধ নেই তবু কি সুন্দর চুষছে।নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাচ্চার নাম দিয়েছে জেসমিন।
দিন দশেকের উপর হয়ে গেল ভাইদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে এখানে এসেছে। পরমিতের ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা।বিজনেস পারটনার জ্ঞান প্রকাশ চৌটালার সঙ্গে তার বিয়ে দেবে।প্রচুর অর্থের মালিক সুশিক্ষিত মন তাকে মেনে নিতে পারে না।তাছাড়া বিয়েতে তার রুচি নেই। সেই সময় কাগজে বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়ে। প্রথম কথা দিল্লী থেকে পালাতে হবে তাছাড়া মনের কোনে লুকিয়ে আছে কলকাতার প্রতি দুর্বলতা।সুযোগটা হাতছাড়া করে না। পরমিত আজ হোক কাল হোক ভবানীপুরে আসবেই তার খোজে। দুঃশ্চিন্তা আছেই কি বোলে পরমিতকে নিবৃত্ত করবে?একটাই আশার কথা এটা দিল্লী নয় এখানে মস্তানি চলবে না।নিঃসঙ্গ প্রবাসে জেসমিন তার আশ্রয়।কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কোনো চিন্তা নেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেই কোনো উদবেগ।জীবনের এই মাসুমিয়ত কাল বড় পবিত্র। যতদিন মাসুমিয়ত থাকবে ঈশ্বর তোমাকে ছুয়ে থাকবে। কপালে চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ল যশ।
নরম আলোয় ভরে গেল ঘর। পল্টু কি দেখছে? খাদিজা বেগম তার পাশে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কোথায় ছিলে এতক্ষণ,ওটুকু মেয়েকে আমি একা একা কি করে সামলাবো। আহা যশকে দায়িত্ব দিয়ে তুমি চলে যাবে?মাটির নীচে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে? পল্টু হাত দিয়ে ধরতে গেলে সরে যায় অঞ্জু। আমি ধরবো তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।আমি মাঝে মাঝে আসবো আমার মর্জিমত। যশ ভেরি প্রেটি বিউটিফুল। না তুমি যাবে না,অঞ্জু--অঞ্জু--অঞ্জু....।
বাইরে থেকে ললিতা দরজা ধাক্কা দেয়, মামা দরজা খোলো,চা এনেছি।
ঘুম ভেঙ্গে যায় ধড়ফড় করে উঠে বসে পল্টু। বাইরে ললিতার গলা পেয়ে খাট থেকে নেমে দরজা খোলে। ললিতা চা নিয়ে ঢুকতে পল্টু বলল, এত বেলা হল ডাকিস নি? আমাকে বেরোতে হবে।
--ডাকিনি আবার?এই নিয়ে তিনবার আসলাম।
পল্টু চা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,রান্না হয়ে গেছে?
--ভাত উবুড় দিলি হয়ে যাবে।
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? মনের ভাবনা রুপান্তরিত হয়েছে স্বপ্নে। কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হবে না হলে শান্তি নেই।অঞ্জুকে স্পষ্ট দেখেছে চোখে সানগ্লাস ঠিক আগের মত।চা খেয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
রাত করে ঘুমিয়েছে কিন্তু এত বেলা অবধি পল্টু ঘুমোয় না।মাথায় শ্যাম্পু দিল সাবান মেখে স্নান করল। মাথার মধ্যে সব কেমন তালগোল পাকিয়ে আছে।রোগী দেখতে পারবে তো? পোষাক পরে তৈরী হয়ে খাবার টেবিলে বসে জিজ্ঞেস করে,আর কেউ ফোন করেনি তো?
--করেনি আবার? একজন মেয়েলোক আবার দুই-তিনবার ফোন করেছে।
পল্টু হেসে বলল,তুই কি বললি?
--ডাক্তারবাবুর শরীর ভাল না ওবেলা করবেন।
--ও বেলা বলার কি দরকার ছিল?
মাম্মী দেখা করতে বলেছিলেন আজ গিয়েই দেখা করবে।খাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম করছে। সময় কাটতে চায় না অঞ্জু থাকতে কিভাবে কেটে যেত সময় বুঝতেই পারত না। সব সময় একটা মানসিক চাপ অস্থির করে তুলেছে। ইকবাল এসে ড.সোমকে নিয়ে গেছে।বেরোবার আগে মামাকে  তিনটের সময় চা করে দিয়ে ললিতা শুয়ে পড়ে।ছেলে মেয়ের কথা মনে পড়ল।কতদিন দেখেনি তাদের এই অবস্থায় মামাকে একলা ফেলে যেতেও পারছে না। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যের মুখে কলিন বেল বাজতে উঠ বসল। মামার এত সকাল সকাল ফেরার কথা নয়।বাড়ীতে সে এখন একা,দরজা খুলবে কি না ভাবে। ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখল কে একজন মহিলা,কোলে বাচ্চা।

বুইন নাতো? ললিতা দরজা খুলে দিতে ড.কাউর বাচ্চা কোলে ঢুকলেন

--মামা তো বাড়ি নাই নাসিন হোমে গেছে।
--ফোনে বলল শরীর ভাল না।
--কি করবো মামা শিখায়ে দিছিল। আমার কোলে একটু দেবেন?সসঙ্কোচে জিজ্ঞেস করে ললিতা।
--ভাল করে হাত ধুয়ে এসো।
কথা না বাড়িয়ে ললিতা হাত ধুয়ে এসে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে খুব খুশি। ড.কাউর ঘরে ঢুকে বিছানার উপর ছোট একটা বিছানা করলেন। ললিতাকে বললেন,এখানে শুইয়ে দাও।
অনিচ্ছে সত্বেও ললিতা শুইয়ে দিল।বাচ্চাটা ঘুমে অচেতন ললিতার ভাল লাগে না। নড়াচড়া না করলে ভাল লাগে?
ড.কাউর জিজ্ঞেস করলেন,তোমার রান্না হয়ে গেছে?
--এইবার করবো।
--তোমাকে করতে হবে না,আমি করছি।
একজন অপরিচিত মহিলা এসে খবরদারি করবে ললিতার পছন্দ নয়। কিন্তু মুখের উপর কিছু বলতেও পারছে না।বিশেষ করে বুইনরে সঙ্গে করে এনেছে।নার্সিন হোমে মামীর জন্য খুব করেছে। তাকে বসিয়ে খাইয়েছে এসব কথা ভেবে ললিতা আর কিছু বলে না। মামা আসুক তখন যা বলার মামাই বলবে।যশ রান্নাঘরে ঢুকেছে ললিতা বাচ্চার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

6 years ago#82
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


[৬৯]



পার্বতী ম্যাডাম দুঃখ প্রকাশ করলেন। অনুরোধ করলেন ইচ্ছে করলে পল্টু তার কাছে এসে থাকতে পারে। বোঝালেন কেউ চিরকাল থাকে না।ড.অনলদেব সোম চলে যাবার পর তার অবস্থাও এরকম হয়েছিল তবু সেদিন ভেঙ্গে না পড়ে কঠোর হাতে সব দায়িত্ব
সামলেছেন।বস্তুত অনেক বললেও কিছুই পল্টুকে প্রভাবিত করতে পারে না। মাম্মীর কাছে বিদায় নিয়ে বাড়ী ফেরার কথা ভাবতে তার মনে পড়ে শূণ্য ঘরের কথা।তবু অঞ্জু না থাকলেও সেখানে জড়িয়ে আছে তার স্মৃতি। সিড়ি দিয়ে নামতে ড.খান্নার সঙ্গে দেখা হল সহানুভুতি প্রকাশ করলেন। ম্লান হেসে পল্টু শুনে নীচে নামতে লাগল।
অফিস পেরোতে গিয়ে একজন এগিয়ে এসে বলল,স্যার আমি দুঃখিত কিছু বুঝতে পারিনি।
পল্টুর মনে পড়ল এই ভদ্রলোক তাকে ফোনের খবর দিয়েছিলেন।উত্তেজিত হয়ে পল্টু তাকে ভর্তসনা করেছিল।পল্টু লজ্জিত হয়ে বলল,আপনি কিছু মনে করবেন না,আমি আসলে--।
--না স্যার আমি কিছু মনে করিনি,মিসেস সোমের ব্যাপারটা জানতে পেরে আমার খুব খারাপ লেগেছে।
আবার মিসেস সোম?যে কথা ভুলতে চায় সে কথা কেন এরা মনে করিয়ে দেয়? এই সহানুভুতি সমবেদনা তার ভাল লাগে না।ড.শর্মা এসে জিজ্ঞেস করেন,আপনার ডিউটি শেষ?
পল্টুর জনপ্রিয়তা ড.শর্মার অপছন্দ।তিনি অনেক সিনিয়ার,তার ধারণা এই জনপ্রিয়তার পিছনে কারণ পল্টু ড.সোমের ছেলে।অবশ্য কে কি ভাবল পল্টুর কোনো মাথা ব্যথা নেই। আপন মনে কাজ করতে ভালবাসে। পল্টু হেসে বলল, হ্যা শেষ। ভেবেছিলাম আজ আসবো না।
--হুম।ড.শর্মা কি ভাবেন মনে মনে। আপন মনে বলেন, এক একজনের সমস্যা এক একরকম।
ড.শর্মার পারিবারিক কিছু সমস্যা আছে কানাঘুষোয় সে খবর পল্টুর কানেও এসেছে। প্রকৃত ব্যাপারটা কি পল্টু জানে না,জানার আগ্রহও নেই।
--ড.সোম আমি কি আপনাকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারি?
--আপনার গাড়ী?
--গ্যারেজে।আমি আজ ট্যাক্সিতে এসেছি।অবশ্য আপনার কোনো অসুবিধে থাকলে--।
--না না অসুবিধের কি আছে?আপনি তো এখন বাড়ী ফিরবেন না।
--বাড়ী?ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়?ড.শর্মা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
সবাই জানে ফেরার পথে ড.শর্মা কোনো একটা বারে গিয়ে মদ্যপান করেন।পল্টুর মনে হয় মদ্যপানে কি দুঃখ ভোলা যায়?
গল্প-উপন্যাসে পড়েছে প্রেম প্রত্যাখ্যাত নায়ক মাতাল হয়ে কবিতা আওড়ায়। কিরন দিলীপকে পিকনিকে লুকিয়ে লুকিয়ে মদ খেতে দেখেছে। সেণ্ট্রাল এভিনিউতে কিছুটা গিয়ে ইণ্ডিয়ান হোটেলের কাছে ড.শর্মা বললেন, গাড়ী দাড় করাও।
ড.শর্মার সঙ্গে পল্টুও নামে গাড়ী থেকে।ড.শর্মা বললেন,থ্যাঙ্কস ড.সোম।
--কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--ওঃ সিয়োর।ড.শর্মা হাসলেন।
--আপনি ড্রিঙ্ক কেন করেন?
ড.শর্মা অবাক হয়ে পল্টুকে দেখেন তারপর উদাস গলায় বললেন,দেয়ার আর মেনি কজেজ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি বলবো?
--চলুন আজ আপনাকে আমি সঙ্গ দেবো।
চমকে ওঠেন ড.শর্মা একটু ইতস্তত করেন,মনে হল ড.শর্মা একটু বিব্রত।পল্টু বলল, অসুবিধে থাকলে নাই গেলাম,বাই।পল্টু গাড়ীর দরজা খুলে উঠতে গেল ড.শর্মা বললেন,ড.সোম প্লিজ না এলে দুঃখ পাবো।
দুজনে ইণ্ডিয়া হোটেলে একটা কেবিনে বসল। একটা বেয়ারা এসে বলল,সেলাম ডাক্তার সাব।
পল্টু বুঝতে পারে ড.শর্মা এখানে পরিচিত। ড.শর্মা বললেন,একটা ছোট আর একটা বড়।
--না দুটোই বড়।পল্টু বলল।
অবাক হয়ে পল্টুকে দেখেন তারপর বেয়ারাকে বললেন,চিকেন পকোড়া। বেয়ারা চলে গেলে জিজ্ঞেস করেন, ড.সোম আপনি তো ড্রিঙ্ক করেন না।
--আপনিও একদিন ড্রিঙ্ক করতেন না।আমার বাবা নিয়মিত ড্রিঙ্ক করতেন।
ড.সোম মেণ্টালি ডিস্টার্ব বুঝতে পারেন আর কিছু বললেন না ড.শর্মা।একসময় বললেন, মিসেস সোমের চলে যাওয়াটা ভেরি স্যাড।
--প্লিজ ড.শর্মা এখন সেসব থাক।
পল্টু চেষ্টা করে ভুলে থাকতে তবু কেন যে সবাই মনে করিয়ে দেয়। বেয়ারা ট্রেতে করে পানীয় পকোড়া দিয়ে গেল। স্বল্প আলো ছায়াময় রোমাণ্টিক পরিবেশ। একটুকরো পকোড়া মুখে দিয়ে চিবোতে থাকে।কয়েক চুমুক দেবার পর ড.শর্মা এক টুকরো পকোড়া মুখে দিয়ে বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন আমি আগে ড্রিঙ্ক করতাম না। ড্রিঙ্ক করতে আমার ভাল লাগে না আবার না খেয়ে থাকতে পারিনা।
পল্টুর কথা বলতে ভাল লাগে না চুপচাপ পান করতে থাকে। ড.শর্মা বললেন, অনেক ছেড়েছি ছাড়তে ছাড়তে আজ আমি একা আর কত ছাড়বো বলুন তো?
--একা? আপনার বউ আছেন সন্তান আছে--।
--জানেন ড.সোম বিয়ে করলে বউ পাওয়া যায় মনের মত সঙ্গী মেলে ভাগ্যে।
আবার অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। ঈশ্বর তাকে একটা উপহার দিয়েছিল কিছুদিনের জন্য আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেল। ফিরিয়ে যদি নিবি তাহলে দেবার কি দরকার ছিল পল্টু ভাবে মনে মনে। চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে পল্টু জিজ্ঞেস করল, ড.শর্মা আপনার বাড়ীতে কে কে আছে?
--বউ আছে তার দুটো মেয়ে আছে।
--আপনার মেয়ে নয়?
--কে জানে আমার হতে পারে আবার নাও হতে পারে।শালা সোয়াইন।একটু নীরব থেকে ড.শর্মা আবার বলেন, জানেন ড.সোম আমরা হলাম ভদ্রলোক ভিতরে ক্ষত বিক্ষত হবো কিন্তু বাইরে শালা দাঁত কেলিয়ে থাকবো।
পল্টুর মাথা গুলিয়ে যায় নেশার জন্য এমন হচ্ছে নাকি? ড.শরমা কি সব ভুলভাল বকছেন?
বেয়ারা এসে বলল,স্যার মিসেস গিদোয়ানি।
--এসে গেছে?ড.শর্মা অসহায় বোধ করেন।
পল্টু বুঝতে পারে আর থাকা সমীচীন হবে না উঠে দাঁড়িয়ে বেয়ারাকে বিল দিতে বলে।ড.শর্মা বললেন,না না ড.সোম ইউ আর মাই গেষ্ট।ওকে গাড়ীতে তুলে দাও।
পল্টু বেয়ারাকে নিবৃত্ত করে বলল,আই এ্যাম ওকে। পল্টু বেরিয়ে যেতে মধ্য বয়সী এক মহিলা কেবিনে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,লোকটি কে?আগে তো দেখিনি?
--ড.সোম ব্রিলিয়াণ্ট সার্জেন।কলকাতায় টপ বলতে পারো।

এত রাত হল অঙ্গন ফিরল না। যশ বিন্দার ললিতাকে জিজ্ঞেস করেন,তোমার মামা কি রোজ এত দেরী করে?
ললিতা বলল,নারসিন হোমে ফোন করেন।
যশ বিন্দার ফোন করে জানলেন সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে। ললিতাকে বলল,তুমি খেয়ে নেও।
ললিতার অস্বস্তি হচ্ছিল কোনোদিম মামার আগে খায়নি তার উপর ডাক্তার দিদিমণি তাকে রান্না করতে না দিয়ে নিজে রুটি করেছে।দু-বেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস রুটি কেমন লাগবে কে জানে। কিন্তু আপত্তি বেশিক্ষণ টিকল না বাধ্য হয়ে ললিতা খেতে বসল।দিদিমণি নিজে তাকে পরিবেশন করলেন।ডাল দিয়ে কি একটা বানাইছেন খেতে ভালই লাগছে।লঙ্কা দিয়ে আচার পেঁয়াজ তড়কা রুটি দিয়ে ভোজ মন্দ লাগল না। ললিতা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
যশবিন্দার ঘরে গিয়ে জেসমিনকে ঘুম থেকে তুলে বলল, অনেক ঘুমিয়েছো এবার ওঠো না হলে সারারাত আমাকে জ্বালাবে।
বাচ্চাটি চোখ বড় করে যশবিন্দারের মুখের দিকে তাকিয়ে গিক করে হেসে দিল। যশবিন্দার নীচু হয়ে চুমু খেয়ে বোলে, তোমার ড্যাড এখনো ফেরেনি আর তোমার হাসি হচ্ছে?
বাচ্চাটি কি বুঝল কে জানে ঠোট ফুলিয়ে কেদে ফেলে। যশবিন্দার তাড়াতাড়ি মাই বের করে মুখে গুজে দিল।
কিছুক্ষণ পর শুইয়ে দিতে পা ছুড়ে খেলতে থাকে। যশবিন্দার মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
ললিতা বুইনের কান্না শুনতে পেয়েছে।ভাবল উঠে দেখতে আসবে,আবার চুপ হয়ে গেল। ঘুম আসছে না ললিতার,কখন মামা আসবে ভাবছে।এত রাত তো হয় না কোনো দিন।বুইন মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে কোনো সাড়া শব্দ নেই। ললিতা উঠে ব্যালকণিতে গিয়ে দাড়ালো। রাস্তায় লোক চলাচল কমে এসেছে।এইভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখল নীচে গাড়ী এসে দাড়াল।মনে হয় মামা এল।  কলিং বেল বেজে উঠল,মনে হয় এল।যশবিন্দার দ্রুত দরজা খুলতে গেল। ললিতা এসে দরজা খোলে উকি দিয়ে দেখল সিড়ির রেলিং ধরে ধরে মাম উঠছে।উপরে উঠে চোখাচুখি হতে পল্টূ হাসল।
ললিতা অবাক হয়,মামার কি শরীর খারাপ?  পল্টু দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল।
ললিতা দরজা বন্ধ করে এসে দেখল মামা অবাক হয়ে তাকিয়ে কি দেখছে।
পল্টু কি ভুল দেখছে? খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে যশ,গালে গাল লাগিয়ে শিশুটিও গভীর ঘুমে অচেতন।কি সুন্দর পবিত্র দৃশ্য।এগিয়ে গিয়ে ঝুকে পড়ে শিশুটির দিকে, যশবিন্দার চমকে উঠে বলল, কৌন?
চোখ মেলে যশ অঙ্গনকে দেখে উঠে বসে।টের পায় অঙ্গন নেশা করেছে।খাট থেকে নেমে পল্টুকে ধরে সোফায় বসিয়ে জুতো খুলে দিয়ে বলল,খাবে এসো।
--আমার ক্ষিধে নেই,ঘুম পাচ্ছে।
যশবিন্দার চেঞ্জ করিয়ে জেসমিনকে বাচিয়ে খাটে শুইয়ে দিল। একটা প্লেটে রুটি তড়কা নিয়ে এল। রুটি ছিড়ে মুখের কাছে ধরে বলল,হা করো।
পল্টু হা করে।এইভাবে তাকে খাওয়াতে লাগল। চারটে রুটি খেয়ে ফেলল অথচ বলছিল ক্ষিধে নেই। যশবিন্দার নিজে খেতে বসেছে।অঙ্গন নেশা করেছে।দিল্লীতে কখনো নেশা করতে দেখেনি। এত রাত অবধি কোথায় ছিল সে?একেবারে হুশ  নেই এখন কথা বোলে কোনো লাভ হবে না। কাল সকালে কথা বলা যাবে। ঘরে ঢুকে দেখল অঙ্গন ঘুমিয়ে পড়েছে। জেসমিনকে পাশে সরিয়ে অঙ্গনের পাশে শুয়ে পড়ে। ভাইরা দিল্লী থেকে শীঘ্রী আসবে খবর পেয়েছে।অঙ্গনের বাড়ী অনেক নিরাপদ।নার্সিং হোমও জানেনা এখানকার কথা। একটা হাত এসে তার কোমরে এসে পড়ল। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে যশবিন্দার। হাত দিয়ে তাকে টানছে, বুকের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে বলল,অঞ্জু তুমি রাগ করেছো?
যশবিন্দারের চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।আগের ওয়াইফের নাম।মনে হচ্ছে নেশার ঘোর কাটেনি।
6 years ago#83
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব




[৭০]



যশবিন্দার চোখের জল মুছে ফেলে।কোনো প্রত্যাশা নিয়ে সে কলকাতায় আসেনি। একমাত্র উদ্দেশ্য ভাইদের হাত থেকে নিস্কৃতি। জ্ঞান প্রকাশকে সে দেখেছে। লেখাপড়া বেশি জানে না। পিতৃপুরুষের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা। সারা দেশে অনেক লরি চলছে তার। পরমিতকে পার্টনারশিপ দিয়েছে। সে নিজে ডাক্তার অন্যর উপর নির্ভরশীল হবার দরকার নেই। বীরজী থাকলে আজ তাকে পালিয়ে বেড়াতে হতনা। কোনো স্বার্থ নিয়ে নয় জন্মে মাকে হারিয়েছে জেসমিন,নিরপরাধ শিশুটির জন্য মায়া পড়ে গেছে। বেশ মিষ্টি দেখতে হয়েছে। অঙ্গনের দিকে তাকালো নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।কলেজে দেখেছে কোনো নেশা ছিল না। বিবির প্রতি টান তার মনে শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে।জানি না বাইগুরুর মনের কি ইচ্ছে।পাশে ঘুমোচ্ছে জেসমিন,মনে হয় তাকে চিনতে পারে।যখন কাঁদে যশবিন্দার কোলে নিলে চুপ করে যায়।জেসমিনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে যশ।

ইকবালের মন ভাল নেই। গাড়ী গ্যারেজ করে বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়ে। নাজমা পোয়াতি হবার পর মিলন বন্ধ আছে। চিত হয়ে শুয়ে আছে চুপচাপ। নাজমা অস্বস্তি বোধ করে। বাড়ী ফিরে সারাদিনের কত গল্প করে রাতে শুয়ে শুয়ে,আজ একদম চুপচাপ।নাজমা পাশ ফিরে কনুইয়ে ভর দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনে কি ভাবতেছেন বলেন তো?
নাজমাকে বুকে তুলে নিয়ে ইকবাল জিজ্ঞেস করে, সাচা কইরা বলতো তুই আমারে ভালবাসিস?
--এইডা আপনে কেমুন কথা বলেন?
--তোকে যা জিজ্ঞেস করছি বল।
--সেইটা মুখে বলতে হয়?যত উল্টা পাল্টা কথা,নেশা করছেন নিকি?
--জানিস ডাক্তারসাব আজ নেশা করছে।
--বড় মাইনষের কথা ছাড়ান দ্যান।
--সরাব দূরে থাক কোনো দিন বিড়ি সিগারেট খাইতে দেখি নাই। তিন তলা পর্যন্ত উঠাইয়া দিয়া আসলাম।
নাজমার মন খারাপ হয়ে যায়। এই মানুষটা তারে বাঁচাইছেন।বিবিটা মারা গেল অখন একেবারে একা।
ইকবাল বলল,জানিস ডাক্তার সাহেব আমারে কি বলল? বলে কিনা ইকবাল তোমাদের আল্লা ভাল না।
--হায় আল্লা তোবা তোবা,আপনে কিছু বললেন না?
--কি বলবো?বড় মানুষ তারপর নেশা করেছেন। তারপর কি কইল জানিস ,দিলে যখন আবার ফিরিয়ে নিলে কেন?
--আপনে কি কইলেন?
--কি বলবো,আমার চোখে পানি এসে গেল।মেমসাহবরে খুব ভালবাতেন ডাক্তার সাহেব।
নাজমা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আপনে আমারে ভালবাসেন?
ইকবাল বউকে বুকে চেপে জিজ্ঞেস করে,সেইটা তুই বুঝতে পারিস না? সাধে কি কয় মেয়েমাইনষের মাথায় ঘিলু কম তারা বোঝে দেরীতে।
ইকবালের বুকে মুখ গুজে বলে নাজমা,আমার বুইঝা কাম নাই।আপনে বুঝলেই হবে।

খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় যশবিন্দার উঠে দেখল অঙ্গন ঘুমে কাতর। পাশে ঘুমিয়ে আছে জেসমিন। রান্না ঘরে ললিতার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।খাট থেকে নেমে রান্না ঘরে গিয়ে দেখল ললিতা চা করছে। জেসমিনের জন্য জল গরম করে দুধ তৈরী করে বলল,এখন মামাকে চা দিতে হবে না,ঘুমোচ্ছে। ফ্লাক্সে রেখে দাও ঘুম থেকে উঠলে দিও।
ভিজে কাপড় দিয়ে জেসমিনের চোখ মুছে দিয়ে বোতলের নিপল মুখে ভরে দিতে চুক চুক করে দুধ টানতে থাকে। দুধ শেষ হতে চোখ মেলে ফিক করে হাসলো। পাঞ্জাবির বোতাম খুলে অঙ্গনের দিকে পিছন ফিরে স্তন মুখে পুরে দিতে চুক চুক করে চুষতে থাকে। দাঁত হীন মাড়ির কামড়ে এক সুখানুভুতি আবিষ্ট করে,চোখ বুজে উপভোগ করে যশবিন্দার।
একসময় চোখ খুলে দেখতে পেল অঙ্গন তাকিয়ে আছে তার দিকে। লজ্জা পেয়ে পাঞ্জাবির বোতাম আটকে দিয়ে জেসমিনকে শুইয়ে দিল।দ্রুত খাট থেকে নেমে চলে গেল ঘরের বাইরে। ডাক্তার সোম উঠে বসে মেয়েকে দেখে। অঞ্জুর কথা মনে পড়ল।অবাক লাগে মা নেই তবু কেমন হাতপা ছুড়ে খেলা করছে। যশবিন্দার দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকল।
থ্যাঙ্কস বলে চায়ের কাপ নিয়ে পল্টু বলল, তুমি কখন এসেছো?
--কালকে এসেছি।
--রাতে ছিলে? কোথায় শুয়েছিলে?
--কোথায় আবার এখানে।
--তাই? আমি বুঝতেই পারিনি। পল্টু লজ্জা পায়।
--কি করে বুঝবে তোমার হুঁশ ছিল?
--আচ্ছা যশ তোমার বাড়ীর লোক আপত্তি করেনি?
--আমি একা।আপত্তি করার কেউ নেই।
পল্টু বুঝতে পারে যশ কলকাতায় ফ্যামিলি নিয়ে আসেনি।
--অঙ্গন বাড়ীতে তোমার মেয়ে এসেছে তাও তুমি বুঝতে পারোনি।
পল্টু চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে চা খায়।যশবিন্দার বুঝতে পারে বেচারি লজ্জা পেয়েছে, জিজ্ঞেস করল,মেয়েকে দেখেছো? একেবারে মায়ের মত হয়েছে।
--যশ তুমি যা করেছো আমি কোনোদিন ভুলবো না। রিয়ালি গ্রেটফুল টু ইউ।আচ্ছা তুমি কলকাতায় কবে এসেছো?
যশবিন্দার সব ঘটনা একে একে বিস্তারিত বলল অঙ্গনকে।মনে পড়ল দিল্লীতে একবার তাকে শসিয়েছিল যারা সেই পরমিত গুরমিত যশের সহোদর ভাই নয় জ্যাঠতুতো না খুড়তুতো ভাই।জ্ঞানপ্রকাশের সঙ্গে কেন তারা বোনের বিয়ে দিতে চায় কি স্বার্থ তাদের পল্টু বুঝতে পারে।তার ধারণা ছিল স্বামীর জন্য যশকে কলকাতায় আসতে হয়েছে, ভাইদের হাত থেকে নিস্তার পেতে পালিয়ে এসেছে এখন বুঝতে পারল। পল্টু বলল, আমি ভেবেছিলাম তুমি বিবাহিত।সকালে তাহলে দুধ খাওয়াচ্ছিলে কি করে?
লাজুক হাসে যসবিন্দার,ওতেই বাচ্চারা তৃপ্তি পায়। তারপর যেন অতীত হাতড়ে বলে, বিয়ের ইচ্ছে একবার খুব হয়েছিল কিন্তু তারপর আর ওসব নিয়ে ভাবিনি।
--জীবনে চলার পথে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন কতখানি আগে বুঝিনি এখন বেশ বুঝতে পারছি।
যশবিন্দার চোখ তুলে অঙ্গনকে দেখল।যেসমিন কেদে উঠতে যশ গিয়ে দেখে বলল, আমি কান্না শুনেই বুঝেছি।
জেসমিন পটি করেছে। যশবিন্দার তার ব্যাগ খুলে ডায়াপার বের করে আনে। পল্টু অবাক হয়ে দেখে যশ ময়লা হওয়া ডায়াপার খুলে ডেটল জলে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে মুছে পাউডার দিয়ে পরম মমতায় আবার নতুন ডায়াপার পরিয়ে দিল। দেখে কে বলবে যশের নিজের মেয়ে নয়।বাচ্চাটা আবার হাত-পা ছুড়ে খেলতে থাকে।
যশবিন্দার হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,কি দেখছো?
--তোমাকে দেখছি আর ভাবছি,এতসব শিখলে কোথায়?
--আউরত লোক জন্ম থেকেই শিখে আসে।
--জেসমিন খুব বুদ্ধিমতী।মাকে হারিয়ে ঠিক একটা মা খুজে নিয়েছে।
যশবিন্দার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, মগর তুমি বুদ্ধুই আছো।
পল্টু এক মুহুর্ত ভাবে তারপর হেসে বলল,তুমি ঠিকই বলেছো। অঞ্জুও বলতো,কি করে তুমি ডাক্তারী করো।
যশবিন্দার জেসমিনকে কোলে নিয়ে বলল,তুমি স্নান করে নেও। বেরোবে তো?
--তুমি বেরোবে না?
--না,কন্ট্যাক্ট সারভিস ছেড়ে দিয়েছি।
যশবিন্দার রান্না ঘরে চলে গেল। হাড়িতে ভাত ফুটছে। ললিতাকে মনে হল চিন্তামগ্ন।
--বাড়ীতে তোমার কে কে আছে? যশ জিজ্ঞেস করে।
--মা আছে দুই ছেলে-মেয়ে আছে। কতদিন আসছি কি করতেছে কে জানে।
--বাড়ির কথা মনে পড়ে?
ললিতা তাকিয়ে হেসে বলল, মনে তো পড়ে,মামাকে একা রেখে যাতি ইচ্ছে করে না।
--এখন আমি আছি,যাও ঘুরে এসো।
--আমি চিনি যাতি পারবো না,মামা বলিছেল গাড়ি করে পৌছে দেবে।
খাবার টেবিলে বসে কথাটা তুলল যসবিন্দার। পল্টু মুখ তুলে ললিতার দিকে তাকাল।
--তুমার অসুবিধে হলি না হয় পরে যাবো।ললিতা বলল।
--অসুবিধের কি আছে আমি তো আছি।তুমি দুরোজ ঘুরে এসো।যশবিন্দার বলল।
--ঠিক আছে ইকবাল তো গেছে ও চেনে তোমকে পৌছে দিয়ে আসবে।যশের দিকে তাকিয়ে বলল পল্টূ।
বাড়ীতে কেউ নেই ললিতা চলে গেছে। জেসমিন ঘুমোচ্ছে। যশবিন্দার মেয়েকে বুকের কাছে নিয়ে শুয়ে আছে। অঙ্গনের মনের ভাব বুঝতে পারে না,খুব সরল।এই সারল্যই তার আকর্ষণ।অথচ কত জটিল অপারেশন অনায়াসে করে।কলেজে ছাত্রাবস্থায় সব স্যারের প্রশংসা অর্জন করেছিল। অঙ্গনের নিস্পৃহতা তাকে আরও মরীয়া করে তোলে। আসুক আজ রাতেই একটা ফয়শলা করতে হবে।

বেলা গড়াতে থাকে সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। রাস্তায় লোক চলাচল বাড়ে ক্রমশ। নারসিং হোমে পর পর তিনটে অপারেশন করল।পল্টু পোষাক বদলে বেরোতে যাবে অফিসের সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলল,স্যার একটা ফোন এসেছিল আবার পরে করবে।অবাঙ্গালি মনে হল।
--কি ব্যাপারে? এ্যাপয়ণ্টমেণ্টের ব্যাপারে আমি তো কিছু বলিনা।
--বলছিল পারশোনাল ব্যাপার।
--ঠিক আছে কি বলে শুনে রাখবেন,আমি আসছি।
ড.সোমের মাথায় চিন্তা বাড়ীতে বাচ্চা কি করছে,সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে এমন সময় ভদ্রলোক ছুটে এসে বললেন,আবার ফোন করেছে।
ড.সোম ফোন ধরে বলল,ড.সোম...পরমিত?কে পরমিত?...ড.সোম চোখ তুলে দেখল ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে বলল,কেন তার কাছে কি দরকার?.... শি ইজ মাই ওয়াইফ....ন্যাচারালি হ্যা আমার কাছেই আছে...এনি প্রবলেম?..ওকে থ্যাঙ্ক ইউ।
ফোন রেখে দিয়ে ভ্রু কুচকে কি ভাবল। তারপর সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেল।
শী ইজ মাই ওয়াইফ শুনে লোকটি দপ করে নিভে গেল। মনে মনে হাসে পল্টু। ললিতা বাড়ীতে নেই যশ একা একা কি করছে কে জানে। নীচে নেমে দেখল ড.শর্মা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

রান্না হয়ে গেছে জেসমিনকে নিয়ে শুয়ে আছে যশবিন্দার। রাত হল অঙ্গন এখনো ফেরেনি। নার্সিং হোমে এতক্ষণ থাকার কথা নয়। খবর পেয়েছে খুব শীঘ্রি পরমিতরা কলকাতায় তার খোজে আসতে পারে।কলকাতায় তাকে কেউ চেনে না, কি করে খুজে বের করবে তাকে? ড্যাফোডিল নার্সিং হোমে তার ভবানীপুরের ঠিকানা দেওয়া আছে। শতদ্রু বিপাশা নদীর দেশ থেকে ভাগিরথীর দেশে এসে কত কি মনে পড়ছে,ভাবতে ভাবতে একসময় জেসমিনকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে যশবিন্দার। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে।দ্রুত উঠে বসে দেখল অকাতরে ঘুমোচ্ছে জসমিন।খাট থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। চোখে চোখ পড়তে লাজুক হাসে পল্টু।
--অঙ্গন তুমি তো ড্রিঙ্ক করতে না।যশ দরজা বন্ধ করতে করতে বলল।
পল্টু বলল,হ্যা তুমি ঠিকই বলেছো। আসলে কি জানো নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে নিজেকে খুব একা মনে হল ড.শর্মা বললেন---।
--বাসায় তোমার মেয়ে রয়েছে আমি রয়েছি হোয়াই আর ইউ ফিলিং লোনলি?
পল্টু ঘুরে দাড়াতে গিয়ে টলে যায় যশ এগিয়ে জড়িয়ে ধরে। অবাক বিস্ময়ে যশের দিকে তাকিয়ে থাকে।ধীরে ধীরে অঙ্গনকে একটা সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও।খেতে দিচ্ছি।
সকাল হতে যশ চা এগিয়ে দিল।পল্টু বলল,আমার কাছে একটু বোসো।
যশবিন্দার পাশে বসতে বলল,পরমিত কে?
--আমার কাজিন, কেন?
--আমাকে কাল ফোন করেছিল।
যশ কয়েক মুহূর্ত ভাবে তারপর বলল,আমার এখানে থাকা আর উচিত হবেনা, ভাবছি ফিরেই যাব।
--কোথায় যাবে?
--দিল্লী ফিরে যাবো।
--দিল্লী? কেন কলকাতায় এসেছিলে তাহলে?
যশবিন্দার মনে মনে হাসে তারপর বলে,কেন এসেছিলাম জানি না হয়তো ভেবেছিলাম এখানে এলে ওদের হাত থেকে রেহাই পাবো। এখন মনে হচ্ছে যা আছে আমার নসিবে তাই হবে তোমাকে আর বিপদে জড়াতে চাই না।
--আমার বিপদ হবে? আমার আর কি বিপদ হবে?
--অঙ্গন তুমি জানো না পরমিত সহজে ছাড়বে না।একদিন আমি কোথায় আছি ঠিক খুজে বের করবে।
--পরমিত জানে তুমি আমার কাছে আছো।
যশবিন্দার অবাক হয়ে অঞ্জনকে দেখে জিজ্ঞেস করল,কি করে বুঝলে?
--আমি ওকে বলেছি।
--তুমি?আর ইউ ম্যাড অর ইডিয়ট?
জেসমিনের কান্না শুনে যশবিন্দার উঠে চলে গেল। স্তন বের করে মুখে গুজে দিতে কান্না থেমে যায়। ফিরে এসে আবার সোফায় বসে।পল্টু আড়চোখে দেখল স্তন বের করে নিসঙ্কোচে জেসমিনের মুখে স্তন ভরে দিয়েছে। অঞ্জনকে বলল,তুমি পরমিতকে বললে আমি এখানে আছি? ও কিছু বলল না?
পল্টু মিটমিট করে হাসতে থাকে। যশবিন্দারের চোখে জল এসে যায় বলল,তার মানে তুমি চাও পরমিত এসে আমাকে নিয়ে যাক? এত কৌশলের দরকার ছিল না আমাকে সরাসরি বলতে পারতে।যশের অভিমান হয় অঙ্গনের ইচ্ছে নয় তার এখানে থাকা।
--ছিঃ ছিঃ তুমি একী বলছো যশ?তুমি না থাকলে আমার কি অবস্থা হত আমি জানি না?
--তা হলে কেন তুমি পরমিতকে বললে আমি এখানে আছি?ও কেমন গুণ্ডা প্রকৃতি তুমি দেখোনি দিল্লীতে?তুমি জানো না? একরাশ বিরক্তি ঢেলে দিল যসবিন্দার।
--জানি বলেই তো আমাকে মিথ্যে বলতে হল।
--তোমার কথা আমি বুঝতে পারছিনা। তুমি বলছো পরমিতকে বলেছো আবার বলছো মিথ্যে বলেছ।প্লিজ অঙ্গন কি বোলেছো আমাকে সত্যি করে বলো।
পল্টু জেসমিনের গালে হাত বোলায় তারপর বলে,রাগ করবে নাতো?
--রাগ করবো? কেন কি বলেছো?
-- শি ইজ মাই ওয়াইফ। কি রাগ করেছো?
যশবিন্দার চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে পল্টু বলে,ফস করে মিথ্যেটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
জেসমিন ইঙ-ইঙ শব্দে ফিক করে হাসল।ঝড় উঠল যশের মনে শতদ্রু নদীতে যেন বান উথলে পড়ল জোয়ার।সারা শরীরে সুখের শিহরণ বয়ে গেল।জেসমিনকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করে যশবিন্দার,অঙ্গন কি বলল ঠিক শুনেছে তো? পল্টু জিজ্ঞেস করলো,তুমি রাগ করেছো?
আড়চোখে অঙ্গনকে দেখে মৃদু স্বরে বলে,ইউ ক্যান মেক ইট ট্রু।
পল্টু ভ্রু কুচকে যশকে দেখে জিজ্ঞেস করল,রিয়ালি? তারপর গলা জড়িয়ে ধরে যশের ঠোটে ঠোট চেপে ধরে।যশের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।
উম-উম করে কোনোমতে ঠোট ছাড়িয়ে নিয়ে জেসমিনকে বলল,ইয়োর পাপা ইজ ভেরি নটি।
উঠে দাড়াতে পল্টু হাত চেপে ধরে বলল,কোথায় যাচ্ছো?
--রান্না করতে হবে না?তুমি বেরোবে তো?
--আজ রবিবার,কোথায় বেরোবো?
--বেকার বসে থেকে বুঝতে পারিনা কবে কি বার।রবিবার কি না খেয়ে থাকবে?
পল্টু হাত ছেড়ে দিল।যশবিন্দার কোমর দুলিয়ে জেসমিনকে নিয়ে চলে যায়। পল্টু মুগ্ধ দৃষ্টিতে গুরু নিতম্বের দিকে তাকিয়ে থাকে।অঞ্জনার চলা ছিল ধীর যশ চলে ভঙ্গীটা পুরুষালি।দিল্লীতে একবার কৌশল করে তাকে সিডিউস করেছিল কিন্তু অঞ্জনার প্রকৃতি ছিল ভিন্ন।

যশবিন্দার ফিডিং বোতল জেসমিনের মুখে পুরে দিয়ে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে সুখ স্বপ্নে ভাসতে থাকে। মজা নদীতে অনুভব করে আলোড়ন। পরমিতকে ভয় পায় না যশ। কিন্তু পরমিত এলে হয়তো তার সঙ্গে চলে যেত।এখন তার মনে প্রত্যয় বাসা বাধে।একসময় সেও জুডো ক্যারাটে শিখেছিল জ্ঞান প্রকাশের মত কয়েকটাকে নিজেই ঘায়েল করতে পারে।মেঝেতে দাঁড়িয়ে ঝুকে দুধ খাওয়াচ্ছে। খোলা পিঠে শীতল স্পর্শ পেয়ে বুঝতে পারে অঙ্গনের উপস্থিতি। পল্টু পিঠের উপর গাল রেখেছে। যশ বাধা দেয় না,মনে মনে হাসে।
মানুষ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে আবার পেলে হারাবার ভয় তাকে পেয়ে বসে। অঞ্জনার কাছে যা পেয়েছিল অঙ্গন সে কি পারবে দিতে? করতলে যশের পাছায় চাপ দিল অঙ্গন। শরীরে অনুভব করে সুখের বান।এখনও রান্না বান্না কিছু হয় নি। অনিচ্ছে সত্বেও যশবিন্দার বলল, এখন না পরে। পল্টু হেসে সরে গেল। যশ রান্নাঘরে চলে গেল।বগলে হাত বুলিয়ে বুঝতে পারে কাটা কাটা চুল।স্নানের সময় ভাল করে সেভ করতে হবে। অঙ্গনকে দিয়ে সাক করানোর ইচ্ছে হয় খাওয়া দাওয়ার পর দেখবে রাজি হয় কিনা? আঙুল দিয়ে কয়েকবার খেচলেও ভিতরে একবারই ল্যাওড়া নিয়েছে।ইশারা ইঙ্গিত করেও যখন অঙ্গনকে প্রলুব্ধ করতে পারেনি তখন একরকম জোরকরে অঙ্গনকে দিয়ে চুদিয়েছে।অঙ্গন বিবাহিত জানলে হয়তো চোদাতো না।কতদিন হল দেশ ছেড়ে এসেছে মায়ের কথা মনে পড়ে। বিয়ের পর অঙ্গনকে দেশে নিয়ে যাবে। যশকে নিয়ে মায়ের খুব চিন্তা অঙ্গনকে দেখলে খুশি হবে। এতবড় ডাক্তার কিন্তু ভিতরে ভিতরে একেবারে ছেলে মানুষ।
খুব সংযমী 'এখন না' বলতেই চলে গেল।ঠোটে হাত বোলায় বেশ ফুলে উঠেছে,এভাবে কেউ চুমু খায়? দস্যু একটা। রান্না শেষ করে বাথরুমে ঢুকল যশবিন্দার।
সযত্নে বস্তিদেশের বাল কামালো সাবান ঘষে ঘষে শরীরের মালিন্য ধুয়ে ফেলল যশ। মনটা আজ বেশ খুশি খুশি। পাঞ্জাবে জন্ম বাকী জীবন বাঙলার বউ হয়ে কাটিয়ে দিতে নিজেকে প্রস্তুত করে যশবিন্দার। জ্ঞান প্রকাশের প্যাচার মত মুখটা মনে পড়ে হাসি পেল।সারা শরীর ঝর ঝরে লাগছে। বুকে তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুম হতে বেরিয়ে এল।সদ্যোস্নাতা যশবিন্দারকে দেখে চোখ ফেরাতে পারে না পল্টু।হালকা মৃদু গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।যশবিন্দার জিজ্ঞেস করে,কি দেখছো?
--যশ তুমি খুব সুন্দর।
যশবিন্দার দৃষ্টিবানে বিদ্ধ করে চটুল হেসে অন্য দিকে মুখ ফেরায়। পল্টু নিজেকে সংযত করতে পারে না,ঝাপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে বাহুবন্ধনে। যশ হেসে আপত্তি করে,কি হচ্ছে তোয়ালে খুলে যাবে।
খুলে গেল না ইচ্ছে করে তোয়ালে খুলে দিল,খসে পড়ল মাটিতে তোয়ালে। সম্পুর্ণ নিরাভরণ যশবিন্দার পল্টু যশের বুকে মুখ গুজে দিল নীচু হয়ে নাভিমুলে চুমু খায় যশ মাথা নিজের গুদের দিকে ঠেলে দিল।পল্টু দু-হাতে পাছা চেপে ধরে চেরার ফাকে মুখ চেপে ধরে। যশ পা ফাক করে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে।কলিং বেল বেজে ওঠে।পল্টু দাঁড়িয়ে পড়ল যশ তোয়ালে তুলে ছুটে ঘরে ঢুকে গেল। পল্টু জিজ্ঞেস করে,কে-এ-এ?
বাইরে থেকে আওয়াজ এল,মামা আমি।
ললিতার গলা মনে হচ্ছে। একা একা কি করে এল? পল্টু দরজা খুলে অবাক,ললিতার সঙ্গে এসেছে দিলীপ।
দিলীপ বলল,ললিতার কাছে সব শুনে আসবো-আসবো করছি।আজ আসবো শুনে ললিতা বলল,আমিও যাবো।
--ভাল করেছিস,ভিতরে আয়।
দিলীপ ঢুকে সোফায় বসল। ললিতা জিজ্ঞেস করল,বুন কই?
যশবিন্দার জেসমিনকে কোলে নিয়ে এল,ললিতাকে বলল,ওকে একটু ধরো আমরা খেয়ে নিই।
দিলীপ জিজ্ঞেস করে,এখনো খাওয়া দাওয়া করিস নি?
--এইবার খাবো।তোরা একটূ বোস।
যশবিন্দার টেবিলে খাবার সাজায়।পল্টূ বলল,যশ তুমি তো দিলীপকে চেনোনা অঞ্জু চিনতো। আমরা একস্কুলে পড়াশুনা করেছি।এ ড.যশবিন্দার....।
যশবিন্দার হাসি বিনিময় করে। পল্টু বলল,ভাবছি আজ তোদের সঙ্গে বাড়ী যাবো। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে হয় না। সব কিছুর সঙ্গে অঞ্জুর স্মৃতি এমন জড়িয়ে আছে বাড়ী ফিরলে মন খারাপ হয়ে যায়। যশবিন্দার কান খাড়া করে অঙ্গনের কথা শোনে।সেও চায় অঞ্জনার ছায়া থেকে দূরে যেতে তাহলে আরও নিবিড় করে পাবে অঙনকে।
খেতে খেতে কথা হয় দিলীপের সঙ্গে। কিভাবে মারা গেল অঞ্জনা? বিস্তারিত সব-- অনুযোগ করলো কেন তাকে খবর দেয়নি? সব কিছু এমন দ্রুত ঘটে গেল কাউকে খবর দেবার কথা মনে হয় নি।নীচে হর্ণ বাজলো।পল্টু বলল,ললিতা দেখ ত মনে হয় ইকবাল এসেছে।দাড়াতে বল।
6 years ago#84
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


​[৭১]​



খেতে খেতে কথা হয় দিলীপের সঙ্গে। কিভাবে মারা গেল অঞ্জনা? বিস্তারিত সব-- অনুযোগ করলো কেন তাকে খবর দেয়নি? সব কিছু এমন দ্রুত ঘটে গেল কাউকে খবর দেবার কথা মনে হয় নি।
পল্টু খেয়েদেয়ে মুখ ধুয়ে এসে বসল।খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করে পাড়ার খবর।কথায় কথায় তপাদার মেয়ের কথা এল।বড় চাকরি পেয়েছে কিন্তু তপাদা তবু চায়ের দোকান চালায়।নীরার ভাগ্যটা খারাপ,বরুন ওকে নাকি মারধোর করে।পল্টু অবাক হয়ে তাকায়। দিলীপ বলল,নীরাকে ভুলে গেলি সঞ্জুর বোন?​ ​
পল্টু উদাস হয়ে যায়।আশা করেছিল নীরার ব্রাইট গিউচার,সুন্দর গান গাইত, দেখতেও খারাপ ছিল না।আসলে বিধাতার ইচ্ছেকে খণ্ডাবে সাধ্য কি? না হলে সে নিজে ডাক্তার তবু বেগমকে ধরে রাখতে পারল কই?
ম্যামের কথা ভুলতে পারছে না পল্টূ।দিলীপ বুঝতে পেরে অন্য প্রসঙ্গ বদলে বলল,
রমেন কাকু মণিকাআণ্টিকে বিয়ে করে অন্য পাড়ায় চলে গেছে।
কিন্তু পল্টুর মুখ দেখে বুঝল মনে করতে পারছে না,লায়লির মা মণিকা আণ্টি ভুলে গেলি?
--রমেন কাকুর বউটা খুব কষ্ট পেয়ে মরেছে।পল্টু বলল।
--আজও সবাই তোর কথা বলে।দিলীপ বলল।
--অঞ্জনার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনি।
দিলীপ চুপ করে কি যেন ভাবে।যশ হাতের কাজ শেষ করে এসে বসল।দিলীপ এক সময় দ্বিধা নিয়ে বলল,তুই বলেছিলি বাইরে থেকে দেখে সবটা বিচার করা যায় না।
--এখনও বলি বাহ্যিক পরিচয় মানুষের আসল পরিচয় নয়।
--কিছু মনে করিস না।আমি শ্বশুর মশায়ের কাছে সব শুনেছি।তোর মামাই এইসব করেছিল।শ্বশুরমশায় ছিল তোর মামার পরামর্শদাতা।
পল্টু হাসল,রমি জানে এসব?
--ঐ তো এই নিয়ে বাবাকে অনেক বুঝিয়েছে।জানিস জগা উকিল আর আগের মত নেই।শ্বশুর মশায় বলছিল,ম্যামকে জড়িয়ে তোর বদনাম করাই ছিল তোর মামার উদ্দেশ্য।
--থাক দিলীপ ভাল লাগে না কাঁদা ঘাটতে।মামা কেমন আছে রে?
--ভালই আছে,পাড়ায় বেশি মেশে না।আর এখন অপুদি কাউন্সিলর বলতে পারিস পাড়ার মাথা।
যশ অবাক শুনছিল তার বোঝার কথা নয়।দুই ​দোস্তের​ কথাবার্তায় অঙ্গন সম্পর্কে জানতে পারছে অনেক কিছু।হি ইজ ভেরি পপুলার ইন লোক্যলিটি।এক কালচারের মধ্যে বেড়ে উঠেছে তবু যশের মনে কোনো মনে দ্বিধা নেই।অঙ্গনের উপর তার অনেক ভরসা।বাহ্যিক পরিচয় মানুষের আসল পরিচয় নয়,অঙ্গনের এই কথাটা তার খুব ভাল লেগেছে।জেসমিনের কান্না শুনে যশ উঠে গেল।
--যশবিন্দার দিল্লীতে আমার সঙ্গে পড়ত,অঞ্জুকে যে নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছিল, যশ সেখানেই ডাক্তার হিসেবে ছিল। ও না থাকলে মেয়েটার কিযে হতো--।
--শুনেছি ললিতার কাছে।
--একেবারে নিজের সন্তানের মত যত্ন করে।পল্টু বলল।
দিলীপ অবাক হয়ে পল্টুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর পল্টু বলল,এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করে নারে,সর্বত্র জড়িয়ে আছে অঞ্জুর স্মৃতি।সারাক্ষন ভাল লাগে তুই বল?
--ঐ ডাক্তার ম্যাডাম কি আন-ম্যারেড?
--কে যশ?পল্টূ হাসল।
দিলীপ আর কিছু বলেনা।পল্টূ বলল,অঞ্জু ওকে চিনতো।শিখ পাঞ্জাবী--ওর জীবনটাও অদ্ভুত।ধীরে ধীরে সব কাহিনী দিলীপকে বলল।
--এখানে ঐ সব মস্তানি চলবে না।কিন্তু--।
--কিন্তু কি?
--কিছু মনে করিস না মানে--।
--বুঝেছি।পল্টূ হাসল।এইভাবে একসঙ্গে থাকলে লোকে নানা কথা বলতে পারে?ভাবছি আমি ওকে সামাজিক স্বীকৃতি দেবো।
দিলীপ স্বস্তি বোধ করে।পল্টুর সঙ্গে মানাবে মনে মনে ভাবে।যশবিন্দার আবার আসতে বিষয়টা নিয়ে আর কথা হয়না।  
একসময় দিলীপ জিজ্ঞেস করল,তুই কি সত্যিই এখান থেকে চলে যাবি?আর ফিরবি না?
পল্টু হাসল,যশবিন্দারের দিকে তাকায়। যশ বলল,আমি পরদেশি,আমার কাছে এখানে-ওখানে সবই সমান।
--বাপি তো বাড়ী থেকেই নার্শিং হোমে যেতো।পল্টূ বলল।
পল্টু পাড়ায় ফিরতে পারে শুনে দিলীপের খুব ভাল লাগে।এই শিখ মহিলাকে আজই প্রথম দেখল।মনে একটা প্রশ্ন ঘুর ঘুর করে,পল্টুর সঙ্গে ইনি মানিয়ে চলতে পারবে তো?  পল্টূ ছেলেবেলার বন্ধু হলেও আজ আজ আর সেই পল্টু নেই,হুট করে জিজ্ঞেস করতে সঙ্কোচ হয়। দিলীপকে দেখে পল্টূ আন্দাজ করতে পারে কি ভাবছে।হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,যশ তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি।
পল্টু বাথরুমে ঢুকে গেল।যশবিন্দার ললিতাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,জেসমিন কি করছে?
--কে বুইন?বুইন ঘুমায়।
--তুমি এখন চা করো।
দিলীপ মাথা নীচু করে ভাবছে।একা একা এই পাঞ্জাবী মহিলার সামনে বসে অস্বস্তি বোধ করে।কতক্ষণে পল্টু আসবে অপেক্ষা করে।যশবিন্দার জিজ্ঞেস করে,ড.সোমের বাড়ী এখান থেকে কত দূর আছে?
--বেশি দূর না,গাড়ীতে মিনিট কুড়ি মত লাগবে।
--মিসেস সোম আপনার এলাকায় থাকতেন?
--হ্যা অঞ্জনা ম্যামের আমাদের ওখানে ফ্লাট ছিল।খুব ভাল মহিলা ছিলেন?
--আমাকে কেমন লাগে?
দিলীপ অপ্রস্তুত বোধ করে।এরকম প্রশ্ন প্রত্যাশা করেনি।হেসে বলল,পল্টু বলে মানুষ কেউ খারাপ নয় পরিস্থিতি মানুষকে বদলায়।
--রাইট বঙালি পাঞ্জাবি মানুষের বাইরের পরিচয়।আসলে সবাই আমরা মানুষ। জেসমিন কথা বলতে পারে না।ধীরে ধীরে কথা বলতে শিখবে।যে পরিবেশে বড় হবে সেই পরিবেশের প্রভাবে সে বড় হবে।হ্যা কি না?
দিলীপের মজা লাগে বাংলায় বললেও উচ্চারণটা অন্য রকম শুনতে ভাল লাগে।সেই আড়ষ্টভাব অনেকটা কমেছে।
--আপনি পাঞ্জাবে থাকতেন?
--পাঞ্জাবে জন্মালেও দিল্লীতে থেকে পড়াশুনা করেছি।অঙ্গন বলল না গড উইল ডিসাইড এভ্রিথিংস।ওর সাথে দেখা হবার আগে আই ডিড'নট ইমাজিন যে বাঙালি হয়ে যাবো।​তবে বাঙালি বরাবর আমার পছন্দ। ​যশ মিষ্টি করে হাসল।
দিলীপ চোখ তুলে যশের দিকে তাকাল।যশ বলল,এখনো আমাদের সাদি হয়নি।আচ্ছা আপনাদের মহল্লায় সবাই বাঙালি আছে?
দিলীপ একটু ভেবে হেসে বলল,মোটামুটি সবাই বাঙালি।
--ভাবানীপুরে অনেক পাঞ্জাবী আছে।আমার কিছু ডিস্ট্যান্স রিলেটিভ ওখানে আছে।
--এখানে আপনার কোনো অসুবিধে হবেনা।আপনি প্রাকটিশ করবেন না?
--সেটা আপনার বন্ধুর উপর ডিপেণ্ড করে।ইচ্ছা আছে এখুনো কথা হয়নি।মেয়েটাকে নিয়ে সমস্যা আছে।
কথাটা ভাল লাগে দিলীপের,যশবিন্দারের এই মাতৃসুলভভাব মুগ্ধ করে।​আরো অনেক কথা হল।কিভাবে অঙ্গনের আগের বউ রিলেসন হয়েছিল,আরো অনেক কিছু।​
পল্টু বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।যশ উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল।পল্টূ বলল,এখানে কেমন একটা ছাড়া ছাড়া ভাব।কেউ কারও খোজ নেয় না।পাড়ায় একটা হোমলি পরিবেশ জেসমিনও অনেক কম্ফোর্ট বোধ করবে।
চা স্ন্যাক্স নিয়ে ললিতা আসে,যশ তার পিছনে।পল্টূ বলল,ইকবালকে ডাকো।
যশ ব্যালকনিতে গিয়ে ইকবালকে ডাকতে গেল।পল্টূ বলল,দিলীপ তুই একটা কাজ করে দিবি?
দিলীপ চায়র চুমুক দিতে গিয়ে চোখ তুলে তাকালো।পল্টু বলল,মিতামাসীকে বলে দিবি
ঘর দোর একটু পরিস্কার করে রাখতে?কয়েকদিনের মধ্যে ভাবছি যাবো।
--ঠিক আছে।তুই আমার অফিসে একটা ফোন করে জানাবি কবে যাচ্ছিস।
একটা কাগজে দিলীপ ফোন নম্বর লিখে দিল।
ইকবাল ঢুকে বলল,সালাম সাব।
--ভাই ইকবাল আজ আর কোথাও বের হবোনা,তুমি ওকে একটু পৌছে দিয়ে বাড়ি চলে যেও।
--জ্বি সাব।
--বোসো চা খেয়ে যাও।
দিলীপ বলল,আসিরে ললিতা।
ললিতা হাসলো।
ওরা চলে গেল।যশবিন্দার ব্যালকণিতে গিয়ে দাড়ায়।নীচে নেমে দিলীপ উপরের দিকে তাকাতে যশবিন্দার হাত নাড়ে।দিলীপ হাত নেড়ে গাড়ীতে উঠে বসলো।দিলীপের মনে হল পল্টুর এইবারের বউটা খুব জলি।আগের মত গম্ভীর নয়। যশের মনে শঙ্কার ছাপ। অঙ্গনের মহল্লা কেমন হবে,কোনো ঝামেলা হবে কিনা? রাস্তায় আলো জ্বলে উঠল।দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে মনটা হাজিপুরে চলে যায়।লেখাপড়ায় ভাল ছিল সবাই তাকে ভালবাসতো।একান্নবর্তী পরিবার,চাচাজি চাকরি জন্য দিল্লী চলে গেল।বাবুজি মারা যাবার পর সংসারটা ভেঙ্গে গেল।গুরমিত পরমিত চাচাজির কাছে চলে গেল।চণ্ডিগড় থেকে ডাক্তারি পাস করে দিল্লীতে পিজি পড়তে আসে।গুরমিত পরমিত তখন ব্যবসা করে।দিল্লীতে অঙ্গনের সঙ্গে আলাপ হয়।তখন জানতো না অঙ্গন সাদিসুদা।ভাল লেগে গেলে কেউ বেশি ভাবতে চায় না।বাঙালি লোক সফট হার্টেড, শুনেছিল।চোখে স্বপ্ন বাসা বাধে।যশ নিজের মনে হাসল।
পল্টু পাশে এসে দাড়ালো।কেউ কোনো কথা বলেনা।কিছুক্ষণ পর পল্টু বলল,ভাবছি এখানে রেজিস্ট্রি করে তারপর যাবো।
--অঙ্গন তুমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবে না?সত্যি করে বলবে আমি কিছু মাইণ্ড করবো না।আমার এক্সপিরিয়েন্স আমাকে শক্ত করে দিয়েছে।
পল্টূ দেখল যশ কঠিন কিছু শোনার জন্য মনে মনে প্রস্তুত।কি প্রশ্ন করতে পারে? জিজ্ঞেস করে,মিথ্যে বলবো কেন?
--তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালবাসো?
--ভাল কথা বলেছো।আমিও ভাবছিলাম আমি কি যশের অবস্থার সুযোগ নিচ্ছি? তোমাকে ভাল লাগলেও আমি বলতে পারছিলাম না সঙ্কোচের জন্য বলতে পারছিলাম না।একথা ঠিক অঞ্জু থাকলে হয়তো আমার মনে একথা আসতো না কিন্তু আজ অঞ্জু নেই--।পল্টুর গলা ধরে আসে।
যশবিন্দার বলল,ওকে অঙ্গন ওকে।তোমাকে আর বলত হবেনা।তুমি মণ খারাপ কোরনা,আমি তো আছি।পল্টুর বুকের উপর মাথা রাখে যশ।পল্টু জড়িয়ে ধরে যশের চুলে বিলি কেটে দেয়।
6 years ago#85
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


[৭২]


লেকভিউ নার্সিং হোমে গাড়ী দাড়াতে পল্টু নেমে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। স্বপ্না আঢ্যের কাছে যেতে সঙ্কোচ বোধ করে।অন্য কাউকে দিয়ে রেজিস্ট্রি করাবার কথা ভাবে। আগে সব অঞ্জনা করেছিল কিন্তু যশের পক্ষে সম্ভব নয়।কলকাতাকে এখনও ভাল করে চেনেনি।নিজের ঘরে বসতে একজন নার্স পাখা ঘুরিয়ে দিয়ে গেল।জেসমিনের কথা মনে পড়ল।বেরোবার সময় দেখে এসেছিল ঘুমোচ্ছে।মেয়েটা খুব ঘুমায়।একজন নার্স টেবিলে ফাইল রেখে বলল,স্যার পেশেণ্ট পাঠাবো?
--আজ অপারেশন নেই?
--ছিল, ম্যাডাম ড.শেঠিকে দিয়েছে।
--আচ্ছা পাঠান।
পাশের চেম্বারে রোগী ঢুকল।নার্স মহিলাকে শুইয়ে প্রেশার ওজন নিল।
ড.সোম গিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করে।তারপর আবার নিজের জায়গায়  ফিরে এসে প্রেস্ক্রিপশন লিখে দিল।আবার একজন এল।এভাবে পেশেণ্ট দেখতে থাকে।
আকাশে আলো কমে এসেছে,আলসেমী করে শুয়ে আছে।সময় হলে ললিতা নিশ্চয়ই চা করে ডাকবে।​কলকাতায় এসেই ​গাড়ী বুক করে​ছিল  কোনো খবর নেই এখনো,ইচ্ছে করেই অঙ্গণকে বলেনি।দিল্লীতে গাড়ি চালাতো।অঙ্গনের সঙ্গে কথার পর নিজেকে আর কুমারী মেয়ে বলে মনে হয়না।
রোগী দেখতে দেখতে  সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে সবে বসেছে, বেয়ারা চা দিয়ে বলল,ম্যাডাম দেখা করে যেতে বললেন।ভালই হল মাম্মীর সঙ্গে তারও দরকার আছে।জুতো পরে উপরে উঠে গেল।মাম্মী বললেন,এসো বাবা।
পল্টূ বুঝতে পারে মাম্মী তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।মাম্মী কেন ডেকেছেন শুনে নিজের কথা বলবে।পল্টু সোফায় বসল।
--মেয়ে এখন কার কাছে আছে?
পল্টু হাসলো।যশের কথা মাম্মী কিছু জানে না।সংক্ষেপে মাম্মীকে সব বলল।মাম্মী হাসলেন।পল্টু হাসির কারণটা বোঝার চেষ্টা করে।
--ড্যাফোডিলে ছিল,গাইনি?ছিল মানে এখন যায়না?পার্বতী ম্যাম জিজ্ঞেস করলেন।
--কাজ ছেড়ে দিয়েছে।
--আমি একটা কথা বলবো?তোমার মা থাকলেও এইকথা বলতেন।
পল্টূ চোখ তুলে মাম্মীর দিকে তাকায়।
--অনি এলে এবার বিয়ে দিয়ে দেবো।তোমার তো বয়স তেমন নয়।তুমি আবার বিয়ে করো।জীবনে একজন সঙ্গী খুব দরকার।অমানুষিক পরিশ্রম করত অনু মানে তোমার ড্যাড,তারপর লক্ষ্য করেছি ছটফট করতো একটা আশ্রয়ের জন্য--।মাম্মী আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে অন্য ঘরে চলে গেলেন।মাম্মী বাপিকে খুব ভালবাসতেন।একটু পরে মাম্মী ফিরে এসে বললন, স্যরি একটু ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম।তারপর বললেন,​ ​জানো পল্টূ আমার মনে হয় একজন বিধবার চেয়ে একজন বিপত্নীকের জীবন আরো কষ্টকর।
--মাম্মী আমি যশকে বিয়ে করবো,যশও সম্মতি দিয়েছে।
--ওর বাড়ীর লোকজন--?
--সে রকম কেউ নেই।
--শিখ মেয়েরা বেশ স্টাবর্ণ এ্যাণ্ড টলারেন্স হয়।রেজিস্ট্রি করবে তো?
--হ্যা কিন্তু আমি তো কাউকে চিনি না।
--ওকে।তুমি কদিন রেস্ট নেও,ইউ লুকস ভেরি টায়ার্ড। তোমার কেসগুলো ড.শেঠীকে দিয়েছি। দুপুরবেলা তোমার ফ্লাটে রেজিস্টার চলে যাবে।
পল্টু উঠে মাম্মীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।মাম্মী কপালে চুমু দিয়ে বললেন,আমি তোমার মাম্মী কোনো অসুবিধে হলে আমাকে বলতে হেজিটেট কোরোনা। তুমি আর অনি আমার কাছে আলাদা নও।
নীচে নেমে পল্টূ গাড়ীতে উঠল।রাস্তায় বাতি স্তম্ভে আলো জ্বলে উঠেছে।আয়েশে শরীর এলিয়ে দিয়ে বসল।একটা চিন্তা দূর হল।মাম্মী বলছিলেন,বউ না থাকা খুব কষ্টের।অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। অঞ্জু থাকতে গায়ে আচ লাগতে দেয়নি।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।কাল সকালে দিলীপকে একটা ফোন করতে হবে।
সারা দুপুর বুঝতে পারেনি সন্ধ্যে হলেই অঙ্গনকে খুব মিস করে যশ।জেসমিনকে দেখছে ললিতা,যশ এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকণিতে দাঁড়িয়ে বড় রাস্তার দিকে তাকিয়ে।
ফোন বেজে ওঠে,এখানে তাকে কেউ ফোন করবেনা।মন্থর ভঙ্গীতে ভিতরে ঢুকে ফোন ধরল যশবিন্দার,হ্যালো?...হ্যা..আপনি থোড়া বাদ ফোন করুণ...আপ কোন বলছেন.. .জি-জি--নমস্তে।
রিসিভার নামিয়ে রেখে ব্যালকণির দিকে যেতে আবার ফোন বেজে উঠল।ফিরে এসে ফোন তুলে বলল,হ্যালো?
যশের ভ্রু কুচকে যায়,দাত দিয়ে ঠোট কামড়ে কি ভেবে বলল,গুরমিত কেমন আছো?
সাদি কিউ নেহি...যশ খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,কত উমর হলো...ড.সোম তুমি দেখেছো...একদিন এসো...পরমিত কেমন আছে?..ড্যাফোডিল ছোড় দিয়া...আচ্ছা..
রাখছি?
রিসিভার রেখে আঁচল দিয়ে ঘাম মোছে।এখন আর কাউকে ভয় পায়না যশ।গুরমিতকে আসতে বলায় বলল,পরে আসবে।মুখে স্বস্তির হাসি।কলিং বেল বাজতে মনে হল অঙ্গন এসেছে।দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিল।
--জেশমিন?ঢুকে জিজ্ঞেস করে পল্টু।
--ঘুম করছে।যশ বলল।
পল্টু বলল,তোমাকে বেশি জ্বালায় না।
--এখুন নিদ যাচ্ছে রাতে জ্বালাবে।
পল্টু সোফায় বসে জুতো খোলে যশ বলল,একটা ফোন এসেছিল কি বলল..কোনো পেশেণ্ট হবে।পরে করতে বললাম।তুমি চেঞ্জ করে নেও চা নিয়ে আসছি।
পল্টূ ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসতে আবার ফোন বেজে উঠল।এগিয়ে গিয়ে ফোন ধরতে শুনতে পেল,ড.সোম?
--হ্যা আপনি কে বলছেন?...হ্যা-হ্যা আমার মাম্মী...বারোটার পর দুটোর মধ্যে...ডেথ সার্টিফিকেট...বার্থ সার্টিফিকেট...ঠিক আছে ঠিক আছে..থ্যাঙ্ক ইউ।
যশবিন্দার চা নিয়ে দাড়িয়ে শুনছিল,পল্টূ ফোন রাখতে জিজ্ঞেস করে,কে?
--রঘুরাজন।মাম্মী একে পাঠাচ্ছেন।
--হা-হা রঘুরাজন আগে ইনিই ফোণ করেছিলেন।কি বলছেণ?
পল্টূ চায়ে চুমুক দিয়ে মিট মিট করে হাসে।যশবিন্দার মুখ ঘুরিয়ে চায়ে চুমুক দিতে লাগল।ভাবখানা কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার জানার আগ্রহ নেই।
--অঞ্জুর ডেথ সার্টিফিকেটটা জেরক্স করতে হবে।তোমার সঙ্গে বার্থ সার্টিফিকেট আছে তো?
--কেন?
--কাল রেজিস্টার আসবে,বিয়ের ব্যাপারে?
--আসুক তখন দেখা যাবে।গুরমিত ফোন করেছিল।বিয়ে করেছি শুনে বহুৎ ডিসহার্টেন হয়ে গেল।
--মিথ্যে বলে দিলে?
--হোয়াট ডু ইউ মিন?
--এখনো তো রেজিস্ট্রি হয়নি।
--সো হোয়াট?কাগজে লিখাপড়িই সব?
রান্নাঘরে শব্দ হচ্ছে।ললিতা মনে হয় রান্না ঘরে।পল্টু জিজ্ঞেস করল,ওরা কিছু করবে নাতো?
--তুমাকে ভাবতে হবেনা।ওদের কিভাবে টিচ করতে হয় আমি জানি।
অপালা ভট্টাচার্য অঞ্চলের কমিশনার।কনসিভ করেও বিশ্রাম নেই।নানা অভিযোগ নিয়ে  মানুষ আসছে তো আসছেই।ফ্লাটে আসার পর ওবাড়ী যাওয়া কমে গেছে।লক্ষণ ফ্লাটে ফোন নিয়েছে।দাদার বাসায় ফোন ছিলনা।সামনে বসা মহিলাকে অপালা দেখে।প্রথমে ওর হাজবেণ্ডের উপর খুব রাগ হয়েছিল।হাজবেণ্ডের সঙ্গে কথা বলে​ ​বুঝেছে,​ ​হাজবেণ্ডের কোনো দোষ নেই।এই মহিলার উদ্দেশ্য বুরো বাপ-মাকে ছেড়ে ছেলে তাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাক।
--আচ্ছা সুমিতা দেবী--?
--সুস্মিতা।
--ঐ হল।আপনি কি চান?আমি আপনার হাজবেণ্ডের সঙ্গে কথা বলেছি,আপনার বিরুদ্ধে উনি কিছু বললেন না।অথচ আপনি--।
--ঐটা তেলাচোরা শয়তান।মেনি মুখ করে থাকবে--।
--তাহলে কি ডিভোর্স চান?
--ওকে বলুন রাবণের গুষ্টি ছেড়ে আলাদা ফ্লাট নিয়ে--।
--ছেলে বাবা-মাকে দেখুক আপনি চান না?
--তা কেন?ওর বাবা পেনশন পায়,মাসে মাসে নাহয় ও কিছু দিল।
অপালার নামে কিছু বদনাম আছে,সে নাকি ফ্লাট কিনেছে দু-নম্বরী টাকায়। কিন্তু সুস্মিতার কথা শুনে অপালারও চোখে জল এসে যায়।অপালা জিজ্ঞেস করে,আপনার বাবা মা নেই?
--বাবা মা ভাই সবাই আছে।কেন?
--শুনুন এর পর আমার কাছে আসলে তাদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।নাহলে আপনি আর আসবেন না।
সুস্মিতা উঠে দাড়ালো।মনে মনে ভাবে বাবার আসতে বয়ে গেছে।কমিশনার হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে।আবার ইংরেজি বলে হাজবেন?দু-হাতে কামাচ্ছে জানতে কারো বাকী নেই।
 ​অপালা জানে ভাঙ্গা খুব সহজ গড়তে সময় লাগে।তার জীবন প্রায় শেষ হতে চলেছিল।ওর সঙ্গে দেখা না হলে আজ তার কি হতো ঈশ্বর জানে।অপালা আলাদা হতে চায়নি বাড়ীতে জায়গা কম দাদাই তাদের বলেছে ফ্লাট নেওয়ার কথা।   ​

6 years ago#86
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


​[৭৩]​


দিলীপ রমিকে সব কথা বলল।রমিতার মনে পড়ল কথা। বাবা মারা গেল মাও নেই,এখন বউটাও মারা গেল। পল্টুদার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে,সত্যি পল্টুদার জীবনটাই বিচিত্র।পাঞ্জাবী মেয়েকে বিয়ে করছে,আগের বউ বয়সে অনেক বড় ছিল।​দিলু বলছিল এই বউটার সঙ্গে পল্টূদাকে খুব মানিয়েছে।স্বাস্থবতী মহিলা, ​পাড়ায় আসলে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে।অবশ্য আসবে বললেই যে আসবে তার কি মানে আছে?পরে মত বদলাতেও পারে।এসব কথা এখনই কাউকে বলার দরকার কি?পল্টুদার মামা পুব পাড়ায় নাকি ফ্লাট বুক করেছে দিলু বলছিল।দিলীপ অফিস বেরিয়ে গেল।একটু পরেই সমি আসবে।কাছাকাছি বাড়ী হওয়ায় এই এক সুবিধে। সময় পেলেই দিদির কাছে চলে আসবে।শাশুড়ি তার কাজে কোনো খবরদারি করে না।
পল্টূ বেরিয়ে সব জেরক্স করে এনেছে।রঘুরাজনের আসার কথা।আজই এখান থেকে চলে যাবে যশকে বলেছে।পল্টুর বাড়ী দেখার জন্য যশের মনে কৌতুহল।
যশ চা নিয়ে পল্টূকে দিয়ে পাশে বসল।সকাল সকাল স্নান সারা।শাড়ি পরার অভ্যাস নেই।অঞ্জু শাড়ী পরতো।
--জানো মাম্মী কি বলছিল?পল্টু হাসল।
যশবিন্দার মুখ তুলে পল্টুকে দেখে।বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলছিল নাকি,যশ ভাবে।পল্টু বলল,স্বামী না থাকলে একটা মেয়ের যা কষ্ট বউ না থাকলে একটা ছেলের অনেক বেশি কষ্ট।
যশের দাদীআম্মার কথা মনে পড়ল।একান্নবর্তী পরিবার,সব দিক একাই সামাল দিত। ছোটো বড় বাড়ীর সবাই ভয় করত।এখন গ্রামে দাদী আম্মা একা।কি করছে কে জানে।সে মাঝে মাঝে টাকা পাঠায়।
--তোমার মনে খুব কষ্ট?যশ হেসে জিজ্ঞেস করল।
--বোঝার সময় পেলাম কোথায়?বউ ছাড়া কদিনইবা ছিলাম।
--অঙ্গন তুমার কষ্ট হলে আমাকে বলবে।
মনে পড়ল অঞ্জুর কথা।ওকে বলতে হতনা বলার আগেই বুঝে যেতো।পল্টূ হাসল।
--রঘুরাজন কখন আসবে বলেছে?যশ জিজ্ঞেস করে।
--সময় হয়ে এল।চলো আমরা খেয়ে নিই।
খাওয়া-দাওয়ার পর পল্টু দিলীপকে ফোন করল।রিং হচ্ছে পল্টু কানে লাগিয়ে শোনে। দিলীপকে দেবেন....কে দিলীপ?ভাবছি আজ সন্ধ্যেবেলা যেতে পারি।...না মানে
...একটা কাজ মিটে গেলে যাবো..বেরোতে তা প্রায় ৫/৬টা বেজে যেতে পারে, তুই মিতামাসীকে বলেছিস...ঠিক আছে এখণ রাখি?
ফোন রেখে দেখল যশ তার দিকে তাকিয়ে আছে।পল্টু হেসে বলল,তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও।
--এখন কি?এখন সবে একটা বাজে।ঘড়ি দেখে যশ বলল।
--রেজিস্টার আসবে না?
যশবিন্দার দ্রুত চেঞ্জ করে ফিরে এল।যশের সাজগোজের দিকে নজর নেই,অঞ্জুর মত।
তাহলেও বেশ সুন্দর লাগছে।শরীরের গঠণ ভাল হলে যা পরবে তাতেই ভাল দেখায়। মনে পড়ল যেদিন তাদের রেজিস্ট্রি হয়েছিল অঞ্জু ফুলের মালা কিনে এনে মালা বদল  করেছিল।সেদিনের কথা ভেবে পল্টুর চোখে জল চলে আসে।টেবিলে রাখা ফটোস্ট্যাণ্ডে  অঞ্জুর হাসি-হাসি মুখ দেখে মনে পড়ল অঞ্জুর লেখা চিরকুটের কথা, "যশ ইজ ভেরি কিউট এ্যাণ্ড...." আচ্ছা অঞ্জু কি বুঝতে পেরেছিল?পৃথিবীতে তার দিন শেষ হয়ে এসেছে? কলিং বেল বাজতে পল্টু বলল,মনে হচ্ছে ভদ্রলোক এসেছেন।পল্টু দরজা খুলে দেখল একটি ছেলে বাঙালী বলে মনে হল,জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার?
--স্যার মানে রঘুরাজনজী পাঠালেন।আপনি ড.সোম?আমি সুবীর ব্যানার্জি স্যারের জুনিয়ার।
--ও ভিতরে আসুন।আপনার স্যার সব বলে দিয়েছেন?
সুবীর সোফায় বসে ব্যাগ খুলে কাগজ-পত্তর বের করতে করতে বলল,হ্যা সব বলেছেন।আমি কেবল ফর্মটা পুরণ করে নিয়ে যাবো।স্যারই সব করবেন।
সুবীর জিজ্ঞেস করে করে ফর্ম পুরণ করে।যশবিন্দার জন্ম তারিখ বলতে সুবীর বলল,দুজনের একই ইয়ার ১৯৪৬?
যশ ঘাড় ঘুরিয়ে অঙ্গনকে দেখে হাসল।দুজনের দিকে ফর্ম এগিয়ে দিতে স্বাক্ষর করে দেবার পর সুবীর বলল,ম্যাম নাউ ইউ আর বিকেম যশবিন্দার সিং সোম।
চা পানের পর সুবীর বিদায় নিল তখন ঘড়িতে চারটে বেজে গেছে। যশ দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে অঙ্গনকে বলল,বাইগুরু দুজনকে একই ইয়ারে তুমাকে কয়েকদিন আগে আমার জন্য পাঠিয়ছিল।খুশিতে যশ হাত তুলে ​কোমর বেকিয়ে ​অদ্ভুত ভঙ্গিমায় নেচে উঠল।পল্টুর ভাল লাগে যশের এই উচ্ছলভাব দেখে।পল্টু হিসেব করে দেখল যশ তার চেয়ে মাস  খানেকের ছোটো।ললিতাকে দেখে নাচ থেমে গেল।ললিতা রান্না ঘরে যেতে যশ ঘর থেকে জেশমিনকে তুলে এনে বলল,মাম্মী বলো--মামী বলো।
জেশমিনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অবাক হয়ে যশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
 
সন্ধ্যে নামে প্রায়।জেসমিনকে তৈরী করতে নিজের জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতে অনকটা সময় নিল যশবিন্দার।পল্টু হেসে জিজ্ঞেস করল,এত কি আছে ট্রলি ব্যাগে?
যশ হেসে বলল,সব ডাক্তারির জিনিস পত্র।
বাইরে বেল বাজতে পল্টূ দরজা খুলে দেখল দিলীপ এসেছে।
দিলীপ ঢুকে বলল,রেডী?আমি ভাবলাম গিয়ে দেখবো তোরা বেরিয়ে পড়েছিস।
--তুই অফিস থেকে আসছিস?যশ দিলীপ এসেছে।
যশ বিন্দার একটা প্লেটে কিছু মিষ্টি নিয়ে এসে বলল,চলে যাবো তাই ঘরে কিছুই নেই।
ললিতা একটু চা করো।
---না না চা লাগবে না।দিলীপ আপত্তি করে।
--সবাই খাবো।ললিতা চা বানাও।  
বেরোতে বেরোতে প্রায় সন্ধ্যে নেমে এল। পল্টু চুপচাপ বসে আছে,পাশে যশ বসে অনবরত খুচিয়ে যাচ্ছে।সামনে দিলীপ রয়েছে তোয়াক্কা নেই।স্বভাব চরিত্রে অঞ্জুর সঙ্গে কোনো মিল নেই।অঞ্জু ছিল রাশভারি গম্ভীর যশ অত্যন্ত চঞ্চল।মারকুটে টাইপের ভয় ডর কম।নিজে একজন ডাক্তার সেই খেয়ালই থাকে না সব সময়।আত্মমর্যাদাবোধ প্রখর।মনে পড়ল সেইদিনের কথা।পল্টুকে কৌশলে কব্জা করতে চেয়েছিল কিন্তু যখন জানল পল্টূ বিবাহিত কত সহজভাবে নিজেকে সরিয়ে নিল। ললিতার কোলে বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পড়েছে। গাড়ি পাড়ায় ঢুকতে দিলীপ বলল,আমাকে ফ্লাটের নীচে নামিয়ে দে, আমি আর যাবো না।
গাড়ি থামতে দিলীপ নেমে গেল,পল্টু বলল,পরে দেখা করিস।
--আসি ভাবিজি।নীচু হয়ে দিলীপ যশকে বলল।
দিলীপের মুখে ভাবিজী শুনে ভাল লাগে যশ হেসে বলল,পরে দেখা হবে।
পাড়ার চেহারা একেবারে বদলে গেছে।রাস্তার দু-পাশে দাঁড়িয়ে আছে বহুতল।গাড়ির জানলা দিয়ে পল্টু দেখে।দিলীপের কাছে শুনেছে লক্ষণদার সেই প্রভাব নেই।লক্ষণদার বউ এখন সর্বেসর্বা।অনেক অর্থ নাকি উপার্জন করেছে। লক্ষণদা আর যাই হোক এই গুণ তার ছিল না।বাচ্চাটাকে যশের কোলে দিয়ে ললিতা বলল,মামা আমি চাবি নিয়ে আসছি।
চাবি মিতা মাসীর কাছে থাকে।মাসী মাঝে মাঝে ঘর দোর মোছামুছি করে যায়। একতলায় মামা থাকে কিন্তু কেউ বের হলনা।যশ অবাক হয়ে বাড়ীর দিকে তাকিয়ে থাকে।বেশ বড় বাড়ী ,পাশে কিছুটা জায়গা। পল্টু দরজা খুলে রাস্তায় পায়চারি করে। কিছুক্ষণ পর মিতামাসীকে নিয়ে ললিতা ফিরে এল।মিতামাসী বলল,খবর দিলে আমি সব রেডি করে রাখতাম।
মিতামাসী উপরে গিয়ে দরজা খুলে দিল।যশ ঘুরে ফিরে দেখে পুরানো আমলের বাড়ী কিন্তু ঘরগুলো বিশাল।দক্ষণদিক খোলা জানলা খুলে দিতে হাওয়ায় ভরে গেল ঘর। মিতামাসী আলমারি খুলে পরিষ্কার চাদর পেতে দিল বিছানায়। বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পড়েছে। যশ তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।বাথরুম কোথায় জিগেস করে,যশ বাথরুমে ঢুকে গেল। দু-হাত মেলে দিল বেশ বড় বাথরুম।একটু অদল বদল করলে একেবারে আধুনিক হয়ে যাবে।যশের খুব পছন্দ হয়,পল্টুকে বলতে হবে আর তারা ফ্লাটে ফিরে যাবে না।দরকার হয় এই অঞ্চলেই কোথাও চেম্বার খুলে প্রাকটিশ শুরু করবে।চোখে মুখে জলের ঝাপ্টা দিল।আয়নায় নিজেকে দেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
পল্টু দেওয়ালে টাঙ্গানো বাপি মমের ছবির দিকে দেখল।যশ পাশে এসে দাড়াতে পল্টু বলল,আমার মম আর বাপি।
মিতামাসী এসে বলল,ছোড়দা ঘরে তো কিছু নাই।টাকা দাও।
পল্টূ টাকা বের করে দিতে মিতামাসী বাজারে চলে গেল।

দিলীপ ফিরতে জিজ্ঞেস করল রমিতা,এসেছে?

--এইমাত্র এল পরে তোমাকে নিয়ে যাব।

--বাংলা বলতে পারে?

--পারে তবে একটু অন্য টান আছে।ভাবী একসময় জুডো-ক্যারাটে শিখেছিল।

--মেয়েমানুষ মারপিট শিখেছে?

--আত্মরক্ষার জন্য শিখলে খারাপ কি?

রমিতা মনে মনে ভাবে ঠিকই  কলেজে পড়ার সময় মেয়ে বলে অনেক অসভ্যতা সহ্য করতে হয়েছে। 

6 years ago#87
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


[৭৪]



পল্টু বাপির চেয়ারে বসতে গিয়েও বসল না।অন্য একটা চেয়ার নিয়ে হেলান দিয়ে বসে।খাটের উপর ঘুমে অচেতন জেসমিন।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়ল বেগমের কথা।অঞ্জুর খুব ইচ্ছে ছিল মা হবার,মেয়েদের একটা ইন্সটিঙ্কট।সব মেয়ের মধ্যে অজান্তে লালিত হয় মা হবার বাসনা।মুখ ফুটে সেকথা কোনোদিন বলেনি পল্টূকে।জীবনের সামান্য এই চাহিদাটুকু পুর্ণ করতে তাকে অকালে জীবন দিতে হল।
জেসমিন ফিক করে হাসল।পল্টু কাছে গিয়ে ঝুকে জেসমিনকে দেখে।যশ বলছিল ওকে নাকি মায়ের মত দেখতে হয়েছে।তাই কি?পল্টু ভাল করে লক্ষ্য করে,এখন কি বোঝা সম্ভব?জেসমিন ঠোট ফুলিয়ে কেদে উঠল।পল্টু কোলে তুলে দোলাতে থাকে তাতে কান্না আরও বাড়ে।কি করবে কিছু বুঝতে পারে না,মনে হয় ক্ষিধে পেয়েছে।খাটের উপর পড়ে থাকা ফিডীং বোতল নিয়ে মুখে দিতে যায়।অবিন্যস্ত পোশাকে যশ বাথরুম হতে বেরিয়ে এসে পল্টুর হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে বলল,কখন বানানো দুধ,তুমি ললিতাকে ডাকো।
যশ একটা স্তন জেসমিনের মুখে গুজে দিতে চুপ করে গেল।
কান্না শুনে মিতা মাসী এসে জিজ্ঞেস করে,কাঁদছে কেন?
--ললিতা কই?তুমি বাজারে যাওনি?
--ললিতাকে বাজারে পাঠিয়েছি।ঘরে কিছুই নেই।
দুধের কৌটো দেখিয়ে দিয়ে যশ বলল,এক বোতল দুধ বানাতে পারবে?
ফিক করে হেসে মিতামাসী বলল,পারব না কেন?
মিতামাসী কৌটো নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।পল্টূ তাকিয়ে যশকে দেখে।কে বলবে কুমারী মেয়ে।বাঙালি পাঞ্জাবি হিন্দু মুসলমান--মা সর্বত্র এক নতুন করে আরেকবার উপলব্ধি করল পল্টু।মিতামাসী দুধের বোতল দিয়ে গেল,যশ হাতের তালুর উল্টোদিকে দুয়েক ফোটা ফেলে উত্তাপ বোঝার চেষ্টা করে।মাম্মীর কথা মনে পড়ল।ডাক্তার হিসেবে আজ তার নামডাক হয়েছে যার উদ্যম স্বপ্ন ছিল সেই দেখে যেতে পারল না।পল্টুর চোখ ছলছল করে উঠল।মনে হল বাইরে কে যেন ডাকাডাকি করছে?এত রাতে কে এল?বোঝার আগেই মিতামাসী এসে খবর দিল,লক্ষণবাবু আসছে।
পল্টু উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়াতে লক্ষণদা কাদো কাদো গলায় বলল,পল্টূরে আমার বড় বিপদ।
পল্টু দ্রুত নীচে নেমে গেল।অপালার ব্যথা উঠেছে,রবিবার দোকানপাঠ সব বন্ধ কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।কপালে ভাঁজ পড়ে পল্টুর,জিজ্ঞেস করে কাছাকাছি কোনো নার্সিংহোম নেই?
--সেবা সদনে ফোন করছিলাম,বলল ডাক্তার ছুটিতে।তুই ভাই আমাকে বাঁচা।
ঠোট কামড়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,তুমি ভর্তি করে দাও,আমি যাচ্ছি।
--পল্টূ তোর ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না।
--ঠিক আছে--ঠিক আছে তুমি ভর্তি করে,একটা রিক্সা বা কিছুর ব্যবস্থা করে দাও।
লক্ষণদাকে বিদায় করে ভাবে খুব ঝুকি নেওয়া হল কি?উপরে এসে যশকে দেখে বিদ্যুৎ খেলে যায় মনে।জেসমিন ঘুমিয়ে পড়েছে যশের কোলে।পল্টুকে দেখে বলল, সকালে খেয়েছে ক্ষুদা পাবে না?
পল্টূ ভাবছে অন্যকথা।যশ জিজ্ঞেস করে,কই গড়বড়?
--যশ ডার্লিং একটা কথা বলব রাগ করবে না?
পল্টুর ভুমিকা শুনে যশ ভ্রু কুচকে তাকায়।
--একটা ডেলিভারি কেস তুমি যদি--।
-- জেসমিনকে রেখে এখুন কুথাও যেতে পারব না।
--প্লিজ যশ বেসিক্ষন লাগবে না,মিতামাসী আছে আমি আছি তুমি--।
--কোন নারসিং হোম নাকি বাড়ীতে আছে?
--তোমাকে নিয়ে যাবে।
আজ তাদের বিয়ের প্রথম দিন,বিরক্ত হলেও যশ ট্রলি ব্যাগ খুলে যন্ত্রপাতি গোছাতে গোছাতে মনের অবস্থা বদলাতে থাকে পল্টুকে বলল,অঙ্গন তুমাকে এইজন্য খুব ভাল লাগে।
মিতামাসী খবর দিল দিলীপ এসেছে।পল্টূ বলল,ওকে উপরে আসতে বলো।
দিলীপ উপরে উঠে এসে জিজ্ঞেস করে,তুই নার্সিং হোমে যাবি বলেছিস?
--আমি না যশ যাবে।
--ও ভাবীজী?ঠিক আছে ট্যাক্সি এনেছি।চলুন ভাবিজী।
দিলীপের মুখে ভাবীজী ডাক শুনতে যশের খুব ভাল লাগে।দিলীপ ব্যাগটা নিল।
--তুই যশকে দেখিস,ও কিছু এখনকার জানে না।দিলীপকে দেখে পল্টূ আশ্বস্থ হয়।

অপালাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে।পার্টির অনেকে জড়ো হয়েছে।লক্ষনদা একবার নীচে যাচ্ছে আবার উপর উঠে আসছে।ট্যাক্সি হতে দিলীপকে নামতে দেখে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,কিরে পল্টূ এলনা?
দিলীপ মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করে যশকে বলল,আসুন ভাবিজি।দিলিপ যশকে নিয়ে উপরে উঠে গেল,পিছনে লক্ষণদা।যশ নিজের পরিচয় দিতে কর্তৃপক্ষ খুব খাতির শুরু করে।অপালাকে ও টি-তে নিয়ে যাওয়া হয়।লক্ষণদা কিছু বুঝতে পারছে না।দিলীপকে একা পেয়ে লক্ষনদা জিজ্ঞেস করে,কিরে ভদ্রমহিলা কে?
--উনি ডাক্তার পল্টূ পাঠিয়েছে।দিল্লীতে ছিলেন তুমি কোন চিন্তা কোরনা।
--পল্টূর বাচ্চা হতে গিয়ে ওর বউ মারা গেছে শুনেছি,দিলীপ তোর বউদির কিছু হবে নাতো মাইরি?
--কি সব আজেবাজে কথা বলছো।এত অস্থির হবার কি আছে?
নিজে না এসে কাকে পাঠালো পল্টূ।লক্ষণদা মনে মনে বিরক্ত।বিপদে পড়েছে এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।সময় যেন কাটতে চায় না।যতবার ঘড়ি দেখে মনে হয় যেন ঘড়ি বন্ধ হয়ে বসে আছে।রাজনীতি করছে কমদিন হলনা।কত লোকের কত সমস্যা মিটীয়েছে কিন্তু নিজেই এমন সমস্যায় পড়বে কোনোদিন ভাবেনি। গেটের কাছে নড়াচড়া শুনে লক্ষণদা এগিয়ে যান।পুর্ণিমা এসেছে,লক্ষণদা বলল, বৌদি তুমি এত রাতে আবার আসলে কেন?
--অপু কোথায়?পুর্ণিমা জিজ্ঞেস করে।
--ওটিতে।পাশ থেকে দিলীপ বলল।
--ওটিতে কেন?
--এমনিতে হচ্ছে না মনে হয় অপারেশন করতে হতে পারে।
একটা ছেলে এসে খবর দিল,দিলীপদা তোমাকে ডাকছে।
দিলীপ দ্রুত ছুটে গেল।ভাবীজী বেরিয়ে তার খোজ করছে।দিলীপ কাছে যেতে যশ বলল,বেটা হয়েছে।পেশেণ্ট ভাল আছে,এখুনি বেডে দিয়ে দেবে।আপনি যাবার ব্যবস্থা করুণ।অঙ্গন একা,জেশমিন কি করছে কে জানে।
মিতামাসী কি করবে বুঝতে পারে না। একা হলে আলাদা ওই দুধের শিশুকে ছোড়দার ভরসায় ফেলে যেতে পারছে না।রান্না শেষ হয়ে গেছে,নীচের লোকজন তাকে দেখে আড়ালে সরে যাচ্ছে মিতামাসী উপভোগ করে।একদিন তাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিল,ঢুকতে দেয়নি।
ট্যাক্সি এসে থামল।দিলীপ উপরে আসতে চাইছিল যশ বলল,রাত হয়েছে এখুন যান, কাল আসবেন।
--পল্টূ কাল বেরোবে না?
--কি আছে আমি তো থাকবো।যশ বলল।
দিলীপের ভাল লাগে,সবে আজ আলাপ হয়েছে এর মধ্যে একটা আত্মীয়তার স্পর্শ অনুভব করে।অফিস থেকে ফিরে রমিতাকে সঙ্গে নিয়ে আসার কথা মনে মনে ভাবে দিলীপ।গুড নাইট বলে বিদায় নিল।
উপরে উঠতে মিতামাসী বলল,আমি আসি?
--ওঃ আপনার দেরী হয়ে গেল।কাল আসছেন তো?সকালে আপনাকে নিয়ে বাজারে যাবো।
আজ বিয়ের প্রথম দিন।সকাল থেকে ভেবে রেখেছে এনজয় করবে। দিলীপের কাছে শুনেছে অঞ্জনা ডিভোর্সি সেদিক দিয়ে বলতে গেলে সে ভার্জিন অঙ্গনের সঙ্গেই তার প্রথম।এক রকম  জোর করেই,পরে বিবাহত শুনে হতাশ হয়েছে।ভাবতে অবাক লাগে অঙ্গনই তার লাইফ পার্টনার।কি করছে অঙ্গন এখন একা একা? 

6 years ago#88
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


​[৭৫]​


ঘরে ঢুকে দেখল জেসনিন ঘুমিয়ে আছে,পাশে অঙ্গনও ঘুমিয়ে পড়েছে।চেঞ্জ করা দরকার,দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করতে লাগল যশ।পিছন ফিরে দেখল অঙ্গন তাকিয়ে তাকে দেখছে।যশ জিজ্ঞেস করে,কি দেখছো?
--কখন এলে?
--জাষ্ট নাউ।
--সব মিটেছে,কোনো প্রবলেম হয়নি তো?
--সিমপল কেস,নরম্যাল ডেলিভারি।আননেসেসারি ভয় পেয়ে গেছে।
মিতামাসীকে ডাকতে যাবে যশ বলল,রাত হয়েছে আমি চলে যেতে বলেছি।
--কিন্তু রাতে আমাদের খাওয়া হয়নি--।
--ম্যায় হু না?
যশবিন্দার টেবিলে খাবার সাজিয়ে খেতে ডাকল অঙ্গনকে।জেসমিন ঘুমে কাদা,এক নজর দেখে পল্টু খেতে বসল।মিতামাসী রান্না করে রেখে গেছে।
--কাল লেকভিউতে যাবে ইকবাল জানে তো?যশ জিজ্ঞেস করল।
--হুউম।আচ্ছা তুমিও তো আবার জয়েন করতে পারো?
--জেসমিনকে রেখে আমি যাবো?বিস্মিত হয়ে বলল যশ।
পল্টূ কথা না বলে চুপ করে খেতে থাকে।অবাক হয়ে ভাবে,একটা বলতে গেলে কুমারী মেয়ের মধ্যে এত মমতা কি করে সম্ভব?শুনেছে সৎ মায়েরা নাকি সন্তানের প্রতি সুবিচার করে না।একটু ইতস্তত করে পল্টূ বলল,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো,কিছু মনে করবে না?
যশ খেতে খেতে চোখ তুলে তাকাল।পল্টু বলল,সিরিয়াস কিছু নয় জাষ্ট কৌতূহল।
ধরো জেসমিন যখন বড় হবে তখন সত্যিটা জানবে।জানবে তুমি ওর আসল মা নও, তোমার খারাপ লাগবে না?
যশবিন্দার কোনো উত্তর দেয়না,পল্টু লক্ষ্য করল কপোল গড়ীয়ে জল পড়ছে।পল্টূ উঠে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,স্যরি আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি।
যশবিন্দার ওড়না দিয়ে চোখ মুছে হেসে বলল,ইটস অল রাইট।তারপর আবার খেতে শুরু করে। কিছুক্ষন পর বলল,অঙ্গন আমি কোনো মতলব নিয়ে কিছু করিনা।আমি জন্ম দিইনি শুধু সেটাই জানবে,আর বাকি সব কুছ নেহি?নেও তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও কাল সকালে তোমাকে বেরোতে হবে।মিতামৌসি এলে ভোর বেলা মার্কেটে যাবো।
পল্টুর সাড়া নাপেয়ে জিজ্ঞেস করল,অঙ্গন ফিলিং টায়ার্ড?
--কেন?
--আজ আমাদের বিয়ের রাত,ভুলে গেলে?
পল্টূ বুঝতে পারে কি বলতে চায় যশ।মনে মনে মজা করার ইচ্ছে হল বলল,আজ থেকে শুরু হল,এই রাত শেষ রাত নয়।
যশ হাত দিয়ে টেনে অঙ্গনকে নিজের বুকের কাছে এনে বলল,ইউ নটি।প্রথম রাত আমি মিস করতে চাই না।
পল্টু উঠে বসে নীচু হয়ে যশের ঠোটে ঠোট রাখতে যশ জিভটা মুখের ভিতর ঠেলে দিয়ে  নিজেই দড়ী খুলে পায়জামা নামিয়ে দিল।দিল্লীর কথা মনে পড়ল।যশের শরীরে অসম্ভব শক্তি।যশ উঠে বসে জামা মাথার উপর দিয়ে খুলে ফেলল।আবছা আলোয় দেখল যশবিন্দারের চওড়া বুক ওঠানামা করছে।নীচু হয় যশের কোলে মাথা রেখে
কোমর জড়িয়ে ধরে।অঙ্গনের গাল যশের পেটে,সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবে,এই পেটের মধ্যে বাচ্চাকে ধারণ করে সেই পেটের প্রতি অঙ্গনের আকর্ষণ?এর কোনো তাৎপর্য নেই তো? জেশমিন জেগে গেল মনে হয়,উম-উম করছে।যশ কোলে তুলে নিতে চুপ করে গেল।জেশমিনের দিকে কিছুক্ষন দেখে মনে মনে বলল,তুমার ড্যাড আউর তুম দুজনকে  আকেলা দেখভাল করতে হবে?জেশমিন আবার ঘুমিয়ে পড়ল।পাশে শুইয়ে দিয়ে যশ জিজ্ঞেস করে,অঙ্গন কি করছো?
কোলে মুখ গুজে পল্টু জিজ্ঞেস করল,এখানে তোমার খারাপ লাগছে?
যশবিন্দার জড়িয়ে ধরে বলল,আই লাভ ইউ ডার্লিং।
পরস্পর জড়িয়ে দুজনে শুয়ে পড়ল।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গতে দেখল জেসমিন ঘুমিয়ে কিন্তু যশ নেই।রান্না ঘরে শব্দ নেই, মিতামাসী আসেনি এত বেলা হল?
রাস্তায় দেখা হল লক্ষনবাবুর সঙ্গে,ম্যাডাম আপনার ঋণ আমি ভুলব না।
যশ অবাক হয়ে মিতার দিকে তাকাল।মিতা বলল,লক্ষণদা--কাল রাতে উনার পুয়াতি বউরে--।
--ওহ স্যরি।পেশেণ্ট কেমন আছে,বেবি?
--সব ভাল আছে।একটু বেলা হলেই আনতে যাবো।একটা কথা বলব ম্যাম?
যশবিন্দার কৌতুহলি চোখ মেলে তাকাতে লক্ষণ বলল,দিলীপের কাছে সব শুনেছি। আপনি এখানে চেম্বার খুললে বলবেন,সব ব্যবস্থা করে দেবো।আশপাশে কোনো লেডি ডাক্তার নেই।
--পরে কথা হবে।একটু ব্যস্ত আছি।যশ হেসে বলল।
এত ভোরে কোথায় গেল যশ,মিতামাসীরও পাত্তা নেই। পল্টূ আবার শুয়ে পড়ল জেসমিনের পাশে। আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে হয়,মিতামাসীর ডাকে চোখ মেলে তাকায়,হাতে গরম চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতামাসী।
--যশবিন্দার কোথায়?চা নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে পল্টূ।
--মেডোম রান্না করতিছে।বলল আজ উনি রান্না করবেন।
পল্টুর মুখে হাসি খেলে গেল।যশবিন্দার রান্না করতে পারে?কি জানি আজ কপালে কি আছে। মিতামাসীকে বলল,তুমি একটু দিখিয়ে দাও,ওর অভ্যেস নেই--।
--অন্য রকম কি রান্না করছে আমি ঐরকম জানি না।ঐটা হয়ে গেলে আমি ভাত রান্না করব।
অন্যরকম রান্না? সর্বনাশ পল্টুর মজা লাগে।কে জানে কত বিস্ময় লুকিয়ে আছে তার জন্য।মনে মনে প্রস্তুত করে নিজেকে সখ করে রান্না করছে যেমনই হোক প্রশংসা করতে হবে।মুঘলাই খানা শুনেছে পাঞ্জাবিদের রান্নার ব্যাপারে কিছু জানা নেই।পল্টু হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা মিতামাসী ম্যাডামকে কেমন লাগল তোমার?
কি বলবে মিতামাসী ভেবে পায় না তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,ললিতা বলতেছিল মেডোম বুইনরে খুব ভালবাসে।কথাগুলো ঠিক আমাদের মত না।বাজারে সবাই তাকায়ে তাকায়ে দেখতেছিল।
--তোমার কেমন লাগলো?
--খারাপ তো কিছু দেখলাম না।ললিতা বলছিল--ছোড়দা মেডোম কি তুমার বউ?
--কেন?
--দুজনই ডাক্তার তাহলে জেশমিনরে কে দ্যাখবে?
--তুমি দেখবে না?
--কে দ্যাখবো না।তবু মায়ের দেখা আর আমার দেখা--।
--যশও তো ওর মা নয়--।
মিতা শিউরে ওঠে ফিস ফিস করে বলল,আস্তে মাডোম শুনলি ভীষণ রাগ করবে।আমি বলতি খুব বকা দিয়েছে।
পল্টূ মনে মনে হাসে।যশকে দেখে কখনো মনে হয়নি ও এমন হতে পারে।ছটফটে চঞ্চল ডানপিটে মেয়ের মত মনে হতো দিল্লীতে।
কিছুক্ষণ পর ঘেমে নেয়ে হাতে দুধের বোতল যশবিন্দার ঢুকল। যশবিন্দার ঢুকতে ওদের আলাপ বন্ধ হয়ে যায়। মিতামাসী আড়চোখে এক পলক দেখে রান্না ঘরে চলে গেল।পল্টূ  গম্ভীর মুখ করে থাকে। জেসমিনকে কোলে নিয়ে মুখে দুধের বোতল গুজে দিয়ে বলল, লছমন বাবুর সঙ্গে দেখা হল।ভেরি গ্লাড--পেশেণ্ট ভাল আছে।
--তুমি কোথায় গেছিলে এত সকালে?
--কেন তোমাকে বলিনি মার্কেটে যাবো।সাতদিনের সামান কিনে আনলম।
--টাকা কোথায় পেলে?
যশবিন্দার বিস্মিত দৃষ্টি মেলে তাকায়,কি বলছে অঙ্গন বুঝতে পারে না।কিছুক্ষন পর বলল,সমঝ গিয়া।
পল্টু দেখল যশের মুখটা কালো হয়ে গেল,জেসমিনকে দুধ খাওয়ানোর ছলে মাথা নীচু করে থাকে।অঞ্জু তো কত রকমের খরচ করতো আজ কেন অমন বলতে গেল ভেবে পল্টুর খুব খারাপ লাগে।সন্তর্পণে পিছন থকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,যশ ডার্লিং স্যরি।
--আমি ফ্যামিলি মেম্বার নাই?
--বলছি তো ভুল হয়ে গেছে--তুমি বাড়ীর কর্তৃ।ঠিক আছে?
--তাহলে শোনো বাগানের দিবার ভেঙ্গে গ্যারাজ বানাবো।
--কিন্তু গাড়ির গ্যারাজ তো আছে,ইকবাল সেখানেই গাড়ী রাখে।
যশ হেসে বলল,তুমাকে বলিনাই দিল্লীতে আমার গাড়ী ছিল।দু-একদিনের মধ্যে এসে যাবে।
--ঠিক আছে আমি কিছু করতে পারবো না।মিস্ত্রিফিস্ত্রির ঝামেলা তুমি পারলে করো।
ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হেসে বলল,সেটা আমি জানি।যাও স্নান করে এসো।কটায় বেরোবে?
--তিন-সাড়েতিনটের সময় বেরোবো।পল্টু ঠোটে ঠোট রেখে চুমু খেলো।
পল্টূ স্নান করতে গেল।যশ জেসমিনকে বলে,আউরত লোক মিট্টি যেইসা থোড়া প্যার কি পানি পড়লে একেবারে কাদা হয়ে যায়,বেটি জেন তুমার ড্যাড ভাল নাই।
জেসমিন কি বুঝলো কে জানে ফিক হেসে হাত দিয়ে যশের নাক ধরতে যায়।যশ তুলে তার কপালে চুমু খেল।
6 years ago#89
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


[৭৬]



খেতে বসে পল্টুর মনে পড়ে যশ কি যেন রান্না করেছে।খেতে খেতে ভাবে সেই পদটা কি?খাওয়া প্রায় শেষ পল্টূ জিজ্ঞেস করল,এসব কে রান্না করেছে?
যশ খেতে খেতে বলল,মৌসী করেছে,কেন?
--শুনলাম তুমি কি রান্না করেছো?
--রাতে রুটির সঙ্গে খাবে।
-- রাতে তো খাবো,এখন একটু দাও টেস্ট করে দেখি।
যশ মিতামাসীকে বলল,একটা প্লেটে থোড়া--।
মিতামাসী জিজ্ঞেস করে,আপনারে দেবো?
--না না আমাকে দিতে হবে অঙ্গনকে থোড়া দাও।
মিতা মাসী একটা প্লেটে করে পল্টূকে দিল।সাদা সাদা সবুজ একটা পদ পল্টু জিজ্ঞেস করে,এটা কি?
--আমার দেশে বলে মুর্গ ভর্তা,এখানে কি বলে জানি না।
গন্ধটা ভালই লাগছে ,ভাল ভাল মশলা দিলে গন্ধ ভালই বেরোয় খেতে কেমন হবে কে জানে।পল্টুই চেয়ে নিয়েছে এখন খেতেই হবে।যশ অধীর আগ্রহে অঙ্গনের দিকে তাকিয়ে থাকে।দু-আঙ্গুলে একটা টুকরো মুখে দিয়ে অবাক হয় পল্টু,দারুণ হয়েছে। যশের দিকে তাকিয়ে বলল,ডেলিশাস।কি দিয়ে বানিয়েছো?
--চিকেন দহি তুমার ভাল লেগেছে?
--ভাল কি তুমি ডাক্তার না হয়ে শেফ হয়ে হোটেল খুলতে পারতে।
যশের মুখে হাসি ফোটে।মিতামাসী স্বস্তি বোধ করে,কেননা আপত্তি সত্বেও মেডাম তার জন্য একটা টীফিন ক্যারিয়ারে ভরে দিয়েছে।মেডামের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মিতামাসীর চোখের পাতা ভারী হয়ে এল।মানুষটার মন খুব ভাল।ছোড়দা জন্য আর চিন্তা রইল না।আগের বউটার সঙ্গে বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি।
ইজি চেয়ারে বসে মেডিক্যাল জার্নালে চোখ বোলাচ্ছিল।দুপুরে ঘুমানোর অভ্যেস নেই।
আগে এসময় অঞ্জু কলেজ চলে যেত।যশকে মনে হল চেঞ্জ করছিল,কোথায় গেল? রান্না ঘরে শব্দ হচ্ছে মনে হল।এখন আবার রান্না ঘরে আবার কি করছে?চেয়ার ছেড়ে পা টিপে টিপে রান্না ঘরের দিকে গেল।যশবিন্দার কি যেন করছে,পিছন থেকে পল্টু জড়িয়ে  ধরে জিজ্ঞেস করল,কি করছো ডার্লিং?
--আহা নিজে তো খেয়ে নিশ্চিন্ত জেনের এখনো খাওয়া হয়নি।কি করছো ছাড়ো দুধ পড়ে যাবে।
পল্টু গালে গলায় চুমু খেতে লাগল,আপত্তি করলেও যশের এই উপদ্রব ভাল লাগে।
--রাতে তো ভুষ ভুষ করে ঘুমোচ্ছিলে এখন আবার কি হল?
পল্টূ বুঝতে পারে অভিমানের কারণ বলল,একরাত গেলেও সামনে পড়ে আছে অনেক রাত।শেষে তুমিই বিরক্ত হবে।
যশের দুধ তৈরী হয়ে গেছে, হেসে লাজুক গলায় বলল,ট্রাই করে তো দেখো।
খাটে এসে জেনকে ঘুম থেকে টেনে তুলে দুধ খাওয়াতে থাকে যশ।পল্টুর মায়ের কথা মনে পড়ল।সংসারের কাজে ডুবে থাকলেও সতর্ক নজর থাকত পল্টুর দিকে।পান থেকে চুন খসার যো ছিল না।মুখের দিকে তাকিয়ে ভিতরটা দেখতে পেতো।একদিন স্কুলে দুষ্টুমি শাস্তি পেয়েছিল,বাসায় ফিরে চুপ করে শুয়ে ছিল।মা জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার শুয়ে পড়লি? পল্টু বলল,এমনি।মা সারা গায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, স্কুলে কি হয়েছে আজ?চমকে ওঠে পল্টূ মা কি করে জানলো?
--অঙ্গন কি ভাবছো?মুখ না ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে যশ।
পল্টূ হেসে ফেলে।যশ বলল,তুমি আমার কথা ভাবছিলে আয় এ্যাম রাইট?
--যশ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি করে বলবে?
--ঝুট কেন বলবো?যশ হাসল।
--তুমি শিখ পরিবারের মেয়ে একটা অন্য পরিবেশে তোমার খারাপ লাগছে না?
--ওহ এইবাত?যশবিন্দার জেনকে ভাল করে শুইয়ে দিয়ে পল্টুর দিকে ঘুরে বসে বলল,
অঙ্গন আমি কোনো মজবুরি থেকে আসিনি।দিল্লীতে তুমি যখন রাস্তায় কলেজের পতা জিজ্ঞেস করলে আমি জানতাম না তুমি হিন্দু মুসলিম কি খ্রীষ্টান লেকিন সেইদিনই মনে হয়েছিল দিস ইজ দা ম্যান হুম আই সার্চড।
--তুমি তো জানতে না আমি বিবাহিত?মানুষ হিসেবে আমি কেমন?
--সো হোয়াট?দুনিয়ায় কত কিছুই তো পেতে ইচ্ছে হয় সব কি পাওয়া যায়?যশ পল্টূকে জড়িয়ে ধরে বলল,অঙ্গন ইউ আর ভেরি লাভলি।
নীচে গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল।মনে হচ্ছে ইকবাল এসে গেছে।যশকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
যশ বলল, কাজ হয়ে গেলেই চলে আসবে,মনে রাখবে জেন আছে বাড়িতে।
--আর কেউ নেই?পল্টু পোশাক বদলাতে বদলাতে বলল।
--সে তুমি জানে।যশ বলল।
পল্টু বেরিয়ে যাবার পর যশবিন্দার দরজা বন্ধ করে জেনের পাশে শুয়ে পড়ল।একা হলেই বাড়ীর কথা মনে পড়ে।কতদিন ফোন করা হয়নি।পরমিতের ব্যাপার নিয়ে দাদি খুব চিন্তায় আছে।অঙ্গনের কথা পুরা জানে না।দাদিকে সব জানাতে হবে।
মিতামাসীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল।কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই, দ্রুত উঠে বসে দরজা খুলে দিল।
--চা বানাই?মিতা মাসী জিজ্ঞেস করে।
--হ্যা।জেনের জন্য দুধ বানাতে হবে।
মিতামাসী রান্না ঘরে চলে গেল।একটু ঘুমিয়ে নিয়েছে ভালই হল যশ ভাবে।চোখ মুখে জল দিল।অঙ্গন নেই বহুৎ বোর মেহশুস হচ্ছে।চুপচাপ ঘরে বসে থাকার পাত্রী নয় যশবিন্দার।খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল জেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ঘরের লাইট জ্বেলে দিল।মিতামাসী দুধের বোতল দিয়ে গেল।তালুর উল্টোদিকে দু-ফোটা দুধ ফেলে পরীক্ষা করল।বোতল রেখে জেনের উপর ঝুকে বলল,জেন মেরি জান,এখোন উঠো।
ঠেলাঠেলিতে জেন চোখ মেলে তাকাল।
--মেডাম চা।মিতামাসী চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে যশবিন্দার বলল,তুমার চা নিয়ে এখানে বোসো।
মিতামাসী অবাক মেডাম কি রান্নার ব্যাপারে কিছু বলতে চায়?রান্না ঘরে গিয়ে চা নিয়ে ফিরে এল।চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,মেডাম আপনে যে খাবার করছিলেন সবাই সুখ্যেত করতেছিল।
যশবিন্দার হেসে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা মাসী পহেলে তুমার দাদার বহুকে তুমি কি বলে ডাকতে ম্যাডাম?
--আজ্ঞে তেনারে মোটে একবার দেখেছিলাম খুব ম্যাজাজি ছিলেন।
যশবিন্দারের ভ্রু কুচকে যায় জিজ্ঞেস করে,তূমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন?
মিতামাসী জিভ কেটে বলল,মানুষটা খুব ভাল ছিল। মিতামাসী কাছে এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল,নীচে ছোড়দার মামা থাকে বাড়ীটা দখল করে নিয়েছিল।পুলিশ এসে বাড়ি থেকে বের করে দিলি উনি এসে আবার ঢুকোয় দিয়ে গেল।
--দাদার বহুকে তুমরা কি বলো?
--বৌঠান বলে বৌদি বলে--।
--শুনো মৌসী তুমি আমাকে ম্যাডাম বলবে না বলবে বাউদি।
--আচ্ছা মেডাম।
কলিং বেল বেজে ঊঠতে যশ বলল,দেখো আবার কে এল?
মিতা মাসী চলে যেতে দেখল তার কোলে জেন ড্যাবডেবিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিতামাসী এসে খবর দিল,ছোড়দার বন্ধু দিলীপ এসেছে।যশবিন্দারের ভাল লাগে একা একা হাপিয়ে উঠেছিল,মিতামাসীকে বলল,বৈঠক খানার ঘর খুলে বসতে দাও।আর শোনো সকালে যে ভর্তা করেছি কিছুটা মাইক্রোভেনে গরম করে একটা প্লেটে দিও।
--দুইজন আসছে।
--ঠিক আছে অল্প করে দু-জায়গায় দিলেই হবে।যাও ওদের বসাও।
যশবিন্দার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা ঠিক করে নিল।দিলীপ আবার কাকে নিয়ে এল? ভেবেছিল দিলীপের সঙ্গে খোলামেলা একটু গল্প করবে।জেনকে কোলে নিয়ে নীচে নামল।

6 years ago#90
Joined:09-09-2017Reputation:0
Posts: 302 Threads: 7
Points:2210Position:PV1

কোন কূলে যে ভীড়ল তরী/কামদেব


[৭৭]


সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে জেনের খুত খুতানি শুনে বুঝতে পারে যশ।ও নটি গাল সমঝ গয়া বলে আবার উপরে উঠে এল।ডায়াপার ভিজে গেছে,যশ ডায়াপার বদলাতে থাকে।
সোফায় বসে রমিতা দিলীপের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে তাকাল অর্থাৎ কি ব্যাপার? দিলীপ বলল,ঘুমোচ্ছিল হয়তো।
মিতামাসী দু-টো প্লেটে মুর্গ ভর্তা এগিয়ে দিল।দিলীপ বলল,এটা কি?
মিতামাসী হেসে বলল,খেয়ে দেখো বৌদি মানে মেডাম বানাইছে।
রমিতা ইতিমধ্যে এক টুকরো মুখে দিয়ে বলল,মনে হচ্ছে চিকেন,খেয়ে দেখো।
মিতা মাসী বলল,তোমরা খাও আমি চা আনতেছি।
দিলীপ জিজ্ঞেস করল,কেমন খেতে?
রমিতা মাথা নেড়ে বলল,ভালই।তোমার ভাবিজি বানিয়েছে।পল্টুদার ভাগ্যটা খারাপ হলেও একদিক দিয়ে ভাল।
--ঠিকই ভাবিজি না থাকলে পল্টুর যে কি দশা হত।
--থোড়া ইন্তেজার করতে হল।হাসতে হাসতে ঢুকল যশবিন্দার।
রমিতার খাওয়া থেমে যায়।দীর্ঘদেহী তার দিলীপের মুখে শুনে যেমন কল্পনা করেছিল তার সঙ্গে চেহারার মিল নেই। তারই বয়সী কি একটু বড় হবে রমিতা আন্দাজ করে। দিলীপ বলল,ভাবিজি আমার বউ রমিতা।
--ভাবিজি মত বোলা করো,বাউদি বলবে।
রমিতা বলল,আপনি সুন্দর বাংলা বলেন।
--ভবানি পুরে আমার বেরাদরি আছে না,আখুন হাজবেণ্ড বাঙালি।খিল খিল করে হেসে উঠল যশবিন্দার।
যশকে ভাল লাগে রমিতার বেশ জলি।প্রাথমিক সঙ্কোচভাবটা আর নেই।
--পাড়ার ধারেকাছে কোনো লেডী ডাক্তার নেই।বৌদি আপনি এখানে চেম্বার খুলে বসতে পারেন।
--হ্যা লছমনবাবুও বলছিলেন।
--লক্ষণদা?লক্ষণদা এসেছিল নাকি?
--আসে নাই বাজারে যাবার সময় দেখা হল।
--আপনি বাজারে গেছিলেন?
--কেন?ও তুমরা ভর্তা কেমন খেলে?আমি বানাইলম।
--খুব সুন্দর হয়েছে,আমাকে শিখিয়ে দেবেন? রমিতা বলল।
--ভাল লেগেছে?কেন দিবনা?একটা কথা জিজ্ঞেস করছি,বিয়ের আগে আপনি কোথায় ছিলেন?
দিলীপ হেসে বলল,ও আমাদের পাড়ার মেয়ে।
--সমঝ গিয়া লাভ?
রমিতা দিলীপের দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করে হাসে।
--আমার দেশ চণ্ডিগড় কিন্তু দিল্লীতেই আমি বড় হয়েছি।তোমার বন্ধুর সঙ্গে কারো ভাব ছিল না?
--কে পল্টু?পল্টুকে সবাই ভালবাসে,ও একটু অন্য রকম।
--পল্টূদা খুব সহজ সরল--একথা বলে রমিতা নিজেকে সংশোধন করে বলে,আপনি তো ভাল জানেন।
--অঙ্গন ইজ অস্টিয়ার টাইপ।যেটা করে গভীর মনোযোগ দিয়ে করে।আই এ্যাম সিয়োর হি মাস্ট সাইন।যশের গলায় মুগ্ধতা।
রমিতা হাত দিয়ে দিলীপকে খোচা দিল।
বাইরে কিসের যেন গোলমাল,ওরা সজাগ হল।কারা যেন পল্টূ-পল্টু বলে ডাকাডাকি করছে।যশবিন্দার অস্বস্তি বোধ করে।দিলীপ আশ্বস্থ করে দরজা খুলে বাইরে গেল।
পাড়ার লোকজন সঞ্জু, সঞ্জুর বউ লক্ষনদাও আছে।রিক্সায় একজন মহিলাকে নিয়ে কে একজন বসে।দিলীপকে দেখে সঞ্জয় এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,পল্টু নেই রে?
--ও তো নার্সিং হোমে।কেন কি হয়েছে?
--দ্যাখ শূয়োরে বাচ্চা কি করেছে।রিক্সার দিকে ইঙ্গিত করল।
অন্ধকারে রিক্সায় কে বসে আছে বোঝা যাচ্ছে না।কথাবার্তা বলে বুঝল বরুণ বউয়ের উপর যৌন নির্যাতন করেছে।সহ্য করতে না পেরে নীরা অজ্ঞান হয়ে যায়।শিবু যাদব খবর না দিলে কেউ জানতেই পারত না।
লক্ষণদা এগিয়ে এসে বলল,সঞ্জু মাথা গরম করিস না।দিলীপ ম্যাডাম নেইরে?
দিলীপ সবাইকে দাড়াতে বলে ভিতরে ঢুকে গেল।যশবিন্দার বলল,পুলিশকে কেন ইনফর্ম করছে না?
--বাড়ীর জামাই এখনই থানা-পুলিশ করতে চাইছে না।
যশবিন্দার মুস্কিলে পড়ে যায় অঙ্গন যদি এসে রাগারাগি করে।দিলীপকে জিজ্ঞেস করে, হোয়াটস ইয়োর ওপিনিওন?
--আপনি একবার দেখতে পারেন সিরিয়াস হলে--।
--ওর বাড়ী কোথায়?
--কাছেই মিনিট দশেক হবে।
--ঠিক আছে ওকে বাড়ী নিয়ে যেতে বলো।আমি যাচ্ছি--হ্যা একটা টিটেনাস কিনে আনতে বলো।
ওরা চলে গেল।যশবিন্দার উপরে গিয়ে ব্যাগ খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে মিতামাসীকে বলল,মাসী তুমি জেনকে একটু দেখবে।
দিলীপ রমিতাকে বাড়ী পাঠিয়ে যশবিন্দারের সঙ্গে সঙ্গে গেল।সঞ্জয়দের বাসায় গিয়ে কোন ঘরে পেশেণ্ট আছে জেনে ঘরে ঢুকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলল।যশবিন্দার অবাক হয়ে দেখল রেকটাম ফ্র্যাকচার হয়েছে।টিটেনাস ইঞ্জেকশন দিয়ে জায়গাটা পরিস্কার করে একটা অয়েন্মেণ্ট লাগিয়ে দিল।বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে। ডিসি পাল মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর কাঞ্চন মালা এলেন যেন কিছুই জানেন না।সবাই ঘিরে ধরে বলল,দেখতে এলেন ছেলেকে যাতে পুলিশে না ধরে?
লক্ষণদা সবাইকে বুঝিয়ে বিরত করে কাঞ্চনমালাকে পাশে সরিয়ে নিয়ে ধমক ধামক দিতে থাকে,এরকম হলে এ পাড়া থেকে বাস ওঠাতে হবে।
--লক্ষণদা আপনি চলুন দেখবেন জানোয়ারটার কি করি।কাঞ্চনমালা বললেন।
--অনেক দেখেছি।চিকিৎসার দায় দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে।
--কত টাকা দিতে হবে বলুন?
--এখন থাক অনেক কথা বাকী আছে আগে দেখুন আপনার বউমা বাঁচে কিনা?
প্রায় আধ ঘণ্টা পর যশবিন্দার দরজা খুলে বের হল।সবাই উদবিগ্নমুখে যশের দিকে তাকায়।
--পেন কিলার দিয়েছি,একটু রেস্টে থাকতে হবে।আর এই অয়েনমেণ্টটা টয়েলেটের পর দিনে দু-বার লাগাবেন।
যশের চোখ দিলীপকে খোজে।দিলীপ এগিয়ে এসে হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলল, চলুন। অনেক রাত হল।
বাড়ির কাছে এসে দিলীপ বলল,আমি আর ঢুকছিনা।ভাগ্যিস আপনি ছিলেন।
পল্টূ ফিরে এসেছে।জেনকে ফেলে কোথায় গেল যশ?মিতামাসী দেখালো বৌদির ব্যাগ খোলা পড়ে আছে,ভিতরে গোছা গোছা টাকা। এই রাতে একা অবশ্য সঙ্গে দিলীপ আছে জেনে আশ্বস্থ হয়।
--মাসী তুমি যাও,কত রাত করবে?
সুন্দর হয়েছে বেবি কটটা।মাম্মী গাড়িতে তুলে দিয়েছে,ইকবাল উপরে তুলে দিয়ে গেল।স্ট্যাণ্ডের উপর ছোট্ট খাট খাটের উপর একটা লাল পাখি।মিতামাসী ঘুমন্ত জেনকে খাটে শুইয়ে দিয়ে গেছে।জায়গা বদল হয়েছে জেন বুঝতে পারেনি। পল্টু মৃদু দোলাতে থাকে।ঘুম ভাঙ্গলে হাত দিয়ে পাখিটা ছুতে চেষ্টা করবে।মুগ্ধ হয়ে পল্টু জেনকে দেখে।জেন চোখ মেলে অবাক হয়ে তাকে দেখছে।হঠাৎ কেদে উঠল।
কি করবে এখন? বাইরে থেকে আওয়াজ এল,অ্যাাম কামিং ডার্লিং।
জেন চুপ করে গেল।যশ মনে হয় সিড়ি দিয়ে উঠত উঠতে শুনতে পেয়েছে জেনের কান্না।অবাক ব্যাপার এইটুকু শিশু যশের গলা পেয়ে চুপ করে গেল।যশ ভিতরে ঢুকে জাস্ট আ মিনিট বলে বেসিনে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এসে অবাক হয়ে বলল,ওহ ভেরি নাইস কট।তুমি আনলে?
--মাম্মী দিয়েছে।পল্টু বলল।
--মাম্মী? অবাক হয়ে তাকালো যশ।
--লেক ভিউয়ের মালিক পার্বতী রাও সোম।কোথায় গেছিলে তুমি?
--একটা পেশেণ্ট দেখে এলম।
--ফিজ কত দিল?
যশবিন্দার তাকিয়ে হাসল।পল্টু বলল,কাল লক্ষণদার বউকে দেখে এলে আজ আবার কাকে দেখে এলে,দেখো যশ তুমি একজন ডাক্তার সমাজ সেবক নও।
--তোমার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব,জেনের দুধটা করে আনি।
--রান্না ঘরে আছে মিতামাসী করেছে,ঘুমোচ্ছিল বলে দিইনি।পল্টু গলা চড়িয়ে বলল।
দুধের বোতল নিয়ে ফিরে এল যশ।জেন চুকচুক করে দুধ টানতে লাগল।
--কোথায় গেছিলে বললে নাতো?
--দিলীপ বলল তোমার বন্ধুর বোন।রেকটাম ফ্র্যকচার করে দিয়েছে।
পল্টু বিরক্ত হয়ে বলল,পারভার্ট।
যশ হেসে বলল,তুমি সেটা বলতে পারো না।আজকাল অনেক বদলেছে।
যশের দিকে তাকিয়ে কি বলল যশ বুঝতে চেষ্টা করে।যশ একেবারে অন্যরকম।অঞ্জুর সঙ্গে কোনো মিল নেই।একী ঔদার্য নাকি আধুনিকতা?

দুধ খাওয়ানো হলে রান্না ঘরে চলে গেল।মিতামাসী আটা মেখে গেছে যশবিন্দার রুটি বানাতে লাগল।অঙ্গনের কথাগুলো মনে মনে নাড়াচাড়া করে।মুরগ ভত্তা গরম করে টেবিলে খাবার দিয়ে অঙ্গনকে ডাকল।পল্টু টেবিলে বসে দেখল মোটা মোটা রুটি আকারে ছোটো।যশ গম্ভীর হয়ে কি ভাবছে।পল্টু জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছো?
--তুমি রাগ করেছো?
পল্টূ হেসে বলল,রাগ করব কেন?তোমার ব্যাগে কত টাকা আছে?
--লাখের উপর হবে কেন?
--অত টাকা?
--বাঃ দিল্লীতে আমি কাজ করিনি,এখানে ড্যাফোডিলেও কাজ করেছি।
--তা নয়,এতগুলো টাকা ব্যাগে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো।মিতামাসী আমাকে দেখালো।
--একটা এ্যাকাউণ্ট খুলা দরকার।
পল্টু মনে মনে ভাবে,যশ একেবারে উল্টো।অঞ্জনা ছিল অত্যন্ত হিসেবী।
--তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব সত্যি বলবে? আমি জানি তুমি ঝুট বলতে পারবে না--।যশের আচমকা প্রশ্নে পল্টূ মুখ তুলে তাকালো।
--এ্যাকাউণ্টের কথা বললাম তুমার আপত্তি নাই তো?
পল্টু এতক্ষণে বুঝতে পারে কি ভাবছিল বলল,যশ ডার্লিং আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি। এটা ঠিক অঞ্জু থাকলে তোমাকে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারতাম না।
অঞ্জু ছিল যা ইচ্ছে হয়েছে করেছে,আমিও মাথা ঘামাইনি।
--জয়েণ্ট এ্যাকাউণ্ট খুলব।যশবিন্দার বলল।
--তোমার কোনো কাজে বাধা দেবো না।ফোণ বাজতে পল্টূ বলল,ফোনটা ধরো।
যশ দ্রুত ফোন ধরে বলল,হ্যালো?
--সেবা সদন হতে বলছি।
--এনি প্রবলেম?
--আপনি মিসেস সোম বলছেন?
--জি কেন?
--আমাদের ক্লিনিকে বসার ব্যাপারে কথা বলতে চাই।এক্টু সময় হবে?
--লেট মী টক উইথ মাই হাজব্যাণ্ড।
--থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম,কখন ফোন করব?
--আমিই কন্ট্যাক্ট করব ওকে?
ফোন রেখে কিছু বলার আগেই পল্টু হেসে বলল,তোমাকে বসতে বলছে?
--ফাইন্যালি কিছু বলিনি--।
--পারলে দেখো।কষ্ট করে পাস করলে শুধু রান্না-বান্না বাচ্চা মানুষ করার জন্য?
--হোয়াট,ডাক্তারী করলে কি সংসার বাদ দিতে হবে?যশের কণ্ঠে উষ্মা।
--রাগলে ইউ লুক ভেরি নাইস।
যশ হেসে ফেলে বলল,একটু ভেবে দেখি।  
  What's going on
   Active Moderators
  Online Users
All times are GMT +5.5. The time now is 2025-01-30 23:23:59
Log Out ?

Are you sure you want to log out?

Press No if youwant to continue work. Press Yes to logout current user.